ইফা ডিজি সামীমের পদত্যাগ নিয়ে ধূম্রজাল

ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) মহাপরিচালক (ডিজি) সামীম মোহাম্মদ আফজালের পদত্যাগ নিয়ে ধূম্রজাল এখনো কাটেনি। একটি পক্ষ বলছে, তিনি শনিবার পদত্যাগ করেছেন, যার ধরুন তিনি রোববার অফিসও করেননি। অপর একটি পক্ষের দাবি, তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছেন না।

সামীম মোহাম্মদ আফজাল

ইফার একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগে সামীম আফজালকে গত ১০ জুন শোকজ করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। গুঞ্জন রয়েছে তিনি শনিবার ধর্মসচিবের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান। যার ধরুন গতকাল রোববার অফিস করেননি সামীম আফজাল।

সূত্রটি বলছে, পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার কথা বলে শনিবার সকালে ইফা সচিব কাজী নূরুল ইসলামকে অফিসে ডেকে পাঠান ডিজি সামীম। এ খবর চাউর হলে ছুটির দিনেও আগারগাঁওয়ে ইফার কার্যালয়ে জড়ো হন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর মধ্যেই সামীমের ঘনিষ্ট একজন পরিচালক বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইল অফিসের বাহিরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

এ সময় ফাইলগুলো গাড়িতে তুলতে গেলে বাধা দেন ইফা সচিব নূরুল ইসলাম। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে সামীম আশজাল সচিবের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে ডিজিকে অবরুদ্ধ করে রাখেন ইফা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

পরে ওই ফাইলগুলো সচিব জব্দ করলে সেখানে ছুটে যান ইফার বোর্ড অব গভর্নর্সের সদস্য মিজবাহুর রহমান চৌধুরী। তার মধ্যস্থতায় ফাইল রেখেই অফিসকক্ষ ছাড়েন সামীম আফজাল। বিষয়টি নিশ্চিত হতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

এক পর্যায়ে সামীমের ফোন তার একান্ত সচিব (পিএস) জাকির হোসেন রিসিভ করলে পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। জবাবে তিনি বলেন, ‘স্যারের চাকরি চুক্তিভিত্তিক। তিনি এমপি-মন্ত্রী নন যে, পদত্যাগ করবেন। সরকার তাকে এ পদে না রাখতে চাইলে চুক্তি বাতিল করতে পারে। তবে তিনি নিজে থেকে পদত্যাগ করবেন না।’

এ বিষয়ে ইফা সচিব কাজী নূরুল ইসলাম বলেন, ‘পদত্যাগ করা না করা তার নিজস্ব ব্যাপার। তার নিয়োগ চুক্তিভিত্তিক হওয়ায় সরকারই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারব না।’

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের মূল পিলার করে দিয়ে নিজের দোকানের পরিসর বাড়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সোহরাব হোসেন গাজী। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে হৈচৈ পড়ে যায়, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান। এ বিষয়ে জরুরি বৈঠক ডেকে ইফা ডিজি সামীমসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে জবাবদিহিতা চান।

এতে চাপে পড়া ডিজি গভর্নিং বডির সভা ছাড়াই ইফার পরিচালক মহিউদ্দিন বাদলকে বরখাস্ত করেন। এতে আরও ক্ষিপ্ত হন সৌদি আরব সফরে থাকা ধর্ম প্রতিমন্ত্রী। তিনি দেশে ফিরলে বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়। অন্যদিকে সামীম আফজালকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয় মন্ত্রণালয়।

উল্লেখ্য, দেশের ঐতিহাসিক স্থাপনা বায়তুল মোকাররমের ভার বহনকারী মূল পিলার হচ্ছে দু'টি। মসজিদ ভবনের নিচের মার্কেটে স্ত্রীর মালিকানাধীন দোকান আয়তনে বড় করতে রাতের আঁধারে ওই দুটি পিলারের একটি ও ১৫ ফুট দেয়াল ভেঙ্গে ফেলেন মো. সোহরাব হোসেন গাজী।

এ ঘটনা তদন্তে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত শেষে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি গত ২০ মার্চ ধর্ম মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এতে ঘটনার হোতা সোহরাবসহ একাধিক ব্যক্তি দোষী প্রমাণিত হন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

এই ঘটনায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে থানায় একটি জিডিও করা হয়েছে। গত ২৪ অক্টোবর পল্টন থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন বায়তুল মোকাররম মসজিদ ও মার্কেটের সিকিউরিটি সুপারভাইজার মো. নুরুল হক।