আপনি পড়ছেন

আন্তঃদেশীয় হাতির চলাচলের পথ সংরক্ষণ ও মানুষের আক্রমণাত্মক আচরণ কমিয়ে আনাসহ হাতি সুরক্ষায় একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে বাংলাদেশ ও ভারত। তৃতীয় ইন্দো-বাংলা সংলাপে দুই দেশের বন কর্মকর্তারা গেলো ২৯ নভেম্বর এ অঙ্গীকার করেন। ঢাকার আগারগাঁওয়ের বন ভবনে আয়োজিত এক সংলাপে হাতি সুরক্ষায় সীমান্ত এলাকায় বন্য হাতির চলাফেরা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে ঐক্যমতে পৌঁছায় দুই পক্ষ।

Indo bangla elephant dialogue 29 december 2018

সংলাপে উল্লেখ করা হয়, বন ধ্বংসের কারণে হাতির আবাস ও বিচরণ এলাকা কমে যাচ্ছে। হাতি চলাচলের এলাকায় মানুষের স্থাপনা গড়ে উঠায় মানুষ ও হাতির মধ্যে সংঘাত বাড়ছে।

আরো উল্লেখ করা হয়, হাতির আক্রমণে বছরে প্রাণ হারান প্রায় ৪০০ মানুষ। আর বছরে হত্যার শিকার হয় অন্তত ১০০টি হাতি।

বন বিভাগ বলছে, বাংলাদেশ শেরপুর জেলার ভারতের সীমান্তবর্তী বনাঞ্চলে বিচরণ করে ১২০/১২৫টি হাতি। পারিযায়ী হাতি এসব হাতিকে এশিয়ান হাতিও বলা হয়। এই হাতিগুলোর প্রায় ৬০/৭০টি বেশি হাতি সারা বছরই বিচরণ করে থাকে। ফলে প্রায়ই খাবারের খোঁজে হাতিগুলো সীমান্তবর্তী লোকালয় ও ফসলের মাঠে আসলে প্রায়ই ঘটে হাতি-মানুষ সংঘর্ষ। তাই সংঘর্ষ কমাতে আলোচনা হয় সংলাপে।

প্রধান বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. শফিউল আলম চৌধুরী সংলাপে সভাপতিত্ব করেন। অংশ নেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সচিব আব্দুল্লাহ আল মহসিন চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব ড. মো. বিল্লাল হোসেন এবং ভারতের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এম এস নেগি। এছাড়া ছিলেন দু’দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের ২৫ কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ দল।

বাংলাদেশের আয়োজনে এটিই ছিল প্রথম ‘হাতি সংলাপ’। এর আগে ভারত সরকার ২০১৬ সালে কলকাতায় ও ২০১৭ সালে শিলংয়ে দুটি হাতি সংলাপের আয়োজন করেছিল। এতে হাতি সংরক্ষণে দু’টি ওয়াকিং গ্রুপ তৈরি করা হয়। কোন কোন এলাকা দিয়ে কোন সময়ে হাতি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত অতিক্রম করে তাও নির্ধারণ করা হয় সংলাপে।

সংলাপে আন্ত:সীমান্ত হাতি সংরক্ষণে ওয়ার্কিং গ্রুপকে কার্যকর, সীমান্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে হাতি চলাচলের তাৎক্ষণিক তথ্য আদান-প্রদান, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কমান্ড্যান্টের সমন্বয়ে একটি যৌথ সমন্বয় গ্রুপ গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়।

উভয় দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর বিশেষ প্রয়োজনে জেলা প্রশাসকদের উভয় দেশের এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমকে সীমান্ত অতিক্রমে সহায়তার দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সভায় একটি প্রটোকল, একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেশনাল প্রসিডিউর এবং পূর্ববর্তী দুটি সংলাপে গৃহীত ১৭টি বিষয়ের অগ্রগতি ও মূল্যায়ন নিয়েও আলোচনা হয়।

elephant dialogue 2

বন সংরক্ষক মো. জাহিদুল কবীর বলেন, দু’দেশ হাতি সংরক্ষণে একে অন্যকে সহায়তার বিষয়ে সিন্ধান্ত হয়। এজন্য দুদেশের বন কর্মকর্তা ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদান করা হবে। এমনকি কোন হাতি বিপদে পড়লে সেটিকে উদ্ধারে কাজ করা দলের সদস্যদের যাতায়াতে জটিলতা এড়াতে ভিসামুক্ত প্রবেশের সুবিধে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য স্থানীয় জেলা প্রশাসকের অনুমতি সাপেক্ষে প্রবেশ করার বিষয়ে প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। হাতি সংরক্ষণে টাস্কফোর্সের সুপারিশ সাপেক্ষে একটি চুক্তি শিগগিরই অনুমোদন করা হবে বলে জানান এই বন সংরক্ষক।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে যে ক’টি বন্য প্রাণী বিপন্ন, এরমধ্যে অন্যতম হাতি। বিপন্নপ্রায় হাতি বাঁচাতে দশ বছর মেয়াদি একটি মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নেয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়। পরিকল্পনায় ল্যান্ডস্কেপ বেইজড হাতি সংরক্ষণ, মানুষ ও হাতির মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়ানো, হাতির এলাকা সংরক্ষণ, খাবার নিশ্চিত করাসহ একাধিক বিষয়ে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে।

বন্যপ্রাণী গবেষকরা মনে করেন, অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে বন উজাড় হয়ে যাওয়াতে বিপন্ন হয়ে পড়ছে হাতি। খাবার সংকটে হাতিকূল বন ছেড়ে লোকালয়ে চলে আসায় সংঘর্ষে প্রতিনিয়তই মানুষ এবং হাতি উভয়ই মারা যাচ্ছেন। এ অবস্থায় আগামী ২৫ বছর পর বাংলাদেশে হাতি টিকে থাকতে পারবে কিনা তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। হাতিকে টিকিয়ে রাখতে পরিকল্পনাতে ল্যান্ডস্কেপ বেইজড হাতি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। হাতির জন্য কমিউনিটি বেইজড রেসপনসড টিম গঠন, সচেতনতামূলক কার্যক্রমের জোর দেয়ার দাবি উঠেছে।

বিশ্বের নানা দেশে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে ফান্ড থাকলে দেশে এখনো গঠন হয়নি এমন তহবিল। হাতি টিকিয়ে রাখতে সরকার যে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা করছে মূলত এই পরিকল্পনাটিও প্রণয়ন করে দিয়েছে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে কাজ করা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন)। এতে বলা চলে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের বিষয়টি হচ্ছে অনেকটা আইইউসিএন-এর উদ্যোগেই। ২০১৬ সালে আইইউসিএনের হাতি শুমারির সবশেষ তথ্য, বাংলাদেশে মোট ২৬৮টি আবাসিক বন্যহাতি রয়েছে। ৯৩টি হাতি প্রতিবেশী দেশ থেকে প্রবেশ করে। আবাসিক হাতগুলোর মধ্যে বন্দি অবস্থায় রয়েছে ৯৬টি।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.