ব্যবসায়ীদের শঙ্কা: ট্রান্সশিপমেন্টে কমবে রপ্তানি বাণিজ্য

সফলভাবে ভারতের ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে খালাসের পর নির্ধারিত হারে মাশুল ও ফি পরিশোধ করে সড়কপথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ত্রিপুরায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে পণ্য পরিবহন কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেছে ভারত। তবে এতে করে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশের রুট ব্যবহার করে ভারতের পণ্য পরিবহন

কলকাতা বন্দর থেকে জাহাজে করে আনা এসব পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে খালাসের পর গতকাল বৃহস্পতিবার চারটি ট্রেইলারে করে ত্রিপুরায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মাশুল আদায় ও কাগজপত্র যাচাই করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে আগরতলা বন্দরে চারটি পণ্যবাহী ট্রেইলার আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।

সড়কপথে এই পণ্য পরিবহনের দায়িত্বে থাকা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আদনান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্ত্বাধিকারী মো. আক্তার হোসেন বলেন, চারটি ট্রেইলারের মধ্যে দুটিতে ছিল ৪৯ দশমিক ৮৩ মেট্রিক টন রড (টিএমটি বার)। যা ত্রিপুরার জিরানিয়ার এসএম কর্পোরেশনের পণ্য। বাকি দুই ট্রেইলারে ছিল ৫৩ দশমিক ২৫ মেট্রিক টন ডাল। যা আসাম রাজ্যের গোহাটির ইটিসি অ্যাগ্রো প্রসেসিং ইন্ডিয়া লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের।

জানা গেছে, এক সময় আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রচুর পরিমাণ বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি হতো। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে সেই রপ্তানি বাণিজ্যে ধস নেমেছে। মূলত ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে অন্যান্য রাজ্যগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়াতে সেখানকার ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি কমিয়ে দেন। সবচেয়ে বেশি চাহিদা সম্পন্ন পাথর আগে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা হলেও এখন শিলং থেকে সংগ্রহ করছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা।

এ ছাড়া বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে প্রায় সময়ই মাছ আমদানি বন্ধ করে দেয় ভারতীয়রা। আগে প্রতিদিন রড, সিমেন্ট, পাথর, কয়লা, তুলা, মাছ ও প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন পণ্যবোঝাই শতাধিক ট্রাক আগরতলা স্থলবন্দরে প্রবেশ করতো। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে তা অর্ধেকেরও নিচে নেমে গেছে। বর্তমানে প্রতিদিন মাত্র ২০-২৫ ট্রাক পণ্য যাচ্ছে সেখানে।

এর মধ্যে রড, কয়লা, পাথর ও মাছ রপ্তানি কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ। শুধু সিমেন্ট, ভোজ্য তেল, তুলা, প্লাস্টিক ও খাদ্যসামগ্রী রপ্তানি হচ্ছে। তবে করোনার কারণে সেগুলোর পরিমাণও খুব কম। করোনার আগে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে প্রতি মাসে গড়ে তিন শ টন রড আর সিমেন্ট রপ্তানি হতো। কিন্তু ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারত এখন রড-সিমেন্টের মতো চাহিদা সম্পন্ন পণ্য ওই রাজ্যে সরবরাহ করছে। এতে করে স্থলবন্দরের রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এ বিষয়ে আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী মো. ইদন মিয়া বলেন, ট্রান্সশিপমেন্টের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আগে বাংলাদেশের পণ্য ভারতে রপ্তানি করা হতো। কিন্তু এখন তারা সেই পণ্য সরাসরি বাংলাদেশি রুট ব্যবহার করে নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে বাংলাদেশের ফ্যাক্টরির পণ্য রপ্তানি হ্রাস পাবে।

আখাউড়া স্থলবন্দরের কাস্টমস্ ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফোরকান আহমেদ খলিফা বলেন, আগে এখান থেকে সরাসরি পণ্য রপ্তানি হতো। এখন কলকাতা থেকে সেই পণ্য ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারত নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে বন্দরের রপ্তানি বাণিজ্যে কিছুটা প্রভাব পড়বে। কারণ রপ্তানি হলে দেশের রেমিট্যান্স আসে। এখন সেটি আর আসবে না।

ভারতীয় হাই কমিশন ও বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারত-বাংলাদেশ ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তির আওতায় প্রথমবারের মতো পণ্য পরিবহন শুরু হয়েছে। যা আগামীতে আরো বাড়বে।