কথা হলেও আর দেখা হলো না দুই বন্ধুর

মিলনের ও সিরাজের সর্বশেষ কথা হয়েছিল যে, যাত্রী নামিয়ে তারা সদরঘাট যাবেন এবং একসঙ্গে নাশতা করে ভোরে লঞ্চের যাত্রী নিয়ে ফিরবেন। মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধান, তার মধ্যেই সিরাজের কাছে অন্য বন্ধুর ফোন আসে যে, মিলনকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে।

গতকাল রোববার রাত সোয়া ২টার দিকের ঘটনা। মো. মিলন (৩৫) রাইড শেয়ারে যাত্রী নিয়ে মালিবাগ থেকে শান্তিনগরের দিকে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ফ্লাইওভারে উঠার পর পরই মিলনের গলায় ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়। এই আঘাতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে তার।

রক্তের বেগ থামাতে মিলন নিজেই তার গলার ডান পাশের অংশ ডান হাত দিয়ে চেপে ধরেন। ওই অবস্থায় দৌড়ে ফ্লাইওভার দিয়ে নেমে আসেন। মর্মান্তিক এই দৃশ্য দেখে দুইজন পথচারী মিলনকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় শান্তিনগর মোড়ে টহল পুলিশের কাছে। ততক্ষণে মিলনের কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। আকার-ইঙ্গিতে হিমেল নামে এক বন্ধুর নম্বর কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তাকে জানান তিনি। দ্রুত মিলনকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে।

হাসপাতালে অস্ত্রোপচারে মিলনের গলায় ক্ষত স্থানে সাতটি সেলাই করা হয়। কিন্তু রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি। অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়।

কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। প্রায় তিন ঘণ্টা পর সোমবার ভোর পৌনে ৬টার দিকে সেখানে মারা যান মিলন। পরে ময়নাতদন্তের জন্য তার লাশ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।

পুলিশ ও স্বজনদের ধারণা, মিলনের সঙ্গে থাকা যাত্রীই তাকে হত্যা করে থাকতে পারে। হত্যার পরই ঘাতক মিলনের মোটরসাইকেল (ঢাকা মেট্রো ল ২৬-৪১২৬) ও মোবাইল ফোন সেট নিয়ে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় আজ দুপুরে শাজাহানপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন মিলনের স্ত্রী শিল্পী।

জানা গেছে, রাইড শেয়ারে মোটরসাইকেল চালক মিলন ঢাকার মিরপুর এলাকার গুদারাঘাট এলাকায় থাকতেন। ঢাকায় স্ত্রী শিল্পী, ১০ বছরের ছেলে মিরাজ ও ৫ বছরের মেয়ে সাদিয়াকে নিয়ে থাকতেন তিনি।

তার পাশের বাড়িতেই থাকেন বন্ধু সিএনজি অটোরিকশা চালক সিরাজ। কোনো ট্রিপ নিয়ে যাওয়ার আগে সব সময় নিজেদের মধ্যে কথা বলতেন মিলন ও সিরাজ। গতকাল দিবাগত রাতে তাদের দুইজনেরই সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাওয়ার কথা ছিল।

সিরাজ জানান, সর্বশেষ রাত ২টা ১২ মিনিটে মিলনের সঙ্গে কথা হয় তার। এর ২৩ মিনিট পর তিনি জানতে পারেন যে, মিলনের গলা কেটে তার মোটরসাইকেল নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।

ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাজাহানপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আতিকুর রহমান বলেন, রাইড শেয়ারিংয়ে যাত্রী নিলেও মিলন ঘটনার আগে অ্যাপস ব্যবহার করেননি। তিনি উবার, পাঠাওয়ে রাইড শেয়ারিং করতেন। সর্বশেষ গত ৭ আগস্ট উবারে যাত্রী বহন করেছিলেন মিলন। গতকাল রাতে মিলন আবুল হোটেলের প্রান্ত দিয়ে ফ্লাইওভারে উঠেন। মালিবাগ থেকে শান্তিনগরে যাওয়ার পথে পদ্মা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভবনের সামনে মিলনকে ছুরিকাঘাত করা হয়।

তিনি বলেন, অ্যাপসের মাধ্যমে যাত্রী বহন করলে ঘটনার বিস্তারিত জানা সম্ভব হতো। অ্যাপস ব্যবহার না করে রাইড শেয়ারে মোটরসাইকেল চালকেরা চুক্তিতে যাত্রী নিয়ে থাকেন। মিলন হয়তো চুক্তিতে যাত্রী নিয়ে শান্তিনগরের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় ছুরিকাঘাত করে মিলনের মোটরসাইকেল ও মোবাইল ফোন সেটটি নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

এসআই আতিকুর রহমান আরো জানান, অ্যান্টি কাটার দিয়ে মিলনের গলার ডান দিক থেকে টান দিয়ে বামপাশ কাটা হয়। ছুরিকাঘাতে তার গলায় তিন ইঞ্চি গভীর ক্ষত হয়। শিরা কেটে যাওয়ায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মিলন মারা যান।