শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী সমাহিত হলেন বারী সিদ্দিকী

হাজারো মানুষের ভালোবাসায় সমাহিত হলেন বাংলা সমকালীন বহু কালজয়ী গানের গায়ক, সুর সাধক বারী সিদ্দিকী। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী নিজ গ্রাম নেত্রকোনার কালিগ্রামে তার নিজ হাতে গড়া বাউল বাড়িতেই চতুর্থ জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই বংশীবাদক।

ঢাকার আনুষ্ঠানিকতা শেষে বারী সিদ্দিকীর মরদেহ নিজ জেলায় নেত্রকোনায় নিয়ে আসা হয়। এখানে বেলা সাড়ে ৪টায় নেত্রকোনা সরকারি কলেজ মাঠে বারী সিদ্দিকীর তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বাউল বাড়িতে চতুর্থ জানাজা শেষে তার শেষ ইচ্ছানুযায়ী এখানেই তাকে দাফন করা হয়।

গত কয়েক মাস ধরে কিডনী রোগে আক্রান্ত তিনি। সর্বশেষ স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন গুণী এই শিল্পী। পারিবারিক সূত্র বলছে, সপ্তাহে অন্তত তিনটি ডায়ালাইসিস করতে হতো তাকে।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মৃত্যুর পর শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বারী সিদ্দিকীর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত। এরপর বাংলাদেশ টেলিভিশনে শিল্পীর দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

বারী সিদ্দিকীর একাধিক জনপ্রিয় গানের গীতিকার শহীদুল্লাহ ফরায়জী। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় হাজার-হাজার গ্রামবাসীর ভালোবাসা আর চোখের জলে শেষ শয্যা নেন প্রিয় বংশীবাদক ও শিল্পী বারী সিদ্দিকী।

১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলায় এক সঙ্গীত অনুরাগী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বারী সিদ্দিকী। প্রথমে বংশীবাদক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেও বাঁশি বাজিয়ে বিমোহিত করা এই মানুষটিই ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন মানুষের আত্মার শিল্পী।

গুণী এই সুর সাধকের সঙ্গীতের প্রতি ভালবাসা ছোটবেলা থেকেই। মাত্র ১২ বছর বয়সে ধ্রুপদ সঙ্গীতে তালিম নেয়া শুরু করেন তিনি। পর্যায়ক্রমে বারী সিদ্দিকী তালিম নিয়েছেন ওস্তাদ গোপাল দত্ত, ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষসহ অনেকের কাছে। নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনেতেও পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে তিনি দীক্ষা গ্রহণ করেন।

১৯৯৫ সালে হুমায়ূন আহমেদের পরিচালিত 'রঙের বাড়ই' নামের একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রথম শ্রোতার কাছাকাছি যান বারী সিদ্দিকী। তার আগে ১৯৯৩ সালে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে বাঁশি বাজিয়ে হুমায়ূনের নজরে আসেন বারী সিদ্দিকী। বারী সিদ্দিকীর উকিল মুন্সী আর মরমি গানে আসাধারণ দখল ছিল।

১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদের 'শ্রাবণ মেঘের দিন' চলচ্চিত্রে সাতটি গান গেয়ে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন বারী সিদ্দিকী। তার আগ পর্যন্ত তার পরিচিতি ছিল বংশীবাদক হিসেবে। 'শ্রাবণ মেঘের দিন' সিনেমার গানগুলো জনপ্রিয় হলে বাংলা গানের জগতে আবির্ভাব হয় নতুন ফোক গায়কের। তার শক্তিশালী আর জীবনমুখী গায়কী মুগ্ধ করে দুই বাংলাকে।

বারী সিদ্দিকী মোট ১৬০টি গান গেয়েছেন। তার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে 'সুয়াচান পাখি আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি', 'আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, 'ওলো ভাবিজান নাউ বাওয়া', 'মানুষ ধরো মানুষ ভজো', 'পূবালী বাতাসে', কান্দিস নারে জংলার বাঁশ অন্যতম। সঙ্গীতপ্রেমীরা বলছেন, বারী সিদ্দিকীর পার্থিব প্রস্থান ঘটেছে মাত্র। প্রকৃতপক্ষে তার মৃত্যু নেই। তার কালজয়ী গানগুলোই তাকে বাঁচিয়ে রাখবে যুগ থেকে যুগান্তর।