এয়ারক্র্যাফ্ট বানিয়ে বিমানবাহিনীর স্বীকৃতি পেলেন পপকর্ন বিক্রেতা

পড়াশোনা ক্লাস এইট পর্যন্ত। অভাবের তাড়নায় এর বেশি আর এগুনো হয়নি। বিমানবাহিনীতে যোগদানের স্বপ্নটাও বাস্তব হয়নি। তবে আশা ছাড়েননি মুহম্মদ ফৈয়াজ। ডানা মেলে আকাশে উড়ার যে লক্ষ্যটা সেই ছেলেবেলা থেকে নিজের ভাবনায়, স্বপ্নে গেঁথে এসেছেন ফৈয়াজ, তাকে একটা কাঠামো তো দিতেই হবে!

৩২ বছরের এই যুবক তাই নিজের হাতেই বানিয়ে ফেলেছেন আস্ত একটা এয়ারক্র্যাফ্ট। রানওয়ে দিয়ে ছুটিয়ে নিয়ে গিয়ে আকাশে বেশ খানিক উড়েও এসেছেন। এমন কাণ্ড দেখে প্রথমে চোখ রাঙালেও পরে ফৈয়াজকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথাই ভেবেছে পাক বিমানবাহিনী।

‘বাবা মারা যায় যখন স্কুলে পড়ি। বড় হয়ে বিমানবাহিনীর পাইলট হবো ভেবেছিলাম, ফাইটার জেট ওড়াব, সেটা আর হয়নি,’ আক্ষেপ করে বলেন ফৈয়াজ। পাকিস্তানের পাঞ্জাবের প্রত্যন্ত টাবুর গ্রামে ছোট্ট তিন ঘরের বাড়ি তার। মা, স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে বড় সংসার।

ফৈয়াজের বলেন, ‘ক্লাস এইটের পরই স্কুল ছেড়ে দেই। পয়সা রোজগারের জন্য ছোট থেকে নানা কাজ করেছি। এখন সকালে পপকর্ন বেচি, রাতে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করি।’ তবে স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি বলে জানান ওই যুবক।

ফৈয়াজ জানান, নিজের হাতে প্লেন বানানোর ধারণাটা আসে সেই ২০১২ সালে, ওই বছরই তিনি নাকি এমন একটা গাড়ি বানিয়েছিলেন যেটা পানিতেও দিব্যি চলতে পারে। তবে সেই গাড়ি নাকচ করে দিয়েছিল পুলিশ। এর পরই এয়ারক্র্যাফ্ট বানানোর পরিকল্পনা। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে প্লেন দুর্ঘটনার কোনো সিরিজ দেখালেই সেটা মন দিয়ে দেখতে বসে যেতেন ফৈয়াজ। কীভাবে প্লেন উড়ছে, ল্যান্ড করছে খুঁটিয়ে সবটাই দেখতেন তিনি। তার পর অনলাইনে খোঁজাখুঁজি তো রয়েছেই। প্লেনের বড় বড় ব্লু-প্রিন্ট বার করে আনতেন দোকান থেকে, সেগুলি দেখেই নিজের প্লেনের নকশা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করতেন।

ফৈয়াজ গর্ব করে বলেন, ‘একদিন মাথায় নিখুঁত প্ল্যান চলে এলো। রোড কাটার দিয়ে বানালাম ইঞ্জিন, চটের ডানা আর রিকশার চাকা হলো প্লেনের চাকা। তৈরি হয়ে গেল মিনি এয়ারক্র্যাফ্ট।’

তবে এই প্লেন বানানোর জন্য কাঠখড় কিছু পোহাতে হয়নি। তিনি জানিয়েছেন, নিজের কিছুটা জমি বেচে আর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছ থেকে ৫০,০০০ টাকা ধার নিয়ে ছোট-খাটো একটা ল্যাবরেটরি বানিয়ে ফেলেছিলেন। সেখানেই নিজের স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিয়েছেন তিনি।

গেল ফেব্রুয়ারিতে একবার ট্রায়াল দেন তার এই মিনি এয়ারক্র্যাফ্টের। পরে মার্চে লোকজন ডেকে প্লেন উড়িয়ে দেখান ফৈয়াজ। ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে দুই-আড়াই কিলোমিটার উড়েও ছিল এই প্লেন।

তবে লাইসেন্স ছাড়াই যুবকের এমন প্লেন উড়ানো দেখে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ৩০০০ টাকা বন্ডে ছাড়া পান তিনি। তবে ফৈয়াজের সৃজনশীল প্রতিভার প্রশংসা করতে ভোলেননি পুলিশ কর্মকর্তারা।

সম্প্রতি পাকিস্তানের বিমানবাহিনীর নজরে পড়েছে ফৈয়াজের এই প্লেন। বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে তাকে সার্টিফিকেট দেওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে।

ফৈয়াজের স্ত্রী মুমতাজ বিবি বলেন, ‘আগে ভাবতাম, আমার স্বামী পাগলামি করছে। অভাবের সংসারে এমন খেয়ালকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু এখন আমাদের গর্ব হচ্ছে।’

তবে ফৈয়াজের আক্ষেপ লাইসেন্স এখনও হাতে পাননি তিনি। আর পাক অফিসার জাফার ইকবাল বলেছেন, অপেক্ষা আর কিছু দিনের। লাইসেন্স পেলেই ইচ্ছা মতো আকাশে ডানা মেলতে পারবে ফৈয়াজের এয়ারক্র্যাফ্ট।