অবসরে পাঠানো হচ্ছে সরকারি পাটকল শ্রমিকদের

বছরের পর বছর ধরে ক্রমাগত লোকসান গুনে যাচ্ছে বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) অধীনে থাকা পাটকলগুলো। ফলে মাঝে মাঝেই শ্রমিকদের বেতন-ভাতা প্রদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। এছাড়া পাটকলগুলোকে টিকিয়ে রাখতে সরকারকেও প্রতিবছর জনগণের করের টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় পাটকলগুলোকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় আর পরিচালনা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফলে সেগুলোতে কাজ করা ২৫ হাজার স্থায়ী শ্রমিককেও পাঠানো হচ্ছে স্বেচ্ছা অবসরে (গোল্ডেন হ্যান্ডশেক)।

স্বেচ্ছা অবসরে পাঠানো হচ্ছে সরকারি পাটকলের শ্রমিকদের

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে বিজেএমসি'র অধীনে ২৬টি পাটকল রয়েছে। এর মধ্যে মনোয়ার জুট মিল নামের একটি পাটকল বন্ধ রয়েছে। বাকি ২৫টি পাটকলে বর্তমানে ২৪ হাজার ৮৫৫ জন স্থায়ী শ্রমিক কাজ করেন। এছাড়া প্রায় ২৬ হাজারের মতো দৈনিকভিত্তিক ও তালিকাভুক্ত বদলি শ্রমিক রয়েছে।

ক্রমাগত লোকসানের কারণে স্থায়ী শ্রমিকদের স্বেচ্ছা অবসরে পাঠানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অনুমোদন পাওয়া গেছে। এখন শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধসহ মজুরি কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী তাদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। কিছুদিনের মধ্যেই বিষয়টি চূড়ান্ত করে প্রজ্ঞপন জারি করা হবে। এরপর আর পাটকলগুলো সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে না। এগুলো বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা করা হবে।

স্বেচ্ছা অবসরে পাঠানো হচ্ছে সরকারি পাটকলের শ্রমিকদের

তবে কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের কারণে শ্রমিদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেওয়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকও করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। যাতে এটিকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়।

শ্রমিকদের স্বেচ্ছা অবসরে পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে বস্ত্র ও পাট সচিব লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, এখন এ বিষয়ে কিছু জানানো যাচ্ছে না। আগামী ৩০ জুনের পর এটি সবাইকে জানানো হবে।

বিজেএমসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. আব্দুর রউফ বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখনো কাজ করা হচ্ছে। শ্রমিকদের অবসরে পাঠানো সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা এখনো আসেনি। নির্দেশনা আসলে বিস্তারিত বলা যাবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের পাটশিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে বর্তমান সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক দলাদলি, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম, দুর্নীতি, সময়মতো কাঁচাপাট কিনতে না পারা, পাটের গুণগত মান খারাপ হওয়া, শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) দৌরাত্ম্য, অতিরিক্ত জনবল ও পুরাতন যন্ত্রপাতির কারণে লোকসানের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না সরকারি পাটকলগুলো। অথচ একই সময়ে বেসরকারি খাতের পাটকলগুলো ঠিকই লাভ করছে।

এমতাবস্থায় জনগণের করের টাকা দিয়ে বছরের পর বছর ধরে এই পাটকল টিকিয়ে না রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। এগুলোকে সরকারি ব্যবস্থাপনা থেকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন তারা।