সিনহা হত্যায় চলছে গণশুনানি

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ হত্যার ঘটনায় বিস্তারিত জানতে গণশুনানি শুরু করেছে এ সংক্রান্ত সরকার গঠিত তদন্ত দল। আজ রোববার পূর্ব নির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ১০টা থেকে শুনানির কার্যক্রম শুরু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোহাম্মদ শাহজাহান আলি।

সিনহা রাশেদ হত্যার ঘটনায় চলছে গণশুনানি

তিনি জানান, গণশুনানিতে বক্তব্য দিতে যারা আগ্রহী, তাদের নাম রেজিস্ট্রেশনের কার্যক্রম টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে শুরু হয়। এর মাধ্যমে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ গণশুনানির কার্যক্রম শুরু হয়। তদন্ত দলের অন্যতম সদস্য হলেন মোহাম্মদ শাহজাহান আলি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গণশুনানিতে ওই এলাকার ১২ ব্যক্তি অংশ নিচ্ছেন। কার্যক্রম সকালে শুরু হলেও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য গ্রহণ শুরু হয় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে। গণশুনানিতে উপস্থিত আছেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। এ ছাড়া রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মনোনীত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের লে. কির্নেল সাজ্জাদ, চট্টগ্রামের ডিআইজি মনোনীত অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেন উপস্থিত আছেন বলে জানা গেছে।

সিনহা রাশেদ হত্যার ঘটনায় চলছে গণশুনানি

বাহারছরা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ উদ্দিন জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার কারণে মানুষের মধ্যে ‘আতঙ্ক’ থাকলেও গণশুনানির প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরুর পর মেজর (অব.) সিনহা হত্যার ঘটনার প্রত্যক্ষকারী এবং পরবর্তী ঘটনা দেখা অনেকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কথা বলতে নিজেদের নাম রেজিস্ট্রেশন করেছেন।

তদন্তের স্বার্থে মাঠ পর্যায়ে যেখানে যাওয়া দরকার সেখানে যাওয়া হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, দুঃখজনক এই ঘটনার নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত করা হবে। আর এর জন্য যার যার সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন, তাদের সঙ্গে কথা বলা হবে। এরই অংশ হিসেবে আজ গণশুনানি করা হচ্ছে।

এদিকে, গণশুনানি উপলক্ষে মেরনি ড্রাইভের শাপলাপুর এলাকা, ক্যাম্পস্থল এবং আশপাশের এলাকায় সেনাবাহিনী ও অন্যান্য শৃঙ্খলাবাহিনী কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে বলে জানা গেছে। গণমাধ্যমকর্মীদেরও ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে। তবে শুনানি কক্ষে তাদের কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।

প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা রাশেদ। পুলিশের পক্ষ থেকে ওই সময় বলা হয়, রাশেদ সিনহা তার পরিচয় দিয়ে ‘তল্লাশিতে বাধা দেন’। এর পর তিনি ‘পিস্তল বের করলে’ দায়িত্বরত পুলিশ তাকে গুলি করে। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারের কথাও জানায় পুলিশ। এ নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকেও মামলা করা হয়েছে।

এ ঘটনার বিচার চেয়ে টেকনাফ উপজেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারহার আদালতে ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন মেজর সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস।

মামলার আসামিরা হলেন- প্রত্যাহার হওয়া ওসি প্রদীপ দাশ, বাহারছরা শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহারকৃত পরিদর্শক লিয়াকত আলী, উপ-পরিদর্শক নন্দলাল রক্ষিত, উপ-পরিদর্শক টুটুল, সহকারী উপ-পরিদর্শক লিটন মিয়া এবং কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন ও মো. মোস্তফা। এদের মধ্যে সাত আসামির জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।