কোরিয়ার রূপকথা, বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের করুণ বিদায়

ম্যাচের তখন ৯৬তম মিনিটের খেলা চলছিল। নিজেদের অর্ধ থেকে লম্বা একটা পাস গেল কোরিয়ার সং হেউং মিনের কাছে। মিন এর সামনে তখন নেই কেউই! এমন কি জার্মান গোলরক্ষক ম্যানুয়েল ন্যুায়ারও তখন মাঝমাঠে। আগেই এক গোলে পিছিয়ে পড়া জার্মান গোলরক্ষক তখন গোলের খোঁজে গোলবার ছেড়ে এসেছিলেন এবং তাতেই আরেক গোল হজম করে জার্মানি। একদম ভুল করেননি করেননি মিন। 

২-০ গোলের বিস্ময়কর ব্যবধানে ম্যাচটি জিতেছে কোরিয়া এবং এতেই বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিলো জার্মানি। ব্রাজিলের মারাকানায় যে সোনার ট্রফি উঁচিয়ে ধরে বিশ্ব জয়ের উল্লাস করেছিলো তারা, তা ধরে রাখার লড়াইয়ের মূল পর্বেই যেতে পারলো না জার্মানরা। 

রাশিয়া বিশ্বকাপে ছোট-বড় দল বলে কিছু নেই, এমন কথা বলা শুরু হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু তাই বলে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে হেরে যাবে জার্মানি! সেই হারটা আবার গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে দিবে তাদের! জার্মানির এই হার আরো একবার বুঝিয়ে দিলো বিশ্বকাপ কী বিস্ময় নিয়ে হাজির হয়। এবং এ কারণেই হয়তো ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে এতো উন্মাদনা। 

সেরা দুই ফেভারিটের মধ্যে একটি হয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল জার্মানি। কিন্তু এই যাত্রার এমন সমাপ্তি! শুরুটাই ভালো হয়নি জার্মানির। প্রথম ম্যাচে মেক্সিকোর বিপক্ষে হেরে যায় বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। তৃতীয় ম্যাচে এসে হারতে হলো দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে।

শেষ কয়েকটা মিনিট বাদ দিলে ম্যাচের পুরো সময়টা কিন্তু রাজত্ব করেছে জার্মানিই। দ্বিতীয়ার্ধে একটি গোলের জন্য সব কিছুই করতে চেয়েছে জোয়াকিম লো দল। নিজেদের অর্ধ থেকে উঠে এসে একের পর এক আক্রমণ করেছে। কিন্তু কখনো কোরিয়ার গোলরক্ষক আবার ডিফেন্ডাররা ব্যর্থ করে দিয়েছে জার্মানির সব আক্রমণ।

নিজেদের ব্যর্থতাও মানতে হবে জার্মানদের। মারিও গোমেজ ফাঁকায় ক্রস পেয়ে পায়েই লাগাতে পারেননি। পায়ে লাগাতে পারলে নিশ্চিত গোল পেয়ে যেতে পারতো তারা। টনি ক্রুস, মেসুত ওজিলদের একাধিক শটও হয়েছে লক্ষ্যভ্রষ্ট। এর মধ্যে মাত্র চার মিনিটের ব্যবধানে দুটি গোল দিয়ে দেয় কোরিয়া।

ম্যাচের ৯০ মিনিটে কর্নার কিক থেকে বল পেয়ে জটলার মধ্য থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার হয়ে গোল করেন কিম ইয়ং। এই গোলটা নিয়ে বেধে যায় ঝামেলা। প্রথমে অফসাইট ধরেন লাইন্সম্যান। পরে দক্ষিণ কোরিয়ান ফুটবলাররা কড়া আবেদন করাতে ভিএআর নেন রেফারি। ভিএআরে দেখা যায় গোল।

জার্মানির বিদায় ঘণ্টায় মোটামুটি চূড়ান্ত বাড়ি পড়ে তখনই। ৯৬ মিনিটে ন্যুায়ারের উঠে যাওয়ার কারণে আরেকটা গোল হজম করতে হয় তাদের। যাতে শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলের জয় পায় কোরিয়া। অসাধারণ এই জয়ে অনন্য রূপকথা লিখে ফেলে কোরিয়ানরা। অন্য দিকে গ্রুপ পর্ব থেকেই করুণ বিদায় নিতে হয় বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের।