২০ মিনিট খাঁচায় পড়েছিলেন মুরসি, কেউ ব্যবস্থা নেয়নি!

মিশরে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি সোমবার শুনানিকালে আদালতেই মুত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। মৃত্যুর আগে মুসলিম ব্রাদারহুডের এ নেতা এজলাসের খাঁচায় অজ্ঞান হয়ে প্রায় ২০ মিনিট পড়েছিলেন।

পরিবার ও বন্ধুদের বরাত দিয়ে এ খবর দিয়ে যুক্তরাজ্যের দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত ৬৭ বছর বয়সী এ প্রেসিডেন্টকে কারাগারে কোনো চিকিৎসা দেয়া হয়নি। ফলে প্রায় বিনা চিকিৎসায় তাকে রাষ্ট্রীয় মদদে হত্যার অভিযোগ এনেছে তার পরিবার ও মুসলিম ব্রাদারহুড।

সোমবার যথারীতি মুরসিসহ মুসলিম ব্রাদারহুডের অন্য আসামিদের আদালতে এনে এজলাসের খাঁচায় আটকে রাখা হয়। শুনানি চলাকালে হঠাৎ করেই অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পড়ে যান মুরসি। এ সময় অন্য আসামিরা তার দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে নিরাপত্তা প্রহরীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কেউ কর্ণপাত করেনি।

এভাবে প্রায় ২০ মিনিট ধরে মেঝেতেই পড়ে ছিলেন দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিরত প্রেসিডেন্ট মুরসি। এমতাবস্থায় সবার নজর মেঝেতে পড়ে থাকা ‍মুরসির দিকে গেলে অবশেষে তাকে খাঁচা থেকে বের করা হয়। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসাও পাননি মুরসি।

তবে এ খবর প্রকাশের পরপরই অভিযোগ অস্বীকার করে মিশরের অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে দাবি করা হয়েছে, অজ্ঞান হয়ে এজলাসে পড়ে যাওয়ার পরপরই মুরসিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মুরসির পরিবার ও তার দলের অভিযোগ, মুরসি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিকস, কিডনি ও লিভারজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। কিন্তু কারাগারে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেয়া হয়নি। প্রায় বিনা চিকিৎসায় তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে স্বৈরাচারী সিসি সরকার।

মৃত্যুর আগে প্রায় ছয় বছর ২৩ ঘণ্টাই নির্জন সেলে রাখা হতো কারাবন্দী মুরসিকে। দিনে মাত্র এক ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি করার সুযোগ পেতেন তিনি। এই সময়ের মধ্যে তার সঙ্গে তার পরিবারকে মাত্র তিনবার দেখা করতে দেয়া হয়।

২০১১ সালে আরব বসন্তের জেরে গণ-অভ্যুত্থানে দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক হোসনি মোবারক ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর অনুষ্ঠিত দেশটির ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে জয়ী হয় মিশরের প্রাচীন রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থিত ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি (এফজেপি)। দলটির সিনিয়র নেতা মুরসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

মুরসিকে ২০১৩ সালে ক্ষমতাচ্যুৎ করে কারাবন্দী করেন তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ সিসি। পরে একাধিক মামলায় তাকে বিচারের মুখোমুখি করে ২০১৬ সালের জুনে তথ্য পাচারের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। সেই থেকে মৃত্যু অবধি কারাগারেই ছিলেন তিনি।