বিলের জন্য ‘আটক’ গরিব নারীর লাশ!

ঢাকার সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে এবার বিল পরিশোধ করতে না পারায় শিলা সুত্রধর (২৬) নামের এক গরিব নারীর লাশ আটকে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত নারী আশুলিয়ার শিমুলিয়া এলাকার শঙ্কর সুত্রধরের স্ত্রী।

অভাবের কারণে বিল পরিশোধ করতে না পারায় ওই নারীর চিকিৎসা বন্ধ করে তাকে অবহেলা করে মেরে ফেলার অভিযোগ করেন নিহতের স্বামী শঙ্কর সুত্রধর। শনিবার সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।

স্বামী শঙ্কর সুত্রধর ও নিহতের পারিবারিক সুত্র জানায়, গত ৩ নভেম্বর তার স্ত্রী ও নবজাতক শিশু সন্তানসহ তাদেরকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (আইসিউতে) ভর্তি করা হয়। এসময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে রোগী ভালো হয়ে যাবে বলে পরামর্শ দেন।

এরপর টানা দুই সপ্তাহ পর চিকিৎসা শেষে শিলা সুত্রধর সুস্থ্য হয়ে গেছে জানিয়ে আইসিইউ (নিবিড় পরিচয়াকেন্দ্র) থেকে সাধারণ শয্যায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে ততদিনে আইসিউতে চিকিৎসা বাবদ কয়েক লক্ষাধিক টাকা বিল বকেয়া পড়ে যায়।

আর এই কয়েক লক্ষাধিক টাকার বিল পরিশোধ করতে না পারার কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে সাধারন বেডেও হস্তান্তর করছিলো না। এদিকে হঠাৎ করে শুক্রবার রাত নয়টার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানায়। পরে রাতেই শিলা সুত্রধর মারা যায়।

শনিবার সকাল দশটার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বকেয়া বিল পরিশোধ করে তবেই লাশ নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন কর্তৃপক্ষ। টাকা দিতে না পারলে লাশ দেওয়া হবে না বলেও জানিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

লাশ আটকে রাখার খবর পেয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে ছুটে গেলে পরে দুপুরের দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বজনদের কাছে মৃতদেহ হস্তান্তর করেন।

নিহতের স্বামী শঙ্কর সুত্রধর অভিযোগ করে বলেন, চার দিন আগেও তার স্ত্রী সুস্থ ছিল, তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে আইসিইউর ভেতরে কথাও বলেছেন। হাসপাতালে প্রায় ৭ লাখ টাকার বিল হয়েছে তার স্ত্রী ও নবজাতকের চিকিৎসা খরচ বাবদ। ইতিমধ্যে তিনি প্রায় দুই লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। বাকি টাকার জন্য তার স্ত্রীর লাশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আটকে রাখে।

এছাড়া টাকা দিতে না পারায় হাসপাতালের একজন তার শিশু সন্তানকে অন্য কাউকে দিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন নিহতের স্বামী।

এ ব্যাপারে এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক আশরাফ উল্লাহ চৌধুরী সাইফুল বলেন, ‘হাসপাতালের বিল দিতে না পারলে তারা এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে কেন চিকিৎসার জন্য আসেন। অন্য কোথাও তো যেতে পারেন।’ এছাড়াও এ বিষয়ে তিনি আর কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।

এছাড়াও হাসপাতালের অভিযুক্ত ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লোকজন তাদের সাথে কথা বলতে দেয়নি।

এ ব্যাপারে এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক ডা. এনামুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও ফোন রিসিভ করেননি।

ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. এহসানুল করিম বলেন, বিল পরিশোধ করতে না পারলে মৃতদেহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আটকে রাখতে পারবে না এ সংক্রান্ত একটি আদেশও দিয়েছে উচ্চ আদালত। আর যেহেতু এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের মালিক একজন সাংসদ তারও এ বিষয়টি স্পষ্ট জানার কথা। এছাড়াও বিনা চিকিৎসায় অথবা অবহেলায় রোগী মারা গেলে সে বিষয়েও খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও তিনি জানান।

সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. আমজাদুল হক বলেন, ‘বিষয়টি তার জানা নেই, তবে রোগীর অবস্থার উন্নতি হওয়ার পর যদি অবহেলায় তার মৃত্যু হয় তাহলে সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।’