আপনি পড়ছেন

ঢাকায় কবে কখন শিয়াদের আগমন ঘটে এবং কবে থেকে মহররম উৎসব, তাজিয়া মিছিল ঢাকার উৎসবে রূপ লাভ করে তা দিন তারিখ ঠিক করে বলা মুশকিল। অনেকের ধারণা, মুঘল সম্রাটরা শিয়া মতাবলম্বী ছিলেন। ফলে তাদের হাত ধরে ভারতীয় উপমহাদেশে শিয়াদের প্রভাব বিস্তার ঘটে।

tazia procession in the capital on the occasion of the holy ashura

মূলত সম্রাটদের মধ্যে শুধু মাত্র সম্রাট শাহজাহান শিয়া মতে প্রভাবিত হয়ে পড়েন। তার আগে কোনো সম্রাটই শিয়াদের ভালো চোখে দেখেননি। সম্রাট শাহজাহানের সময় থেকে ইরান ও অন্যান্য শিয়া অধ্যুষিত এলাকা থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে শিয়ারা আসতে শুরু করেন।

শাহ সুজা সুবাদারির আমলে বাংলায় শিয়ারা বেশ প্রভাব লাভ করে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন রাজপদ এবং ব্যবসাবাণিজ্যে তারা ব্যাপক উন্নতি লাভ করে এ সময়। বাংলার নায়েব-নাজিমরা ছিলেন শিয়ামতাবলম্বী। ফলে শিয়াদের প্রিয় স্থান হয়ে ওঠে বাংলা। আর আশুরা উৎসবের কেন্দ্রে পরিণত হয় ঢাকা।

কারণ, নাজিম-নায়েবদের বসবাস ছিলো এ শহরেই। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের লেখা থেকে জানা যায়, মোটামুটি সতের-আঠার শতকে বাংলায় শিয়াদের আর্বিভাব ঘটে এবং এ সময় থেকেই ঢাকায় জমজমাট মহররম উৎসবের আয়োজন হতে থাকে। ঊনিশ শতকের ষাট দশক পর্যন্ত এ উৎসব ঢাকার প্রধান উৎসবগুলোর জায়গা দখল করে রাখে।

প্রাচীন ঢাকার মানচিত্রে অনেকগুলো ইমামবাড়ার অস্তিত্ব দেখা যায়। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পাশে একটি ইমামবাড়া ছিলো। এটির অস্তিত্ব এখন আর নেই। তবে ঢাকার সবচেয়ে প্রাচীন ইমামবাড়াটি ফরাশগঞ্জে অবস্থিত। ইমামবাড়াটির নাম বিবি কা রওজা ইমামবাড়া। কোনো কোনো ঐতিহাসিক এটিকে ষোল শতকের ইমামবাড়া বলে দাবি করেন। তবে এ দাবির পক্ষে জুতসই কোনো প্রমাণ তারা দেখাতে পারেন না। তাছাড়া এখনকার হোসনি দালান বলে যে ইমামবাড়াটি আমাদের কাছে প্রসিদ্ধ তার নির্মাণ সময় নিয়েও ভালো রকম মতভেদ পাওয়া যায়।

১৮৫০ সালে হোসনি দালানে মহররম উৎসবের বর্ণনা দিয়ে একজন পর্যটক তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে লেখেন, মহররম উপলক্ষে হোসনি দালানে গরিব-দুঃখীদের খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হয়। হাজার হাজার মানুষ হোসনি দালানে এসে বিভিন্ন খাদ্য ও অর্থ নিয়ে এসে মানত করতে থাকে। এ সময় ইমামবাড়াকে চমৎকারভাবে সাজানো হয়। রাতে ইমামবাড়ায় অতি মূল্যবান ঝাড়বাতি জ্বালানো হয়। ইমামবাড়ার চারদিকে নানান পসরা বসে। এসব পসরায় দরকারি ও লোভনীয় সব সামগ্রী বিক্রি হয়। ইমামবাড়ায় অবস্থিত নসরত জঙ্গের কবরে হিন্দু-মুসলিম সবাই এসে সিন্নি দেয় এবং বিভিন্ন ধরনের মানত করে। আশুরার দিন তাজিয়া মিছিল বের হয়। মিছিলে হাতি-ঘোড়া, পতাকা নিয়ে ঢাকার প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে মিছিল আবার ইমামবাড়ায় ফিরে আসে।

১৮৬৬ সালে ঢাকার একটি পত্রিকায় মহররমের বর্ণনা এভাবে দেওয়া হয়- মহররম উপলক্ষে হোসনি দালানে দশ দিন পর্যন্ত মেলা বসে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানপর্ব চলতে থাকে। দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা মেলা চলে। আর সন্ধ্যার পরে হোসনি দালানে বিভিন্ন শোকগাঁথা এবং আহলেবাইতের স্মরণে সংগীত পরিবেশন করা হয়। মহররমের দিন তাজিয়া মিছিল বের হয়। সেখানে ইমাম হোসাইনের প্রতীকী লাশ এবং নানান পতাকা দেখা যায়। এ প্রতিবেদনে এও বলা হয়, স্থানীয় অনেক হিন্দুরা মহররম উৎসবে যোগ দেন এবং কেউ কেউ মুসলমানদের মত রোজাও পালন করেন।

হাকিম আহসানের বর্ণনা থেকে গত শতকের মাঝামাঝি সময়ে মহররম উদযাপন সম্পর্কে জানা যায়। তিনি লেখেন, মহররমের চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গেই হোসনি দালানে মহররম উদযাপনের প্রস্তুতি নিতে থাকে। প্রথম তিন রাত হোসনি দালানের প্রচুর পরিমাণ মোমবাতি জ্বালানো হয়। আসর জমে চতুর্থ রাত থেকে। মর্সিরা গায়করা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে মর্সিয়া গায়। একদল সুরে সুরে প্রশ্ন করে, আরেক দল সুরে সুরে সে প্রশ্নের উত্তর দেয়। এ আয়োজন দেখতে দর্শনার্থীরা হুসনি দালানের চারদিকে ভিড় জমায়। হিন্দু এবং সুন্নী মুসলমানরাও হুসনি দালানে স্বতস্ফুর্ত আসা যাওয়া করে।

পঞ্চম থেকে দশম রাত পর্যন্ত নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে চলতে থাকে মহররম উদযাপন। আশুরার দিন হাতি-ঘোড়াসহ তাজিয়া মিছিল বের হয়। এদিন আজিমপুরে মেলা বসে। এ মেলা আজো প্রচলিত আছে। তারপর তাজিয়া বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় আশুরা উৎসব।

কবি শামসুর রহমান আমার ঢাকায় ছেলেবেলায় দেখা মহররমের বর্ণনা দিয়ে বলেন, মহররমের মিছিল সবচেয়ে ভালো লাগত চকে। রাত তিনটায় মিছিল শুরু হতো। নানুর সঙ্গে অনেক আগেই এসে মিছিলের অপেক্ষায় থাকতাম। একসময় দেখতাম মিছিল শুরু হয়ে গেছে। মিছিলের ফাঁকে ফাঁকে নানান খেলা দেখানো হত। লাঠিখেলা, কাপড়ের দোলা, বিভিন্ন গান ও ফার্সী স্লোগান দিতো মিছিলকারীরা। এসব খেলা দেখে চোখ জুড়িয়ে যেতো দর্শকদের।

অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, মহররমের মূল আনুষ্ঠিকতায় তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। তবে ষাটের দশক থেকে মহররম তার যৌবন হারাতে থাকে। ঢাকায় মহররমের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো মেলা। বাংলাদেশের যেখানেই মহররম উৎসব হয় সেখানেই এ মেলা থাকে।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.