এই 'কলঙ্ক' লেগেছে আরও যাদের গায়ে...

রাশিয়া বিশ্বকাপের সেরা দুই ফেভারিটের মধ্যে একটি ভাবা হচ্ছিল জার্মানিকে। বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বলেই নয়, অনেকদিন যাবত ফিফার র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানটাও নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে নিয়েছে জার্মানি। তাছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গতিময় ফুটবলে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিল জার্মানি। কিন্তু সেই দলটাকেই গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হলো। প্রথম ম্যাচে মেক্সিকোর বিপক্ষে ১-০ গোলে হারার পর কাল উত্তর কোরিয়ার মতো দলের বিপক্ষে হারল বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।

এই দুই হার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় করে দিয়েছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের। বিষয়টা বড় কলঙ্কেরই। তবে এই কলঙ্ক যে শুধু জার্মানদের হজম করতে হচ্ছে বিষয়টা কিন্তু তেমন নয়। আগের বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বেই বাদ পড়ার উদাহরণ আরও বেশ কয়েকটি রয়েছে। ইতালি এমন লজ্জায় পড়েছে দুবার। ফ্রান্স, স্পেন এমনকি ফুটবলের সবচেয়ে সফল দল ব্রাজিলও আছে এই দলে। আগেরবার বিশ্বকাপ জিতে পরের বার গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেওয়ার এই কলঙ্ক নিয়েই আজকের আলোচনা।

১৯৫০ ইতালি: ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ সালে টানা দুইবার বিশ্বকাপ জিতেছিল ইতালি। টানা দুই বিশ্বকাপ জেতা প্রথম দলও তারা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে মাঝে দুই বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়নি। ৩৮,এর পর বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫০ সালে। এই বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল ইতালিকে। তখন গ্রুপ পর্ব থেকে একটি করে দল দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতো। প্রথম ম্যাচে সুইডেনের কাছে হারা ইতালি পরের ম্যাচে প্যারাগুয়েকে হারিয়েও গ্রুপের শীর্ষ দল হতে পারেনি। গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয় তাদের। অবশ্য এর কারণ হিসেবে হৃদয়বিদারক একটা ঘটনাকে উল্লেখ করা হয়। বিশ্বকাপের বছরখানেক আগে বিমান দুর্ঘটনায় ইতালিয়ান ক্লাব তুরিনোর প্রায় সব ফুটবলার নিহত হন। ইতালি জাতীয় দলের অধিকাংশ সদস্য ছিল এই ক্লাবের। সেই কারণে দুর্বল একটা দল নিয়ে ১৯৫০ বিশ্বকাপ খেলতে হয়েছিল ইতালিকে।

ব্রাজিল ১৯৬৬: ইতালির মতো কোনো দুর্ঘটনা ছিল না ব্রাজিলের। তবুও ১৯৬৬ সালের গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়তে হয় তখনকার ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে। ওই দলে ছিলেন পেলে, গারিঞ্চা, জাইরজিনিয়োর মতো তারকারা। তারপরও গ্রুপ পর্ব পেরোনো হয়নি ব্রাজিলের। ১৯৫৮ ও ১৯৬২ বিশ্বকাপ জেতা ব্রাজিল সেবার হাঙ্গেরি ও পর্তুগালের বিপক্ষে হেরে যায়। প্রথম ম্যাচে বুলগেরিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল ব্রাজিল। কিন্তু পরের দুই ম্যাচেই হাঙ্গেরি ও পর্তুগালের সঙ্গে হারতে হয়েছিল ৩-১ গোলে। এই দুটি হার গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় করে দেয় ব্রাজিলকে।

ফ্রান্স ২০০২: ১৯৯৮ সালে নিজেদের দেশে আয়োজিত বিশ্বকাপের ফাইনালে ব্রাজিলকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল ফ্রান্স। ফ্রান্সের পরবর্তি বিশ্বকাপের দলটাও ছিল বেশ ভালো। কিন্তু ২০০২ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব পেরুতে পারেনি তারা। ফ্রান্সের ওই বিদায়টা আশ্চর্য ঠেকেছিল সবার কাছে। কারণ তাদের গ্রুপটা ছিল বেশ সহজ। নবাগত সেনেগাল ছিল, ডেনমার্ক ছিল এবং খারাপ সময়ের মধ্যদিয়ে যাওয়া উরুগুয়ে ছিল। কিন্তু উরুগুয়ে ডেনমার্ক তো দূরের কথা সেনেগালের বিপক্ষেও জিততে পারেনি ফ্রান্স। সেনেগালের বিপক্ষে ১-০ গোলে হারের পর উরুগুয়ের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র। তারপর ডেনমার্কের বিপক্ষে ২-০ গোলে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় ফ্রান্স।

ইতালি ২০১০: ২০০৬ সালে সবাইকে চমকে দিয়ে বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছিল ইতালি। ২০১০ সালে গিয়ে আবার উল্টো চমক। মার্সেলো লিপ্পির অধিনে ফাবিও কানভারো, জিয়ানলুইজি বুফনের মতো তারকাদের নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল ইতালি। কিন্তু গ্রুপ পর্বের কোনো ম্যাচই জিততে পারেনি তারা। নিউজিল্যান্ড ও প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ১-১ গোলের ড্র করে স্লোভাকিয়ার বিপক্ষে হেরেছিল ৩-২ গোলে। ফলাফল ২০১০ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় ইতালি।

স্পেন ২০১৪: টিকি-টাকার মুগ্ধকর ফুটবলে দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০১০ সালে বিশ্বকে শুধু তাক লাগিয়েই দেয়নি স্পেন, বিশ্বকাপও জিতেছিল। সেটা ছিল স্পেনের প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা। তারপর বিশ্বজয়ী দলের মতো খেলে চলেছিল দলটি। পরবর্তীতে ইউরো জিতেছে তারা। কিন্তু ২০১৪ সালে ব্রাজিল গিয়ে বাদ পড়তে হয় গ্রুপ পর্ব থেকেই। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৫-১ গোলের শোচনীয় পরাজয় বরন করতে হয় স্পেনকে। তারপর চিলির বিপক্ষেও হারতে হয় ২-০ গোলে। ফলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩-০ গোলে জিতলেও সেবার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব পেরুনো হয়নি তাদের।

২০১৮ জার্মানি: এই কলঙ্কের সর্বশেষ শিকার জার্মানি। অন্যতম সেরা ফেভারিট হিসেবে রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলতে এসেছিল দেশটি। গতিময় ফুটবলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শ্রেষ্ঠদের মতোই খেলছিল জোয়াকিম লোর'র শিষ্যরা। কিন্তু সবার কল্পনাকে হার মানিয়ে এবার গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হলো তাদের। ইতিহাস যেনো ফিরে ফিরে এলো বর্তমানে!