দল পর্যালোচনা: শিরোপায় চোখ ইংল্যান্ডের

প্রতীক্ষার পালা শেষ। শুরু হয়ে গেছ ফুটবল মহাযজ্ঞের একুশতম আসর! সেখানে যে কটা দল ফেভারিট হিসেবে ভাবা হচ্ছে সেই তালিকায় আছে ইংল্যান্ডের নামও। দলে একঝাঁক তারকাদের উপস্থিতি সাবেক চ্যাম্পিয়নদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে রাশিয়ার রঙ্গমঞ্চে।

ফুটবলের উৎপত্তি নিয়ে অনেক দেশই নিজেদের পক্ষে দাবি তোলে। জাপান, চীনও আছে সেই তালিকায়। তবে অনেক রথি-মহারথীর মতে ব্রিটিশদের মাধ্যমেই ফুটবলের জন্ম হয়েছে। নানা মুনির নানা মত। ফুটবলের উৎপত্তি স্থল নিয়ে বিতর্ক থাকলেও খেলাটিকে যে ইংল্যান্ড আধুনিকায়ন করেছে তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই।

অথচ সেই ইংল্যান্ডই খেলতে পারেনি প্রথম বিশ্বকাপে। বর্জন করে উরুগুয়ে বিশ্বকাপ। পরের দুই আসরেও দর্শক সারিতে থাকতে হয়েছে ইংলিশদের। থ্রি লায়নদের বিশ্বমঞ্চে অভিষেক হয় ১৯৫০ সালে, ব্রাজিল বিশ্বকাপে।

কিন্তু অভিষেক আসরেই গ্রুপপর্ব থেকে বাদ পড়ে ইংল্যান্ড। সেই ধকলটা ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠতে শুরু করে থ্রি লায়নরা। প্রথম তিনবার বিশ্বকাপ খেলে দুবারই শেষ আঠে ওঠে তারা। ১৯৬৬ বিশ্বকাপের আয়োজন করে সবাইকে চমকে দেয় ইংল্যান্ড। জিতে নেয় স্বপ্নের সোনালি ট্রফি। ফাইনালে পরাশক্তি পশ্চিম জার্মানিকে ৪-২ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ইংলিশরা।

কিন্তু শিরোপাটা ধরে রাখতে পারেনি তারা। পরের বিশ্বকাপে ফেভারিট ইংলিশরা বাদ পড়ে শেষ আটেই। এরপরই শুরু ব্রিটিশদের নিজেদের হারিয়ে খোঁজা। দুই বিশ্বকাপের বাছাইপর্বেই বাদ পড়েছে ইংলিশরা। ১৯৮২ বিশ্বকাপে প্রত্যাবর্তন করলেও উপলক্ষটা রাঙাতে পারেনি তারা। এক বিশ্বকাপ পরই স্বরূপে দেখা যায় ইংলিশদের। ১৯৯০ সালে সেমিফাইনালে উঠে গেছে তারা।

এরপর থেকেই প্রতিটি বিশ্বকাপের শিরোপার দাবিদার হিসেবে মঞ্চে নামছে ইংল্যান্ড। কিন্তু নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি ব্রিটিশরা। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে তো জেরার্ড-রুনির মতো তারকাঠাসা দল নিয়েও প্রথম রাউন্ডে অঘটনের শিকার হতে হয়েছে। ইংল্যান্ডের এবারের দলও বেশ শক্তিশালী। ১৫ তম আসরে দ্বিতীয় শিরোপার লক্ষে ভারসম্যের এই দলটা নিয়েই মাঠে নামবে ইংলিশরা।

ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেটও আশারবানী শুনিয়েছেন। ৪৭ বছর বয়সী কোচের আসরে তুরুপের তাস হ্যারি কেন। দুর্দান্ত একটা মৌসুম কাটিয়ে এসেছেন তিনি টটেনহাম ক্লাবের হয়ে। আক্রমণভাগে তার সঙ্গীর অভাব নেই। রহিম স্টার্লিং, মার্কাশ রাশফোর্ড, ডেল আলির মতো উঠিতি তারকাদের নিয়ে ইংলিশদের গড়া আক্রমণভাগ এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা। হ্যারি কেনই রাশিয়ার ফুটবলযজ্ঞে নেতৃত্ব দেবেন ইংল্যান্ডকে। তিনি দলে পাচ্ছেন জেমি ভার্ডির মতো অভিজ্ঞ ফুটবলারকে।

অথচ এই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের অংশগ্রহণ নিয়েই দেখা দিয়েছিল সংশয়। রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক শীতল সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি হয়েছে গত কয়েক মাসে। গুপ্তচর হত্যা চেষ্টার ইস্যু নিয়ে বিশ্বকাপ বর্জনের হুমকিও দিয়েছিল ব্রিটিশরা। তবে দুই দেশের ফুটবলকর্তারা জানিয়েছেন রাজনৈতিক অস্থিরতার কোনো প্রভাব পড়বে না বিশ্বকাপে।

রাশিয়া বিশ্বকাপে প্রস্তুতিটা অবশ্য মনমতো হয়নি ইংল্যান্ডের। শেষ দুই ম্যাচের একটিতে জিতেছে তারা। তবে এনিয়ে উদ্বেগ নেই ইংলিশদের। কারণ গ্রুপপর্বে বেলজিয়াম ছাড়া বড় কোনো পরীক্ষা দিতে হচ্ছে না তাদের। ‘জি’ গ্রুপে ইংল্যান্ডের অন্য দুই প্রতিদ্বন্দ্বী পানামা ও তিউনিশিয়া। ১৮ জুন শেষের দলটির বিপক্ষের ম্যাচ দিয়েই শিরোপা অভিযান শুরু করবে ইংল্যান্ড।