করোনার সংক্রমণ ‘ঠেকাবে ফ্যাবি-ফ্লু’!

যেসব করোনারোগীর মৃদু উপসর্গ রয়েছে সেসব রোগীদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে ৮৮ শতাংশ সফলতা পাওয়া গেছে- এমন একটি ওষুধ হলো ফ্যাবি-ফ্লু। আশা করা হচ্ছে, এই ওষুধের মাধ্যমে চলমান করোনা সংকটকে থামিয়ে দেওয়া যেতে পারে। তবে ওষুধটির সর্বশেষ এবং গুরুত্বপূর্ণ ধাপের ট্রায়াল এখনো বাকি আছে। এ জন্য ওষুধটি নিয়ে এখনই বেশি আশাবাদী না হওয়ার পরামর্শও দিচ্ছেন কেউ কেউ।

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে আশা দেখাচ্ছে ফ্যাবি ফ্লু

ভারতের মুম্বাইভিত্তিক ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা গ্লেনমার্ক ফার্মাসিউটিক্যালসের মাধ্যমে বাজারজাত হচ্ছে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ ফ্যাবি-ফ্লু। সম্প্রতি দেশটির ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই) ওষুধ তৈরি ও বিক্রির ছাড়পত্রও দিয়েছে।

বলা হচ্ছে, সাধারণত মৃদু থেকে মাঝারি উপসর্গের করোনারোগীদের জন্যই এই ওষুধটি ব্যবহৃত হবে। ডিসিজিআইয়ের দাবি, এই ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে ৮৮ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে ওষুধটি। ওষুধটি প্রস্তুতকারী সংস্থা গ্লেনমার্ক বলছে, কো-মর্বিডিটির রোগীদের ক্ষেত্রেও ওষুধটি দারুণ কার্যকর।

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে আশা দেখাচ্ছে ফ্যাবি ফ্লু

এ ব্যাপারে ভারতের মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের ফার্মাকোলজির অধ্যাপক ও গবেষক তন্ময় বিশ্বাস বলছেন, যেকোনো একটি ড্রাগের চার দফা ট্রায়াল চলে। ফ্যাবি-ফ্লু-র ক্ষেত্রে মাত্র তিন দফা ট্রায়াল শেষ হয়েছে। পোস্ট মার্কেটিং তথা বাজারজাতকরণের ধাপ এখনও বাকি। এর আগে বহু ড্রাগই তিন দফায় ভাল কাজ করেছে, কিন্তু বাজারজাতকরণের পর আবার নিষিদ্ধও হয়েছে।

তিনি বলছেন, তবে এই ফ্যাবি ফ্লুর তিন দফা ট্রায়ালের ফল তুলনামূলক ভাবে ভাল। এই গ্রুপের ড্রাগ ফ্লুয়ের মাহামারির সময় ব্যবহার করা হয়েছিল। তাতে ভাল ফলাফল পাওয়া গেছে। এই ওষুধটিও ভাইরাসের আরএনএ-কে প্রতিরূপ তৈরিতে বাধা দেয়। সুতরাং ফ্লু ভাইরাসকে দমন করার সব গুণই এতে রয়েছে। তবে ওষুধটি বাজারজাত হওয়ার পর বোঝা যাবে এটি আসলে কতটা কার্যকর।

অন্যদিকে, তন্ময় বিশ্বাসের সঙ্গে একমত পোষণ করে পশ্চিমবঙ্গের আলিপরদুয়ার জেলার উপস্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী বলছেন, ওষুধটি নিয়ে যতটা প্রত্যাশা এখনই হচ্ছে ততটা নিশ্চিন্ত হওয়ার মতো কিছুই হয়নি।

আনন্দবাজারকে তিনি বলেন, তিনটি ট্রায়ালে ৮৮ শতাংশ কাজ করেছে বলেই যে কোনো ওষুধ পাওয়া গেল এমনটা ভাবা ঠিক নয়। এক্ষেত্রে পোস্ট মার্কেটিং বা বাজারজাতকরণের ট্রায়ালই মূল বিষয়। বাজারজাতকরণের পর পৃথিবীর সব জায়গায় ওষুধটি সমান কার্যকর কি না, আবহাওয়া ভেদে এর কার্যকারিতার কোনো তারতম্য ঘটে কি না এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেমন- এ রকম অনেক বিষয় দেখার আছে।

তিনি আরো বলছেন, তাছাড়া ওষুধ খাওয়ার সুনির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতিও আছে। উপসর্গ দেখা দিলো আর ওষুধের দোকান থেকে কিনে খেয়ে নিলাম- বিষয়টা এমন নয়। এ রকম হলে বিপদ তো কমবেই না, বরং বাড়তে পারে।