রাজধানীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশার নৈরাজ্য, দায় কার?

রাজধানী ঢাকায় দাপিয়ে বেড়ানো সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চরম অনিয়ম চলছে। এর পেছনে মালিকদের সীমাহীন লোভ, চালকদের বেপরোয়া ভাড়া আদায়, বিআরটিএ ও ট্রাফিক পুলিশের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মনযোগী না হওয়ায় অনিয়মের ব্যাপারটি ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে, মিলছে না প্রতিকার।

২০০১ সালে বেবিট্যাক্সি, টেম্পো ও টু-স্ট্রোক যান তুলে দিয়ে চালু করা হয় সিএনজিচালিত অটোরিকশা। সে সময় প্রথম দুই কিলোমিটারে ১২ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারে ৫ টাকা করে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাসের (সিএনজি) দাম অনুযায়ী বেঁধে দেয়া ওই ভাড়া নিয়েও যাত্রীরা আপত্তি জানিয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে সিএনজি স্টেশনের সংখ্যা বাড়লে ভাড়া কমবে বলে জানানো হয়।

সময়ের সঙ্গে ঢাকায় সিএনজি স্টেশন বাড়লেও কমেনি সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া, বরং বেড়েছে বহুগুণ। সর্বশেষ ২০১৫ সালের শেষ দিকে ভাড়া সমন্বয় করে প্রথম দুই কিলোমিটারে ৪০ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারে সাড়ে ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

সরকারের পক্ষ থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা প্রতি মালিকের জমা ৯০০ টাকা নির্ধারণ করে আদেশ অমান্যের জন্য মালিক ও চালকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়। এর পরও মিটারের পরিবর্তে ৯৮ শতাংশ চালক চুক্তিতে যাত্রী পরিবহন করছেন বলে অভিযোগ বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির। বলা হচ্ছে, ৬২ শতাংশ অটোরিকশায় মিটার কার্যকর নেই, আদায় করা হচ্ছে চালকের ইচ্ছা মতো ভাড়া।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে- রাজধানীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশার এই নৈরাজ্যের দায় কার? সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এ জন্য মালিকরাই বেশি দায়ী, দায় চালকেরও আছে। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়ও কম নয়।

বিআরটিএ-এর তথ্যমতে, বর্তমানে ঢাকায় ১৫ হাজারের মতো সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। এ সব গাড়ির মালিকানা রয়েছে মাত্র আড়াই হাজার লোকের হাতে। তারা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে ৯০০ টাকার স্থানে প্রতিদিন ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত জমা নিচ্ছেন।

ফলে চালকরা যাত্রীদের পকেট ফাঁকা করে সেই টাকা তুলতে বাধ্য হচ্ছেন। তাছাড়া চালকদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রবণতা তো আছেই। কিন্তু বিআরটিএ-এর উদাসীনতা দেখে যে কারও মনে হতে পারে, ব্যাপারটি দেখার যেনো কেউ নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, তারা সাধারণ মানুষের স্বার্থ নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নয়। ফলে আমরা যতই চিৎকার করি, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তারা তাতে কর্ণপাত করেন না।

তবে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান বলেন, অটোরিকশা নীতিমালা ভাঙলে আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। তাছাড়া সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেলেও চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়।

অন্যদিকে, সিএনজিচালিত অটোরিকশার ব্যাপারে সব সময় সতর্ক থাকার কথা উল্লেখ করে পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দীন আহমেদ বলেন, যাত্রীরা অভিযোগ করলেই ব্যবস্থা নেয়া হয়। কিন্তু ঝামেলা এড়াতে বেশিরভাগ সময়ই যাত্রীরা অভিযোগ করেন না। তারা নীরবে চুক্তিতে অটোরিকশায় চলাচল করেন, এমনকি ধরলেও বিষয়টি চেপে যান।