প্রধানমন্ত্রীকে অনুতপ্ত রাব্বানীর আবেগঘন চিঠি

নানা কারণে বিতর্কিত ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। বলা হচ্ছে, দুই নেতার ধারাবাহিক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বেশ ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কমিটি ভেঙে দেয়ার গুঞ্জনও উঠেছে চারদিকে। এমন বিপদের দিনে শোভন-রাব্বানীর পাশে কেউ নেই। এমন অবস্থায় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার উদ্দেশে একটি আবেগঘন চিঠি লিখেছেন।

হাতে লেখা ওই চিঠিতে নানা ঘটনার জন্য অনুতপ্ত হয়েছেন রাব্বানী। ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক লিখেন, ‘আপনি মুখ ফিরিয়ে নিলে আমাদের যাওয়ার যাবার কোনো জায়গা নেই।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মমতাময়ী নেত্রী’ সম্বোধন করে চিঠিটি ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী উল্লেখ করেন, ‘আপনি যে বিশ্বাস করে শিক্ষা-শান্তি-প্রগতির যে পবিত্র পতাকা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন, তার মর্যাদা রক্ষায় সচেষ্ট ছিলাম।’

তিনি লেখেন, ‘ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালনের শুরু থেকেই চতুর্মুখী চাপ, সদ্য সাবেকদের অসহযোগিতা, নানা ষড়যন্ত্র-প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতা আর আমাদের কিছু জ্ঞাত-অজ্ঞাত ভুল ইতিবাচক পরিবর্তনের পথকে কণ্টকাকীর্ণ করেছে। আমাদের দায়িত্বশীল আচরণের ব্যর্থতা ও কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতির বাইরেও দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, প্রিয় নেত্রী দীর্ঘদিনের সিন্ডিকেট ভেঙে আপনি পছন্দ করে দায়িত্ব দিয়েছিলেন বলে আমরা একটি বিশেষ মহলের চক্ষুশূল। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে, প্রপাগান্ডা ছড়িয়েছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। সুকৌশলে আপনার এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের কান ভারি করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।’

ছাত্রলীগের শীর্ষ এই দুই নেতা ষড়যন্ত্রের শিকার উল্লেখ করে রাব্বানী লেখেন,‘আপনার সন্তানরা এতটা খারাপ নয়। আমরা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছি বারবার। অনেক অব্যক্ত কথা রয়েছে যা আপনাকে কখনও বলার সুযোগ পাইনি। বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৃত সত্যটুকু উপস্থাপনের সুযোগ চাই।’

চিঠিতে শোভন-রাব্বানীর বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগের ব্যাখ্যা দেয়া হয়। অভিযোগ-১ উল্লেখ করে রাব্বানী লেখেন, ‘২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর নতুন পার্টি অফিস আপনার আবেগের ঠিকানায় আমাদের ঠাঁই দিয়েছেন। আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলছি, আপনার আমানতকে সযত্নে রেখেছি। অফিস অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা করা নিয়ে যে অভিযোগ দেয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দায়িত্বপ্রাপ্তরা চান না ছাত্রলীগ এখানে থাকুক। লোক দিয়ে বাইরে থেকে ময়লা ফেলে বাথরুম ও দেয়াল অপরিচ্ছন্ন করে, সেগুলোর ছবি তুলে আপনাকে দেখানো হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত বড় ভাই এবং ক্লিনারদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃত সত্য জানতে পারবেন।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলনে দেরি করে যাওয়া প্রসঙ্গটি ব্যাখ্যা করে অভিযোগ-২ উল্লেখ করে রাব্বানী লেখেন, ‘১৮ জুলাই আপনি দেশের বাইরে যাওয়ার আগে অনুমতি নিয়ে ১৯ তারিখ আম্মুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আমি এবং সভাপতি মাদারীপুর গিয়েছিলাম। সারা রাত নির্ঘুম জার্নি আর বেশ কয়েকটি পথসভা (সর্বশেষ সকাল ৮টায় সাভারে) করে সকাল ৯টায় ফিরি। রেস্ট নিয়ে পূর্বনির্ধারিত ১২টার সম্মেলনে পৌঁছাতে আমাদের ৪০ মিনিট দেরি হয়। যা অনিচ্ছাকৃত এবং অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মাননী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পূর্বেই অবগত। সকালে ঘুম থেকে দেরিতে ওঠার বিষয়টিও অতিরঞ্জিত।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘চাঁদা দাবি’ বিষয়ে তৃতীয় অভিযোগের ব্যাখ্যা দিয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখেন, ‘বিষয়টি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।’

চিঠির শেষের দিকে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক লেখেন, ‘সবকিছুর পরেও আমাদের জ্ঞাত-অজ্ঞাত ভুলগুলোর জন্য অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী। আপনি বঙ্গবন্ধুকন্যা, মানবতার মা...। নিজ বদান্যতায় আমাদের ক্ষমা করে ভুলগুলো শুধরে আপনার আস্থার প্রতিদান দেয়ার সুযোগটুকু দিন। আপনি মুখ ফিরিয়ে নিলে যাবার কোনো জায়গা নেই।’

চিঠির শেষে রাব্বানী লেখেন,‘আপনার স্নেহের রাব্বানী’।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ইতোমধ্যে নেত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা চেষ্টা করছেন নেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়ে দিতে। আশা করছি, নেত্রীর সঙ্গে দেখা করে সব বিষয় যদি খুলে বলতে পারি তাহলে তিনি আমাদের ক্ষমা করবেন।’

২০১৮ সালে বছরের ১১ ও ১২ মে কোন নির্বাচন ছাড়াই ছাত্রলীগের ২ দিনব্যাপী ২৯তম জাতীয় সম্মেলন শেষ হয়। এরপর ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করেন।