আপনি পড়ছেন

সিকিম ও লাদাখ সীমান্তে চীন ও ভারতের সেনা সমাবেশকে কেন্দ্র করে অনেকটা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যেকোনো সময় দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে। ২০১৭ সালের ডোকলাম পরিস্থিতির পর নতুন করে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে।

tension between india china borderচীন-ভারত সীমান্তে বাড়ছে উত্তেজনা, সেনা সমাবেশ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেভাবে দিনকে দিন পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে, তাতে উভয়পক্ষ থেকে তড়িঘড়ি কোনো সমঝোতায় পৌঁছতে না পারলে রণক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে প্যাংগং সো, গালওয়ান উপত্যকা তথা ভারত-চীনের মধ্যকার ৩ হাজার ৪৪৮ কিলোমিটারের নিয়ন্ত্রণরেখা।

সেনা সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, নয়াদিল্লির জন্য সবচেয়ে উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে এ কারণে যে, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চীনা সেনার উপস্থিতি ও সংখ্যাবৃদ্ধি। এটি সবচেয়ে বেশি হয়েছে গালওয়ান উপত্যকায়। এখানকার ওল্ডি রোডে চলতি মাসের গোড়া থেকেই সেনা সমাবেশ করতে শুরু করে চীন। এ ছাড়া দারবুক, শায়ক ও দৌলত বেগে গত তিন সপ্তাহ ধরে বাড়ানো হয়েছে চীনা সেনা। সেইসঙ্গে ভারতীয় চৌকি ‘কেএম-১২০’-র আশপাশে চীনা সেনার সমাবেশ দেখা গেছে।

সাবেক নর্দার্ন আর্মি কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডি এস হুডা আনন্দবাজারকে বলেছেন, এটা খুবই উদ্বেগের ঘটনা। এর আগেও নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করে ভারতে ঢুকেছে চীনা সেনারা। কিন্তু এবার যেভাবে চীন সেনা সমাবেশ ও অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়েছে তা সত্যিই অভূতপূর্ব।

তিনি আরো জানিয়েছেন, সবচেয়ে বেশি উদ্বেগজনক বিষয় হলো- গালওয়ানে চীনা সেনাদের সমাবেশ। কারণ ভারত ও চীনের মধ্যে এই এলাকাটি নিয়ে এর আগে কোনো দিনই বিরোধ ছিল না।

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ অশোক কে কণ্ঠও প্রায় একই রকম কথা বলেছেন। তিনিও বলছেন, এর আগেও চীনা সেনারা বহুবার এই এলাকায় ঢুকে পড়েছে। কিন্তু এবারের ঘটনাটা আগের সব ঘটনা থেকে আলাদা। আর সেটাই হলো উদ্বেগের মূল কারণ।

কেন এই যুদ্ধাবস্থা?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আকসাই চীন নিয়ে বেইজিংয়ের দাবি পুরনো বিষয়। যেমনটা অরুণাচল প্রদেশের বেশ কিছু এলাকা নিজেদের বলে দাবি করে আসছে চীন। কিন্তু এবার চীনের বেশি উদ্বেগের বিষয় হলো গিলগিট-বাল্টিস্তান নিয়ে। কারণ এই অঞ্চলের ওপর দিয়েই অর্থনৈতিক করিডর নির্মাণ করছে চীন ও পাকিস্তান।

এ ছাড়া ঘনিষ্ঠ দুই দেশের এই অর্থনৈতিক করিডরও পড়েছে লাদাখ অঞ্চলেও। কিন্তু সম্প্রতি ভারতের মোদি সরকার সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু-কাশ্মির রাজ্যকে ভেঙে জম্মু, কাশ্মির ও লাদাখ- এই তিনটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করে। তার পর থেকেই ওই অঞ্চল নিয়ে চীনের উদ্বেগ অনেক বেড়েছে। এর আগে লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করায় তার কড়া প্রতিবাদও জানিয়েছে বেইজিং।

কিরগিজস্তানে নিযুক্ত প্রাক্তন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পি স্তোবদান আনন্দবাজারকে বলেন, ভারত মহাসাগরে নিজের সামরিক প্রভুত্ব গড়ে তুলতেই চীন পাকিস্তানকে সঙ্গে নিয়ে অর্থনৈতিক করিডর বানাচ্ছে। আর সে কারণেই লাদাখকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় চীন। স্বাভাবিক কারণেই দেশটি এবার যেকোনোভাবে লাদাখে ঢুকে পড়তে চাইছে।

ভারতীয় সেনা সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্যাংগং সো, ডেমচক ও দৌলত বেগের পরিস্থিতিও এখন একই রকম। গত দুই সপ্তাহে গালওয়ান উপত্যকায় চীনা সেনাবাহিনী শতাধিক তাঁবু স্থাপন করেছে। অবস্থায় এমন যে, যেকোনো সময় ভারত ও চীনা সেনারা মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে পারে।

জানা গেছে, মূলত গত ৫ মে উত্তেজনার সূত্রপাত। ওই দিন পূর্ব লাদাখে চীন ও ভারতের আড়াই শতাধিক সেনা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। যা পরের দিন পর্যন্ত গড়ায়। পরে সীমান্ত বৈঠকের পর কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু এর তিন দিনের মাথায় গত ৯ মে উত্তর সিকিমে ফের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে উভয় দেশের শতাধিক সেনা।

এ সময় চীনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ভারতীয় সেনারা তাদের এলাকায় ঢুকে পড়েছিল। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বেইজিংয়ের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন।

সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত বছরের ৫ আগস্ট ভারত সরকার সংবিধানের ৭০ ধারা বাতিল বাতিল করে যখন জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়, তখন থেকেই বেইজিং তাদের কৌশলগত অবস্থান নিয়ে জোরালোভাবে চিন্তাভাবনা শুরু করে।

প্রত্যাহারের পরেই আকসাই চিন সম্পর্কে প্রথম লাল সঙ্কেত পেয়েছিল বেজিং, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মন্তব্যে। তখন থেকেই নিজেদের ঘুঁটি সাজানো শুরু করেছিল তারা। মাঝে করোনাভাইরাসের কারণে নজর কিছুটা ভিন্নমুখী হলেও পরিস্থিতি সামলে নেওয়ায় আবারো সীমান্তে প্রস্তুত করা হচ্ছে কমিউনিস্ট বাহিনীকে।

কাশ্মির ইস্যুতে উল্লিখিত সিদ্ধান্তের পর ভারতীয় পার্লামেন্টে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, পাক অধিকৃত কাশ্মির ও আকসাই চীনও ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ওই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইং। আইন সংশোধনের নামে ভারত চীনের আঞ্চলিক সার্বভৌমত্ব খাটো করার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

ওই ঘটনার পর বিগত কয়েক মাসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল একাধিকবার ওই অঞ্চল পরিদর্শন করেন। এর মাধ্যমে তারা হয়তো চীনকে বোঝাতে চেষ্টা করেছেন যে, জম্মু-কাশ্মির নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা একান্তই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু চীন যে বিষয়টি ভালোভাবে গ্রহণ করেনি, সর্বশেষ পরিস্থিতি তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, ভারত-নেপাল সীমান্তে লিপুলেখ গিরিপথে রাস্তা তৈরি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। নয়াদিল্লি অভিযোগ করেছে, চীন ভারতের বিরুদ্ধে নেপালকে উস্কে দিচ্ছে। যদিও বেইজিং সে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.