সরকারি স্কেলে বেতন-ভাতা পাবেন ইমাম-মুয়াজ্জিনরা

অবশেষে টনক নড়লো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। ইসলামি মূল্যবোধের উন্নয়ন ও ইসলামি সংস্কৃতি বিকাশের লক্ষ্যে দেশব্যাপী মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এসব মসজিদে জাতীয় স্কেলে বেতন পাবেন খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমরা। পর্যায়ক্রমে দেশের কয়েক লাখ মসজিদকে এই কার্যক্রমের আওতায় আনার বিষয়টি ভাবছে সরকার।

সৌদি সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় এসব মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হবে। এসব মসজিদের খতিবরা জাতীয় বেতন স্কেলের অষ্টম গ্রেডে, ইমামরা নবম গ্রেডে, মোয়াজ্জিনরা ১৪তম গ্রেডে ও খাদেমরা ১৬তম গ্রেডে বেতনভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাবেন। আর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের মহাপরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজাল বলেন, 'দেশব্যাপী ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে একনেকেও অনুমোদন পেয়েছে। প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী এসব মডেল মসজিদের খতিব ও ইমামসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই জাতীয় স্কেলে বেতনভাতা পাবেন। পাশাপাশি মসজিদগুলোকে সরকারি কাঠামোতে আনার প্রাথমিক উদ্যোগ হাতে নেওয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে সারা দেশের প্রায় তিন লাখ মসজিদকেও এই আওতায় আনার চিন্তাভাবনা করছে সরকার।'

প্রকল্পের নিয়মানুযায়ী এসব মডেল মসজিদের একজন খতিবের মূল বেতন হবে ২৩ হাজার টাকা। মূল বেতনের সঙ্গে যোগ হবে স্থানভেদে বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ভাতাসহ আরও ১০ হাজার টাকা। ফলে খতিবরা কমবেশি প্রায় ৩৭ থেকে ৩৪ হাজার টাকা বেতন পাবেন।

সরকারি স্কেলে ৯ম গ্রেডে একজন ইমাম বেতনভাতা পাবেন ৩৩ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা। মোয়াজ্জিনরা পাবেন ১৫ হাজার টাকা থেকে ১৮ হাজার টাকা আর মসজিদের খাদেমরা পাবেন ১৪ হাজার টাকা থেকে ১৬ হাজার। পাশাপাশি মসজিদে থাকবে একজন নাইট গার্ড। যার বেতন হবে ১৪/১৫ হাজার টাকা।

সূত্র বলছে, ২০১৬ সালের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরব সফরে দেশটির বাদশাহর সঙ্গে আলোচনায় দেশব্যাপী মডেল মসজিদ নির্মাণের বিষয়টি তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে সৌদি আরব সহযোগিতা দিতে সম্মতি জানায়। পরে ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় একনেক।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, মসজিদগুলো সাধারণত তিন ক্যাটাগরিতে নির্মিত হবে। এ, বি এবং সি। এ ক্যাটাগরিতে ৬৮টি মসজিদ থাকবে। যে মসজিদগুলো হবে চারতলাবিশিষ্ট, থাকবে লিফট ও এসি। এগুলো নির্মিত হবে জেলা শহর ও চার সিটি করপোরেশনে। এ ক্যাটাগরির মসজিগুলোর আয়তন হবে ২ লাখ ৮১ হাজার ৫৮৪ বর্গমিটার। বি ক্যাটাগরির মসজিদ হবে এক লাখ ৬৪ হাজার ৭৪২ বর্গমিটার আয়তনের, সংখ্যায় ৪৭৬টি। আর সি ক্যাটাগরির মসজিদ গুলো হবে ৬১ হাজার ২৫ বর্গমিটার আয়তনের, সংখ্যা ১৬ টি। এই মসজিদগুলো নির্মিত হবে উপকূলীয় এলাকায়।

জানা গেছে, এই প্রকল্পে খরচ হবে ৯ হাজার ৬২ কোটি ৪১ লাখ টাকা। যার মধ্যে ৮ হাজার ১৬৯ কোটি ৭৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা টাকা দেবে সৌদি সরকার। আর বাকি ৮৯২ কোটি ৬১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা দেবে সরকার। চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির সময়কাল ধরা হয়েছে।