আপনি পড়ছেন

উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় কুর্দি গেরিলাদের বিরুদ্ধে তুর্কি অভিযানকে কেন্দ্র করে সেখানকার পরিস্থিতি আরো জটিলতার দিকে যাচ্ছে। কুর্দিদের সঙ্গে সিরিয়া সরকারের চুক্তির পর সেখানে প্রবেশ করেছে সরকারি সেনারা। অন্যদিকে, সিরীয় সেনাদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী।

syra soldiersসিরীয় সেনারা কুর্দি শহরে প্রবেশ করলে তাদের স্বাগত জানানো হয়। ছবি: ওয়াশিংটন পোস্ট

গত বুধবার উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় কুর্দি গেরিলাদের (ওয়াইপিজি) বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করে তুর্কি বাহিনী। ইতোমধ্যে কুর্দিদের দখলে থাকা একটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তুর্কি বাহিনী।

তুরস্কের এই সামরিক অভিযান নিয়ে ইতোমধ্যে সমালোচনা শুরু হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইঙ্গিতে ওই অঞ্চলে থাকা আমেরিকান সেনারা সরে যাওয়ার পরই অভিযান শুরু করে আঙ্কারা। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের পর নিজ দেশে সমালোচনার মুখে পড়েছেন ট্রাম্প। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী তুরস্কের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

অন্যদিকে, নরওয়ে, ফ্রান্স ও জার্মানির মতো ইউরোপের কয়েকটি দেশ তুরস্কের কাছে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও তুরস্কের অভিযানের সমালোচনা করে ব্যাপক মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

কিন্তু এতো কিছু পরও অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে তুরস্ক। গতকাল রোববারও তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ান বলেছেন, ইউরোপের সমালোচনা সত্ত্বেও অভিযান অব্যাহত থাকবে।

প্রসঙ্গত, সিরিয়ার ওয়াইপিজি গেরিলাদের সঙ্গে তুরস্কে নিষিদ্ধঘোষিত কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ আঙ্কারার। পিকেকে ও ওয়াইপিজি গেরিলাদের রাষ্ট্রের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে তুরস্ক। এ জন্য দীর্ঘদিন ধরে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর অবশেষে অভিযানে নেমেছে আঙ্কারা।

এদিকে, বিগত কয়েক বছর যাবত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে মার্কিন বাহিনীর সহায়তায় লড়াই চালিয়েছে ওয়াইপিজি তথা কুর্দি গেরিলারা। এমনকি তারা আমেরিকার কথিত আইএসবিরোধী অভিযানেও সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছে বলে দাবি করা হয়।

কিন্তু সেই আমেরিকাই কয়েক দিন আগে তুরস্ককে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর সবুজ সংকেত দিলে বেকায়দায় পড়ে কুর্দিরা। ট্রাম্পের ওই পদক্ষেপকে তারা ‘পিঠে ছুরি মারা’ হিসেবে অভিহিত করে।

এমনই প্রেক্ষাপটে কোনো উপায় না দেখে এতোদিন যে আসাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে কুর্দিরা সেই সিরীয় সরকারের সঙ্গেই গতকাল রোববার চুক্তি করে তারা।

সর্বশেষ খবরে বলা হচ্ছে, কুর্দি গেরিলাদের সঙ্গে চুক্তির পর সিরিয়ার সরকারি সেনারা তিনটি শহরে প্রবেশ করেছে। শহরগুলো হচ্ছে- তাবকা, ইসা আইন এবং তাল-তামার।

সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সানা বলছে, কুর্দিদের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে তাতে এসব এলাকায় সরকারি সেনা মোতায়েনের কথা রয়েছে। তারই অংশ হিসেবে সেনাদের ওইসব শহরে পাঠানো হয়েছে।

ইরানি গণমাধ্যম বলছে, রাকা শহরের কাছে অবস্থিত তাবকা শহরে সিরিয়ার সেনা পাঠানো হয় আজ সোমবার। ওই এলাকায় সিরিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে। দীর্ঘদিন পর এই এলাকায় সিরিয়ার সেনারা প্রবেশ করলো।

সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা গেছে, আইন ইসা শহরে সিরিয়ার সরকারি সেনারা প্রবেশ করার পর সেখানকার বাসিন্দারা তাদেরকে স্বাগত জানাচ্ছে।

অন্যদিকে, তাল-তামার শহরে সিরিয়ার সেনারা প্রবেশ করলে সেখানকার জনগণ তাদেরকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায়। তাল-তামার শহরের ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে রাস আল-আইন শহর অবস্থিত। এ শহরটি বর্তমানে তুর্কি সেনাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শহরটির কৌশলগত গুরুত্ব অনেক বেশি।

উল্লেখ্য, এসব এলাকাতেই এতো দিন মার্কিন সেনা মোতায়েন ছিল। তুর্কি অভিযানের ব্যাপারে ট্রাম্পের সবুজ সংকেতের পর পরই ওইসব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা হয়।

এদিকে, কুর্দিদের সঙ্গে করা চুক্তি অনুসারে সিরিয়ার সরকারি সেনারা যখন উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রওনা দেয় তখন তাদের লক্ষ্য করে মার্কিন জঙ্গিবিমান থেকে হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সিরীয় সেনারা যাতে ওই অঞ্চলে পৌঁছাতে না পারে সেজন্যই এই বিমান হামলা বলে মনে করা হচ্ছে।

এমতাবস্থায় উত্তর সিরিয়ায় তুর্কি অভিযানকে কেন্দ্র করে সেখানকার পরিস্থিতি জটিলতার দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যদিও আসাদের অন্যতম সমর্থক, রক্ষক বললেও অত্যুক্তি হবে না, ইরান ও রাশিয়া এখনও এ ব্যাপারে ঝেড়ে কাশেনি। অবশ্য তেহরান অভিযানের পরিণাম ভালো হবে না বলে সতর্ক করেছে আঙ্কারাকে।

তবে কুর্দিবিরোধী এই অভিযান শুরুর আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। সেই সব বৈঠকে অভিযান চালানোর ব্যাপারে কী ধরনের আলোচনা হয়েছে তা প্রকাশ করা হয়নি।

যাই হোক, তুর্কি অভিযানকে কেন্দ্র করে কুর্দিদের সঙ্গে সিরীয় সরকারের চুক্তি এবং সিরীয় সেনাদের লক্ষ্য করে মার্কিন বিমান হামলা পরিস্থিতিকে যে জটিল করে তুলছে তা বলা যেতেই পারে। কারণ সিরীয় সেনাদের ওপর মার্কিন হামলা কোনোভাবেই মেনে নেবে না ইরান ও রাশিয়া। তারাও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। ফলে সিরিয়া পরিস্থিতি আবার কোন দিকে যাচ্ছে তা জানার জন্য আরো কয়েক দিন লাগতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.