রাস্তার পাশের ঝালমুড়ি ফুচকা ভেলপুরি খেতে সাবধান

স্কুল-কলেজগামী অনেকেই রাস্তার পাশের খোলা খাবারে অভ্যস্থ। কিন্তু সরকারি সংস্থা জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট বলছে, রাস্তার পাশের বিভিন্ন খোলা খাবার বিশেষ করে ভেলপুরি, ফুচকা ও ঝালমুড়িতে পাওয়া যাচ্ছে টাইফয়েড, আমাশয় এবং ডায়েরিয়া রোগের জীবাণু। তাই এসব খাবার খেতে সকলকে সতর্ক করা হয়েছে।

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ন্যাশনাল ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে এক পরীক্ষায় এসব খাবারে রোগের জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। শনিবার জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সভাকক্ষে রাস্তার খোলা খাবারে এসব রোগের উপস্থিতির কথা জানানো হয়। সংস্থাটি মূলত 'মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন অব হর্টিকালচার প্রোডাক্টস অ্যান্ড আদার ফুড কমোডিটিস ফর কেমিক্যাল অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজিক্যাল কন্টামিনেশন অ্যাট এনএফএসএল: অ্যান অ্যাপ্রাইজাল অব ফুড সেফটি সার্ভে ইন বাংলাদেশ' নামের এক জরিপের অংশ হিসেবে ভয়ঙ্কর এসব তথ্য প্রকাশ করে।

জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সংশ্লিষ্টরা বলেন, 'রাস্তার পাশের এসব ভেলপুরি, ফুচকা ও ঝালমুড়িতে স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর কৃত্রিম রঙ এবং ইস্ট ব্যবহার হচ্ছে অহরহ। পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সংগহ করা নমুনায় পাওয়া গেছে কলিফর্ম, সালমোনিলা ও ই-কলাই এর মতো মারাত্মক সব রোগের জীবাণু। ই-কলাই হচ্ছে আমাশয়ের জীবাণু, সালমোনিলা হচ্ছে টাইফয়েড আর কলিফর্ম ও মাইকোটক্সিন হচ্ছে ডায়রিয়ার রোগের জীবাণু। সংগ্রহকৃত নমুনায় এসব রোগের জীবাণুর মাত্রা স্বাভাবিক মাত্রার চাইতে অনেক বেশি। ফলে এসব খোলা খাবার গ্রহণে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলা হচ্ছে।

জানা গেছে, ঢাকা শহরের ৪৬টি থানার বিভিন্ন স্কুলের সামনে থেকে ৪৬টি ঝালমুড়ি, ৩০টি ফুচকা, ১৬টি ভেলপুরি ও ৪২টি আচারের নমুনা সংগ্রহ করে জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট। এরপর এগুলো সংস্থাটির ন্যাশনাল ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় দেখা গেছে, ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ খাবারেই আমাশয়ের জীবাণু 'ই কোলাই' অতিরিক্ত মাত্রায় ছিল। পাশাপাশি ৫টি ভেলপুরি ও ৩টি ঝালমুড়ির সংগ্রহকৃত নমুনায় পাওয়া গেছে টাইফয়েডের জীবাণু 'সালমোনিলা'। এছাড়াও নমুনার ১২টি ভেলপুরি, ৩০টি ফুচকা, ১৩টি ঝালমুড়ি ও ৪টি আচারে 'ঈস্ট মোল্ড' নামের ক্ষতিকর জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

জনস্বাস্থ্য পুষ্টি ইন্সটিটিউটের ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির (এনএফএসএল) প্রধান অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী এসব তথ্য উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, ২০১৭ সালের মার্চ এবং এপ্রিল মাসে এসব খাবারের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর এসব খাবার এনএফএসএল এর ল্যাবরেটরিতে মাইক্রোবায়োলজিক্যাল পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় এসব খোলা খাবারে ক্ষতিকর সব জীবাণু পাওয়া গেছে। এসব খাবার ভক্ষণের কারণেই শিশুরা আমাশয়, ডায়রিয়া, টাইফয়েডসহ জন্ডিসে আক্রান্ত হচ্ছে।

এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন বাজার এবং সুপার শপ থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন ব্রান্ডের ৫৫টি নুডুলসের গুণগত মান পরীক্ষাতেও গরমিল পাওয়া গেছে। জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট বলছে, পরীক্ষার পর ১৪টি নুডলসে নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে পরিমাণে অনেক কম প্রোটিন পাওয়া গেছে। কিছু নুডলসে লেড এর পরিমাণও ছিল নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে কম। নুডলসগুলোতে পাওয়া গেছে বিভিন্ন মাত্রার টেস্টিং সল্ট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব টেস্টিং সল্ট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সংস্থাটির ফুড সেফটি প্রোগ্রাম এর সিনিয়র অ্যাডভাইজার অধ্যাপক শাহ মনির হোসেন জানান, এসব খাদ্য তৈরিতে ব্যবহার হওয়া ঘি-তেল এবং এসব খাদ্য উপকরণ নির্ধারিত স্টার্ন্ডাড মেইনটেইন করতে ব্যর্থ হয়েছে। রোগবালাই বাড়ছে এসব খাবারে ব্যবহৃত কেমিক্যালের জন্য।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব বেসিক সায়েন্স অ্যান্ড প্যারা ক্লিনিক্যাল সায়েন্স বিভাগের ডিন অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান, বাংলাদেশে ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস কে রায়সহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।