‘স্টে হোম, স্টে সেফ, সেভ লাইভস’ যুক্তরাষ্ট্রের এই স্লোগান বৈশ্বিকভাবে সমাদৃত হয়েছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে দেয়া আলকডাউন কার্যকর করতেই এই স্লোগানের উৎপত্তি। কিন্তু যারা নিজ বাড়িতেই নির্যাতনের শিকার হন তাদের কথা কী ভাবা হচ্ছে? গৃহবন্দী থাকলে তাদের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে যায়। যা করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি থেকেও বেশি মারাত্মক হয়ে দাঁড়ায়। এরকম পরিস্থিতিতে একজন মানুষকে ঠিক কি করতে হবে তার পরামর্শ দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের জাতীয় সাস্থ্য সেবার চিকিৎসক ডাক্তার পুনাম কৃষনান।

dr punam krishnanডাক্তার পুনাম কৃষনান

বিশ্বব্যাপী এই লকডাউনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া অনুভব করেছে অধিকাংশ রাষ্ট্র। অনেকের কাছেই বিষয়টি আশীর্বাদ হিসেবে উপস্থিত হয়েছে, আবার অনেকের কাছেই অভিশাপ। কিছু সংখ্যক মানুষের কাছে এই লকডাউন সর্বোচ্চ পরিমাণ দুঃসময় ছাড়া অন্যকিছু নয়।

আল-জাজিরার বরাতে জানা যায়, লকডাউন চলার সময় যুক্তরাজ্যে গৃহনির্যাতন সংক্রান্ত ফোনের পরিমাণ ৪৯ শতাংশ বেড়ে গেছে। ইউরোপের অন্যান্য দেশেও একই অবস্থা লক্ষ্য করা গেছে। ফ্রান্সে ৩০ শতাংশ, স্পেনে ১৮ শতাংশ, চীনের উহানে লকডাউনের প্রথমদিকে গৃহনির্যাতনের পরিমাণ ৩০০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানা গেছে।

ডাক্তার পুনাম কৃষনান বলেন, আমি অনেক গৃহনির্যাতনের শিকার মানুষকে দেখেছি। এই কারণে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিতে অনেককেই দেখেছি আমি। এ বিষয়ে আসলে কোনো চিকিৎসাও নেই। তবে মনস্তাত্বিক অনেক বিষয় আছে যা থেরাপির মতো কাজ করে।

নির্যাতন সবসময় শারীরিক হয় না। এই পৃথিবিতে যুগে যুগে মানুষ বিভিন্ন উপায়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে যৌন নির্যাতন, ইমোশনাল নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন, আর্থিক নির্যাতন, পরনিন্দা।

যারা এসবের ভুক্তোভূগী তারা বেশ ঝুঁকিতে থাকে। তারা বেশিরভাগ সময়েই প্রিয়জন, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধুদের মাধ্যমেই এসব নির্যাতনের স্বীকার হয়ে থাকেন। তবে পরিমিত যত্ন ও পরিচর্যা করে তাদের এই মানসিক যন্ত্রণা থেকে বের করে আনা সম্ভব। এর জন্য আপনার ডাক্তার হওয়ার দরকার নেই। নির্যাতিতদের মনোভাব বুঝে সে অনুযায়ী তাদের সঙ্গে কথা বললেই সমস্যার অনেকটুক সমাধান হয়ে যায়।

লকডাউনের কারণে মানুষ বাধ্য হয়েছে ঘরে বন্দী অবস্থায় থাকতে। সময়ের সঙ্গে এর প্রভাব মানুষের চিন্তা চেতনায় পড়তে শুরু করে। কারণ বেশিরভাগই এই ধরনের জীবনযাপনের সঙ্গে পরিচিত নয়।

যুক্তরাজ্যে প্রথমে স্কুল বন্ধ করা হয়। কিন্তু যারা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত তাদের জন্য স্কুল খুলে রাখা অত্যাবশ্যকীয় ছিল। এতে করে তারা নিরাপদ অনুভব করতে পারতো।

ডাক্তার কৃষনান বলেন, সরকারি হিসেবে যেসব শিশু মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত তাদের সবার সঙ্গে আমাদের সংস্থা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ করা হয়েছে।

তবে প্রাপ্ত বয়স্করা পড়েছেন বিপদে। কারণ তাদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ কথা বলাটা অনেক কার্যকরী ভিডিও কনফারেন্স থেকে। তাছাড়া অনেক সময় তাদের থেকে সঠিক কারণ বলে বের করানো যায় না। তাই অনলাইন সিস্টেম তাদের সেবায় খুব বেশি কাজে দেয় না। সামনাসামনি থাকলে একজন মনোবিদ ভুক্তোভূগীর কাছ থেকে যেভাবেই হোক আসল কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে পারতেন।

লকডাউনের সময় এসব কর্মকাণ্ডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আশঙ্কার পরিমাণ বেড়ে গেছে। শুধু যে নারী ও শিশুরাই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বিষয়টি এমন না। আমাদের এখানে অনেক পুরুষও ফোন দিয়েছেন। লকডাউনের প্রথম সপ্তাহে তাদের ফোনের পরিমান সাধারণ সময় থেকে ৩৫ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল।

আমরা কিছু বয়স্ক মানুষের ফোনও পেয়েছি। তাদের বেশিরভাগ ফোনই ছিলো সাহায্যের জন্য। খুব কমই ছিলো নির্যাতন কেন্দ্রিক। হয়তো ভুল করেই তারা ফোন দিয়েছিলেন।

গত কয়েক সপ্তাহে কিশোর-কিশোরীদের ফোনের পরিমাণ বেড়ে গেছে। যাদের অধিকাংশই ঘরের বাইরে যেতে চাইছে, কিন্তু মা-বাবা অনুমতি দিচ্ছে না। এতে বাকবিতণ্ডাও হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের সরকারও বিষয়টি আন্দাজ করতে পেরে নজরদারি শুরু করেছে। সরকার থেকে হেল্প লাইনগুলোতে অনুদান বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে আরো কিছু অনলাইন পরিষেবা দেয়া হচ্ছে। সরকার থেকে বলা হচ্ছে, নির্যাতনের শিকারদের আরো সহজ উপায়ে হেল্পলাইনে যোগাযোগ করার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে সরকার।

এই লকডাউন আমাদের সবার পরীক্ষা নিচ্ছে। আমাদের হতাশার মাত্রাকে নিয়ে গেছে অন্য মাত্রায়। কিন্তু তাই বলে এমন অযুহাতে কেউ অন্যের ক্ষতি করতে পারে না। নিজের ব্যাক্তিগত স্থানে সবাইকে নিরাপদ থাকতে হবে। আমাদের সবার একক প্রচেষ্টায় এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে পারবো এবং নির্যাতিতদের সাহায্য করতে পারবো।

Get the latest news on lifestyle, health, food, and more from our team of expert writers. From fitness tips and nutrition advice to travel guides and entertainment news, we cover the topics that matter most to you. Whether you're looking to improve your health, broaden your horizons, or just stay up-to-date with the latest trends, you'll find everything you need here.