সফল তাইওয়ান, কৌশল জানতে আগ্রহী অন্যান্যরা

মরণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দমাতে হিমশিম খাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার। এর বিপরীত চিত্র দেখা গেল তাইওয়ানে। তারা সংক্রমণের মাত্রা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। যার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের প্রশংসা করার পাশাপাশি জানতে চাচ্ছে, মহামারির বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে তারা কীভাবে জয়ী হল।

তাইওয়ানের একটি রেলস্টেশনের দৃশ্য

গত জানুয়ারি মাসের কথা, দুই কোটি ৩০ লাখ মানুষের এই দ্বীপ রাষ্ট্র চীন থেকে কাউকে সেখানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এরপর সামুদ্রিক বন্দরগুলোতে জাহাজ নোঙর করার ওপরও দেয়া হয় নিষেধাজ্ঞা। সেইসঙ্গে বাড়িয়ে দেয়া হয় মাস্কের উৎপাদন।

জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গতকাল শনিবার পর্যন্ত দেশটিতে ৪৪০ জনের দেহে ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। মারা গেছেন সাত জন।

মরণঘাতী এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কীভাবে তাইওয়ান সফল হল তা অনেকেই জানতে চায়। এই তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং নিউজিল্যান্ডের মত দেশও আছে। তারা তাইওয়ানকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য করে নিতে বেশ আগ্রহী। কিন্তু এ বিষয়টি মোটেও ভালো ঠেকছে না বেইজিংয়ের। কারণ দীর্ঘদিন ধরে এই দ্বীপরাষ্ট্রটিতে নিজেদের অধ্যুষিত এলাকা বলে দাবি করে আসছে চীন। অন্য কোনো দেশ তাইওয়ানের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক অথবা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইলে তাদের এড়িয়ে চলে চীন।

তাইওয়ানের মানচিত্র

এসব কারণে বিশ্বের বড় কোনো আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেনি দেশটি। তবে করোনার প্রাদুর্ভাব দমন করে সবার নজরে এসেছে তারা। এবার বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র চাইছে তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য হয়ে যাক।

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট তিসাই ইং-ওয়েন এক টুইটে বলেন, আমরা অনানুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। আমরা তাদের করোনার প্রাদুর্ভাব মোকাবেলা করতে সহায়তা করবো।

‘তাইওয়ান ক্যান হেল্প’- এই স্লোগানে তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে সহায়তা করার কথা বলছে। স্লোগানটি বেশ সাড়া ফেলেছে। গত মাসে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও ক্যারেবিয়ান দ্বীপের ১৫টি রাষ্ট্রে তারা এক কোটি মাস্ক সরবরাহ করবে। সেইসঙ্গে বিভিন্ন মেডিকেল সামগ্রী সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে দেশটি।

গত মার্চে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ প্রচেষ্টায় করোনাভাইরাস মোকাবেলা করার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। এছাড়া টেস্ট কিট, ভ্যাকসিন, ভাইরাস চিহ্নিত করতে উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবনে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের এই মহামারিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে চীনের কর্তৃত্ববাদ থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন একটি রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চাইছে তাইওয়ান। এইজন্যে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতাকেও তারা কাজে লাগাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রও তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারে বেশ তৎপর ভূমিকা পালন করছে তাইওয়ানকে সাহায্য করার জন্য।