চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছেন, কিন্তু রাতারাতিই তো আর প্রতিষেধক চলে আসে না। প্রশ্ন হলো, ততদিন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যুই মানুষের নিয়তি? মোটেও তা নয়, গবেষকরা বলছেন, এই সময়ে আশার আলো দেখাতে পারে প্লাজমা থেরাপি। সীমিত আকারে হলেও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ এই থেরাপি দিয়ে সাফল্য পেয়েছে।

plazma therapy

প্লাজমা থেরাপি নতুন কোনো বিষয় নয়। যুগ যুগ ধরে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর ব্যবহার চলে আসছে। ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর যারা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তাদের রক্তে একটা এন্টিবডি তৈরি হয়। সেই এন্ডিবডি ব্যবহার করে একই ভাইরাসে আক্রান্ত অন্য রোগীকে সুস্থ করে তোলা যায়। বেশ কার্যকরী এই পদ্ধতির পুরো নাম ‘কনভালেসেন্ট প্লাজমা থেরাপি’।

এই পদ্ধতিতে করোনাভাইরাসকে সম্পূর্ণরূপে জয় করা কোনো মানুষের শরীরের রক্ত সংগ্রহ করা হয়। তারপর সেই রক্ত সঞ্চালিত করা হয় একই ধরনের ভাইরাল সংক্রমণের শিকার রোগীর দেহে। চীনে এমনটা করা হয়েছে, শতভাগ না হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাফল্য পেয়েছেন তারা। তবে এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষে করতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।

কনভালেসেন্ট প্লাজমা পদ্ধতি নিয়ে যারা বিশ্বব্যাপী গবেষণা করছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম একজন যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসাবিজ্ঞানী ড. লুইস কাটজ। তিনি বলেন, ‘এই পদ্ধতি বেশ উপকারী হতে পারে সেরকম ঐতিহাসিক নজির আমাদের কাছে আছে। করোনার বেলায়ও আমরা এই বিষয়টা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত যে তথ্য-উপাত্ত আছে তাতে আমার কাছে মনে হয়, এই পদ্ধতি অনেক কার্যকর ও নিরাপদ। তবে সেটা সম্পূর্ণভাবে বলার জন্য এখনো কিছু প্রক্রিয়া বাকি আছে।’

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, অতীতে এই পদ্ধতিতে সুরক্ষা পাওয়ার প্রমাণ আছে। এর ব্যাপারে আমরাও আশাবাদী। পদ্ধতিটির প্রয়োগ নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। তবে বিষয়টা নিয়ে আরো ভালোভাবে বলতে পারতাম যদি চীনে ইতোমধ্যে এই পদ্ধতি কার্যকর করা রিপোর্টগুলো আমরা হাতে পেতাম।

চলতি মাসের শুরুতেই করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে প্লাজমা পদ্ধতি প্রয়োগ করার ঘোষণা দেয় দক্ষিণ কোরিয়া। ইতোমধ্যে সীমিত আকারে প্রয়োগ ঘটিয়ে সাফল্য পেয়েছে চীন। সাফল্য পাওয়ার বেশ কয়েকটি উদাহরণ আছে যুক্তরাষ্ট্রেও। গত মাসের শেষদিকে ইরানও এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা শুরু করেছে।

কোনো ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিষেধক আবিষ্কার হওয়ার আগ পর্যন্ত এটা অনেকটা আপৎকালীন পদ্ধতি। গত শতাব্দীর শুরুতে স্প্যানিশ ফ্লু যখন ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ে তখন প্রথমবারের মতো এই পদ্ধতির সুফল পায় চিকিৎসকরা। এরপর ১৯৩০ সালে হামের চিকিৎসায়ও এই পদ্ধতি কাজে লাগানো হয়েছিল। এছাড়া নিকট অতীতে ইবোলা এবং সার্সের ক্ষেত্রেও এটা বেশ কাজে দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ইয়ান লিপিকিন বলেন, ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত এটি সহজ ও কার্যকর পদ্ধতি। কিন্তু সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের তো এগিয়ে আসতে হবে। দুঃখজনক হল, অনেকেই সে ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করছেন। এই পদ্ধতির সুবিধাটা হল, একজনের প্লাজমায় তিনজনের চিকিৎসা সম্ভব।

Get the latest news on lifestyle, health, food, and more from our team of expert writers. From fitness tips and nutrition advice to travel guides and entertainment news, we cover the topics that matter most to you. Whether you're looking to improve your health, broaden your horizons, or just stay up-to-date with the latest trends, you'll find everything you need here.