চিকিৎসক: 'সুস্থ কওয়ার দরকার নাই, ইনজেকশন মার'

সুস্থ শিশুকে অসুস্থ সাজিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় একটি প্রাইভেট ক্লিনিকের চিকিৎসক। এ ঘটনায় দুই চিকিৎসকের কথোপকথনের অডিও ফাঁস হয়ে গেলে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। 

তবে মোবাইল ফোনের অডিও ফাঁস হওয়ার পর থেকে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের ফুলতলী বাজার এলাকার বাসিন্দা রুবেল মিয়া ও শিরিন আক্তার। তাদের ৪০ দিন বয়সী কন্যাশিশু ইসমত নাহার জীবা ঘনঘন হেঁচকি দেয়ায় গত ৩১ আগস্ট সকালে স্থানীয় অরবিট হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু রোগ চিকিৎসক এএইচএম খায়রুল বাশারকে দেখান মা শিরিন আক্তার। অতঃপর আরেক চিকিৎসক বিশ্বজিতের কাছে নিলে শিরিন আক্তারের মোবাইলে কথা বলে দুই চিকিৎসক।

মোবাইলে কল রেকর্ড চালু থাকায় কথোপকথন থেকে ধরা পড়েন দুই চিকিৎসক। কল রেকর্ড চেক করে দেখা যায়, চিকিৎসক বিশ্বজিত বলছেন, ‘দুলা ভাই তোমার রোগী তো খুবই ভালো আছে। কোনো সমস্যা নাই। শিশুর মা কাঁদতে কাঁদতে শেষ’।

চিকিৎসক খায়রুল বাশার জবাবে বলেন, ‘আমিতো জানি রোগী ভালো। সুস্থ কওয়ার দরকার নাই। ভালো জীবনেও কইছ না। বল, রোগী খারাপ আছে। ভর্তি করে রাখো। ভালো করে চিকিৎসা দেই। ইনজেকশন-টিনজেকশন মার। না হলে শান্তি হইতনো’।

চিকিৎসকদের কথায় সন্দেহ হওয়াতে মোবাইল ফোনের কল রেকর্ডটি শুনে প্রতারণার বিষয়টি আঁচ করতে পারেন শিশুটির মা শিরিন আক্তার। তিনি বলেন, আমার বাচ্চা হেঁচকি দিচ্ছিল। এজন্য আমি বাচ্চাকে নিয়ে অরবিটের চিকিৎসক খায়রুল বাশারের কাছে যাই। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কিছু ওষুধ লিখে দেন তিনি। পরে উনার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর দিয়ে বলেন, রাতে কল দিয়ে বাচ্চার অবস্থা জানানোর জন্য। রাতে ফোন করে অবস্থা জানানোর পর তিনি মৌলভীবাজারের মামুন হসপিটালের ডা. বিশ্বজিতের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এ সময় তিনি সেখানে গিয়ে ডা. বিশ্বজিতকে কল দেয়ার জন্য বলেন। রাত ১২টার দিকে শিশুটিকে নিয়ে গিয়ে আমার মোবাইল দিয়ে কল দিই। দুই ডাক্তার কথা বলেন। এর আগেই বাচ্চাকে পরীক্ষা করেন ডা. বিশ্বজিত। পরে ওই প্রাইভেট হসপিটালের ভিআইপি রুমে ভর্তি করা হয়।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ডাক্তারের কাছে মানুষ যায় শান্তির জন্য। কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে এমন প্রতারণা করেছেন যা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আমি গরিব মানুষ এত টাকা ঋণ করে নিয়ে গেছি। ঘটনার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ঘটনাটি জানিয়েছি। হাঁটতে হাঁটতে স্যান্ডেল ছিঁড়েছি কিন্তু বিচার পাইনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোন কথা বলতে চাননি অভিযুক্ত চিকিৎসক এএইচএম খায়রুল বাশার।

অভিযুক্তের ব্যাপারে অরবিট হাসপাতালের পরিচালক মহিবুর রহমান হারুন জানান, এএইচএম খায়রুল বাশার নবজাতক ও শিশু-কিশোর রোগ বিশেষজ্ঞ। প্রায় ১২ বছর ধরে তিনি অরবিটে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। গত ৩১ আগস্ট জিবা নামের ওই শিশুকে তার মা এখানে নিয়ে এলে তাকে সিলেট পাঠানো হয়। কিন্তু তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় মৌলভীবাজার নিয়ে যান। পরবর্তীতে এ ঘটনার পর তিনি শিশুর বাবার সঙ্গেও মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন।

তবে এ ঘটনাকে ধিক্কার জানিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলেন, মোবাইল ফোনে যে আলাপ হয়েছে তা চিকিৎসার নৈতিকতা বিবর্জিত। এটা মেনে নেয়া যায় না।

বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন নবীগঞ্জের সচেতন মহল। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে এসব অসাধু চিকিৎসকদের বিচার চেয়েছেন তারা। সেইসঙ্গে স্বাস্থ্যসেবার প্রতি সম্মান জানাতে প্রতারণা অবসানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান ভুক্তভোগীরা।