প্রজনন মৌসুমের কারণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর ইলিশের বাড়ি খ্যাত চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ডিমওয়ালা মা ইলিশ ধরা পড়ছে। ইলিশ ব্যবসায়ী ও পরিবহন শ্রমিকরা বলেন, ঘাটে প্রচুর মা ইলিশ আমদানি হচ্ছে, কিন্তু এর মধ্যে ৯০ শতাংশের পেটেই ডিম রয়েছে। মাত্র ১০ শতাংশ ডিম ছাড়া ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে।

egg hilishaডিমওয়ালা ইলিশ

গত ৩১ অক্টোবর থেকেই চাঁদপুরের বড় রেল স্টেশন, মাছঘাটসহ নদী তীরবর্তী মাছের আড়তগুলো ডিমওয়ালা ইলিশে সয়লাব হয়ে গেছে। এসব আড়তের প্রচুর পরিমাণ মাছ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন দূরবর্তী এলাকায় ট্রাকে করে প্রতিদিনই চালান হচ্ছে বলে জানান ইলিশ ব্যবসায়ী ও পরিবহন শ্রমিকরা।

দামের বিষয়ে ব্যবসায়ীরা জানান, ইলিশ মাছের সরবরাহ বেশি থাকায় দাম কিছুটা কম। এক কেজি ওজনের মা ইলিশের দাম ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। এক কেজির নিচে মা ইলিশ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে বড় স্টেশন মাছঘাটে। আবার ১০ শতাংশ ডিমছাড়া ইলিশের দামও বেশি না।

বুধবার বিভিন্ন মাছঘাট ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় ১০০০ মণ ইলিশ জেলার বৃহত্তম মাছ ঘাটে ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে করে এসেছে ভোলা, হাতিয়া, সন্দীপ, চরফ্যাশন থেকে। তবে এখানে পদ্মা নদীর মাছই বেশি, ৯০ শতাংশ ডিমওয়ালা মাছ। স্থানীয় মানুষজন বলছে, ডিমওয়ালা ইলিশের স্বাদ কম। এক কেজি ওজনের বেশি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায়।

egg hilisha pacডিমওয়ালা ইলিশ

অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী- নুরুল ইসলাম বকাউল, মফিজুর রহমান, দেলোয়ার হোসেন, ইসমাইল, ইউনুছ মনে করেন, ইলিশের প্রজনন রক্ষা করা না গেলে ইলিশের বংশ বিস্তার বিনষ্ট হবে। এভাবে ডিমওয়ালা বা মা ইলিশ মাছ ধরা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এদেশ থেকে জাতীয় মাছ ইলিশ বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই ইলিশের এ প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার সময় আরও ১০/১২ দিন বাড়িয়ে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত করা উচিৎ ছিল। তাহলে লাখ লাখ ইলিশ ডিম ছাড়ার সময় পেতো ।

এ বিষয়ে চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. শবেবরাত সরকার বলেন, ‘মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের মেয়াদ শেষে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ ইলিশ ঘাটে আসছে তাদের পেটে ডিম আর ডিম । জাতীয় স্বার্থে ২২ দিনের অভিযান আরও ১০ দিন বাড়িয়ে দিলে ভালো হতো।’

কিন্তু জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুল বাকি দাবি করেন, এবার মা ইলিশ রক্ষা অভিযান সফল হয়েছে। এ কারণেই নদী বা সাগরে জেলেরা এখন প্রচুর সংখ্যক ইলিশ ধরতে পারছেন। ইলিশ গবেষকদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ৮০ ভাগ ইলিশই ডিম ছেড়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিশিষ্ট ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান বলেন, আমরা আরও কিছু দিন এ বিষয়ে গবেষণা চালাবো। এরপর বলতে পারবো কত ভাগ মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে।

জানা যায়, বর্তমানে চলছে ইলিশ প্রজননের ভরা মৌসুম। এ সময় ইলিশ মাছ ডিম ছাড়ার জন্য সমুদ্র থেকে নদীতে ওঠে আসে। স্রোতের বিপরীতে ইলিশ চলতে থাকে, মিঠাপানিতে আসে এবং ডিম ছেড়ে বংশ বৃদ্ধি করে। প্রজনন মৌসুম হিসেবে ইলিশের বংশ বৃদ্ধির জন্যে গত ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন অভয়াশ্রমে মা ইলিশ ধরা, পরিবহন করা এবং বিক্রি করা নিষিদ্ধ করে সরকার। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই সময়ের মধ্যে মা ইলিশ নদীতে ডিম ছাড়া শেষ করতে পারেনি। ফলে এ নিষেধাজ্ঞা ওঠে যাবার পর চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনার জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ডিমওয়ালা মা ইলিশ ধরা পড়ছে। এছাড়া নিষেধাজ্ঞার সময়েও প্রচুর মা ইলিশ ধরা হয়।

সরকারের ইলিশ রক্ষার পদক্ষেপ কঠোর থাকলেও অনেক জেলেরা আইন অমান্য করে ইলিশ শিকার করে। নিষেধাজ্ঞার সময়ে এবার যে পরিমাণ ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা হয়েছে, তাতে হাজার হাজার টন ইলিশের বংশবিস্তার বিনষ্ট হয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, এবার নদীতে জাল ফেললেই ধরা পড়েছে চকচকে রূপালি ইলিশ। এসব মাছ আরও ১০দিন নদীতে থাকলেই ডিম ছাড়তো। এর ফলে বৃদ্ধি পেত হাজার হাজার মণ ইলিশ। ফলে ইলিশের এ প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞার সময় বাড়িয়ে কমপক্ষে এক মাস বা ৩২ দিন করা দরকার বলে মনে করছেন অনেকে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.