জাতির উদ্দেশে ভাষণে বিজেপি-আরএসএসকে ধুয়ে দিলেন ইমরান

কাশ্মির ইস্যুতে আজ সোমবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ভাষণে কাশ্মির ইস্যুতে বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। তবে পাক প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বড় একটা অংশ ছিল ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ও এর মূল সংগঠন আরএসএসকে নিয়ে সমালোচনা।

প্রসঙ্গত, ইমরান খান এমন সময় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন যার কয়েক ঘণ্টা আগে ফ্রান্সে জি-৭ সম্মেলনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কাশ্মির ইস্যুতে বৈঠক করেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

ইমরান খান বলেন, ‘ক্ষমতায় আসার পর একাধিক বার ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছিলাম। বলেছিলাম, শান্তি স্থাপনে ভারত এক পা এগুলে, চার পা আগাব আমরা। কিন্তু আলোচনায় বসতেই রাজি হয়নি ভারত। সব কিছুর জন্য শুধু পাকিস্তানকে দায়ী করে গেছে। সন্ত্রাসে মদত জোগানোর অভিযোগ তুলেছে।’

কাশ্মির সিদ্ধান্তের জন্য হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি এবং কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএসকে দায়ী করেন পাক প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপ করেছে ভারত সরকার। উপত্যকাকে ভেঙে দুই টুকরো করেছে। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কাও করেনি তারা। নিজেদের দেশের সুপ্রিম কোর্টেরও পরোয়া করেনি। মহাত্মা গান্ধী এবং জওহরলাল নেহেরু কাশ্মিরবাসীকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে গিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানেরও পরিপন্থী। বিজেপি এবং আরএসএসের একটাই লক্ষ্য, হিন্দুস্তান শুধু হিন্দুদের। বাকিদের সেখানে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে থাকতে হবে।’

ইমরান খান আরো বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী আদর্শে বিশ্বাসী আরএসএস। মোদির পূর্ববর্তী সরকার তাদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের বার্তা দেওয়ায় মহাত্মা গান্ধীকেও খুন করেছিল তারা (আরএসএস)। নেহেরুর মৃত্যুর পর থেকেই ওদের বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়, যা আগেভাগে আঁচ করতে পেরেছিলেন জিন্নাহ। তাই পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্র গড়ার পথে এগিয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনের আদর্শে বিশ্বাস করি আমরা। তাই সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় বিশ্বাস করি। আরএসএসের আদর্শ এর সম্পূর্ণ বিপরীত।’

মোদি ঐতিহাসিক ভুল করেছেন উল্লেখ করে ইমরান বলেন, তার (মোদি) সরকারের সিদ্ধান্তে জম্মু-কাশ্মিরের স্বাধীনতার পথ আরো প্রশস্ত হয়ে গেছে।

পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কূটনৈতিক জয় হয়েছে। কারণ কাশ্মির সমস্যা আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি আমরা। বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছি। আমাদের উদ্যোগেই বিষয়টি নিয়ে অধিবেশন ডাকতে বাধ্য হয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, ১৯৬৫ সালের পর যা প্রথম। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমও ভারতের সমালোচনা করতে শুরু করেছে, যা আগে এভাবে করেনি।’

আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বক্তৃতা করবেন ইমরান খান। সেখানে কাশ্মিরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় নিয়েও নিজে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী।