আ’লীগের অভ্যন্তরীণ ‘দ্বন্দ্ব’, এমপিদের প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি!

নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও কোন্দল ততই প্রকট হচ্ছে। প্রকাশ্য বিরোধে জড়িয়ে পড়ছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। এমনকি এমপিকে সহযোগিতা না করতে অনেক কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রীরা ঢাকা থেকে স্থানীয় প্রশাসনকে ফোন করে নির্দেশও দিচ্ছেন বলে অভিযোগ।

সম্প্রতি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন ও সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের প্রকাশ্য বিরোধ দলে বিশেষ আলোচনার স্থান পেয়েছে। এ নিয়ে ‘ময়লার রাজনীতি’ দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় স্থানীয় এমপিদের সঙ্গে নেতাকর্মীদের দ্বন্দ্ব প্রকট হয়েছে।

বিশেষ করে ‘বিনা ভোটে নির্বাচিত’ এমপিরা স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীদের পাত্তাই দিচ্ছেন না। ধারণা করা হচ্ছে, এসব বিরোধ যেকোনো সময় চরম পর্যায়ে চলে যেতে পারে। এ নিয়ে দলীয় হাইকমান্ডে পর্যন্ত আলোচনা হয়েছে।

জাতীয় সংসদ ভবনের নবম তলায় সরকারি সম্মেলন কক্ষে বুধবার রাতে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে এসব বিষয় আরও দৃশ্যমান হয়। প্রধানমন্ত্রীর সামনেই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, অনুযোগ করেছেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বৈঠক শুরু হয়। প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে আলোচনার পুরোটাই ছিল আগামী নির্বাচন নিয়ে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বক্তব্য দেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, গৃহায়নমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, হুইপ আতিউর রহমান আতিক, এ কে এম শামীম ওসমান, আবদুর রহমান বদি, ইফতেখার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু, ছানোয়ার হোসেন তুহিন, অনুপম শাজাহান জয় প্রমুখ।

এমপিকে ডিস্টার্ব করেন অপু উকিল: বৈঠকে নেত্রকোনা-৩ আসনের এমপি ইফতেখার উদ্দিন পাটোয়ারী পিন্টু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অভিযোগ করেন, ‘সংসদ সদস্য অপু উকিল এবং তার স্বামী অসীম কুমার উকিল (আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক) তাকে ডিসটার্ব করেন। এমপি যেখানেই কর্মসূচি দেন সেখানেই এরা দু’জন বাগড়া দেন। ঢাকা থেকে প্রশাসনকে ফোন করে এমপিকে সহযোগিতা করতে বারণ করা হয়।’

চট্টগ্রাম-১৬ আসনের এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী অভিযোগ করেন, মন্ত্রীদের অসহযোগিতার কারণে তিনি কাজ করতে পারছেন না। তার আসনের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চার মন্ত্রী ফোন করে তার (এমপির) কথা শুনতে বারণ করেছেন।

নানামুখী ষড়যন্ত্র: বৈঠকে ফেনীর এক নেতার সংবাদ সম্মেলনের প্রসঙ্গ এনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান বলেন, ‘নানামুখী ষড়যন্ত্র হচ্ছে। দলের নেতারা অন্য নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। এসব ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে।’ তার উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ষড়যন্ত্র আগেও ছিল এখনও আছে। ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেই সামনে এগিয়ে যাব। ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেই তিনবার দলকে ক্ষমতায় এনেছি। এমপিরা জনগণের মন জয় করতে পারলে কোনো ষড়যন্ত্র সফল হবে না।’

দলের ভেতর নানা দ্বন্দ্ব: টাঙ্গাইল-৫ আসনের সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেন ওই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা দলের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করছেন।’

টাঙ্গাইল-৮ এর এমপি অনুপম শাহজাহান বলেন, ‘দল আমাকে মনোনয়ন দিয়ে এমপি বানিয়েছে। কিন্তু এলাকার সিনিয়র নেতারা আমাকে পাত্তা দেন না।’

প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি: বর্তমান এই পরিস্থিতিতে দলে দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিং সৃষ্টিকারী ও জনবচ্ছিন্ন এমপিদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সূত্র জানায়, বৈঠকে মন্ত্রী ও এমপিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করুন। স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন ও গ্রহণযোগ্য নেতারাই আগামীতে মনোনয়ন পাবেন। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমাদের কেউ পরাজিত করতে পারবে না।’ 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এলাকায় যার জনপ্রিয়তা আছে, জনগণ যার সঙ্গে আছে তিনিই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন। দলের মধ্যে কোনোরূপ দ্বন্দ্ব-বিবাদ বা কোন্দলে জড়িত হবেন না। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই সবাইকে কাজ করতে হবে। দলের বিরোধিতাকারীদের ক্ষমা করা হবে না।’

এমপিদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘জনপ্রিয়তার ব্যারোমিটার বাড়ান। জনপ্রিয়তার ব্যারোমিটারে যারা এগিয়ে রয়েছেন তারাই মনোনয়ন পাবেন। কারও মুখ দেখে আমি মনোনয়ন দেব না। যারা এলাকায় নিজেদের অবস্থান বা গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখতে পারেননি, তিনি যত বড় নেতাই হন না কেন মনোনয়ন পাবেন না।’

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জানান, প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় জরিপ হচ্ছে। মন্ত্রী-এমপিদের নির্বাচনী এলাকায় কার কী অবস্থান তার আমলনামা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আছে।