কিনতে না কিনতেই ভেঙ্গে ফেললো নতুন বিমানের র‍্যাফট!

মাত্র সপ্তাহ আগেই ডানা মেলেছে বিমান বাংলাদেশের সম্পর্ণ নতুন বোয়িং-৭৮৭ উড়োজাহাজ ড্রিমলাইনার। যেটিকে আকাশবীণা নাম দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত পাঁচ সেপ্টেম্বর ড্রিমলাইনার উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বিমান কর্মকর্তাদের বলেছিলেন, 'খেয়াল রাখবেন দেশের বদনাম যাতে না হয়'। কিন্তু যাত্রার এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকৗেশলীর অদক্ষতায় ভেঙ্গে পড়লো জরুরি দরজার র‍্যাফট। এতো অল্পদিনেই উড়োজাহাজের ক্ষতি হওয়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে বিমানে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার’কে বলেন, গণমাধ্যমে দরজা ভেঙ্গে যাওয়ার যে সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে তা সঠিক নয়। তবে র‍্যাফট ক্ষতি হয়েছে। শিগগিরই বিমানের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।

বিমান সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। এতে দেড় ঘণ্টা দেরিতে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ে ড্রিমলাইনার। বিমানের প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিমানের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহমেদ। উড়োজাহাজটির যে ক্ষতি হয়েছে তা সারতে তিনদিন লাগবে। ওই পার্টসটি লন্ডন থেকে এনে সংযুক্ত করা হবে।

উড়োজাহাজ জরুরি অবতরণের পর জরুরি দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে বাইরের দিকে বেলুনের মতো একটি স্লাইডিং সিঁড়ি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেরিয়ে আসে। এতে যাত্রীরা নিরাপদে উড়োজাহাজ থেকে বের হয়ে আসতে পারেন। যেটিকে র‌্যাফট বলা হয়। যা শুধুমাত্র একবারই ব্যবহারযোগ্য। তাই দরজা থেকে ভেঙে যাওয়ায় এটি আর ব্যবহার করা যাবে না।

প্রকৌশল শাখার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ৮টায় ড্রিমলাইনার দিয়ে সিঙ্গাপুর ফ্লাইট করার প্রস্তুতি চলছিল। এটি বোর্ডিং ব্রিজে সংযুক্ত অবস্থায় বিএফসিসি থেকে যাত্রীদের জন্য ড্রিমলাইনারে খাবার তোলা হচ্ছিল। এ সময় প্রকৌশল বিভাগের মোস্তাফিজুর রহমান হঠাৎ দরজা খুলতে গিয়ে ভুল সুইচে চাপ দেন। এতে মূল দরজা না খুলে জরুরি দরজার র‌্যাফট ভেঙে যায়। এছাড়া এ ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে জোড়াতালি দিয়ে র‍্যাফটটি লাগানোরও চেষ্টা করেন প্রকৗেশলী। কিন্তু ব্যর্থ হওয়াতে বিষয়টি ফাঁস হয়। এরপর অন্য প্রকৌশলীরা গিয়ে র‍্যাফটটি সংগ্রহ করে প্রকৌশল বিভাগে নিয়ে যান। সিঙ্গাপুর ফ্লাইট বিলম্বে হলেও উড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় প্রকৌশল বিভাগ। তারা নিশ্চিত করে র‍্যাফট ছাড়াই ড্রিমলাইনার দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা সম্ভব হবে। এটা দেখতে দৃষ্টিকটু লাগলেও নিরাপত্তার ঝুঁকি নেই।

এ ঘটনায় বিমানের প্রকৌশলীদের অদক্ষতাকে দায়ী করেছেন এয়ারলাইন্স বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে এভিয়েশন বিশ্লেষক কাজী ওয়াহিদুল আলম টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপা ‘কে বলেন, খামখেয়ালির জন্য এই ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছি। এটা আসলেই হতাশার একটি খবর। বিমানটির আনার আগেই কর্মকর্তাদের যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। এ ধরণের ঘটনা বিমানের সুনাম নষ্ট করছে। 

আগেও ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি জানিয়ে কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, 'বিভিন্ন সময়ে যারা দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয় তাও প্রকাশ করে না বিমান। অনেকে এখনো বহাল তবিয়তে চাকরি করছে।' এসব ঘটনা আগামীতে যাতে সংগটিত না হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই এভিয়েশন বিশ্লেষক। 

এদিকে বিমান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার সন্ধ্যায় দাবি করেছে, "গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার ভোর ৪:২৫ মিনিটে মালয়েশিয়া থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ফিরে ড্রিমলাইনার আকাশবীণা। যাত্রী নেমে যাওয়ার পর নিয়মিত গ্রাউন্ড চেকের অংশ হিসেবে বিমানের প্রকৌশল বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয় বিমানটি। পরবর্তী ফ্লাইটের যাত্রীদের খাবার বিমানে ওঠানোর জন্য দরজা খোলার সময় র‍্যাফট খুলে যায়। এ প্রেক্ষিতে প্রকৌশল বিভাগের কর্মীরা আইকাও, সিভিল এভিয়েশন এবং উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং এর নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। উড়োজাহাজটি স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে এবং আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬টি ফ্লাইট পরিচালিত হয়েছে। র‍্যাফট খুলে যাওয়ার বিষয়ে কারো কোন দায়িত্বে অবহেলা আছে কি না সে বিষয়ে একটি তদন্তে কমিটি গঠিত হয়েছে। ড্রিমলাইনার পরিচালনার জন্য বিমানের নিজস্ব ১৪ জন বৈমানিক ও ১১২ জন প্রকৌশলীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে বোয়িং অনুমোদিত দুই জন বিদেশি বৈমানিক ও ছয় জন বিদেশি প্রকৌশলী ড্রিমলাইনার পরিচালনার বিষয়টি তত্ত্বাবধান করছেন।"

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে ১০টি নতুন বিমান কেনার চুক্তি করে। যার মূল্য ছিল ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ইউএস ডলার। ইতোমধ্যে বিমানের বহরে চারটি নতুন বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর ও দুটি নতুন বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ যুক্ত হয়েছে। বাকি চারটি উড়োজাহাজ হচ্ছে অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার। গত ১৯ আগষ্ট দেশে আসে প্রথম ড্রিমলাইনার আকাশবীণা। বহুল আলোচিত আকাশবীণায় মোট আসন সংখ্যা ২৭১টি। যার মধ্যে বিজনেস ক্লাসের সিট ২৪টি আর ২৪৭টি ইকোনমি ক্লাস। বিজনেস ক্লাসের যাত্রীরা ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত রিক্লাইন্ড সুবিধাসহ আরামদায়কভাবে ভ্রমণ করতে পারেন। আর সকল যাত্রীর জন্য ফ্রি ইন্টারনেট ও ফোন কলের সুবিধা রয়েছে।