কারাভোগের ২০ বছর পর 'নির্দোষ' প্রমাণিত!

স্ত্রী ও নিজ কন্যা সন্তানকে হত্যার দায়ে করা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছিলেন বাগেরহাটের শেখ জাহিদ হোসেন। এরপর থেকে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে কারাগারের কনডেম সেলে ছিলেন তিনি। অবশেষে তাকে নির্দোষ প্রমাণ করে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।

২০ বছর কারাগারে কাটার পর রায় এলো তিনি নির্দোষ

মঙ্গলবার এ রায় ঘোষণা করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ। আদালতে বিচারক বলেন, স্ত্রী ও কন্যা হত্যার অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। তাই শেখ জাহিদকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হলো।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ বলেন, যে সব সাক্ষীর মাধ্যমে আদালত মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন, ওই সাক্ষীরা মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারা মোতাবেক কোনো জবানবন্দি দিয়েছিলেন বলে তথ্য পাওয়া যায়নি। ফলে এ নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে।

আসামি পক্ষের আইনজীবী সারওয়ার আহমেদ বলেন, এই মামলায় পর পর পরিবর্তন হয়ে আটজন তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত করেন। যা বিরল ঘটনা এবং সাক্ষ্য ও তদন্তে অসঙ্গতি চোখে পড়েছে। তাই জাহিদকে বেকসুর খালাস প্রদান করেছেন আপিল বিভাগ। বুধ অথবা বৃহস্পতিবার কারাগারে রায়ের অনুলিপি পাঠানো হতে পারে।

মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, শেখ জাহিদের বাড়ি খুলনা জেলার রুপসা থানার নারিকেল চানপুর গ্রামে। হত্যাকাণ্ডের তিন বছর আগে বাগেরহাটের রহিমা খাতুনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালের ১৬ জানুয়ারি বাগেরহাটের ফকিরহাট থানায় কন্যা ও নাতনি হত্যার দায়ে শেখ জাহিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন তার শ্বশুর মো. ময়েনউদ্দিন শেখ। সেখানে তাদের ঘুমের মধ্যে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ করা হয়েছিল। বলা হয়, পারিবারিক কলহের জেরে শেখ জাহিদ তার স্ত্রী রহিমা খাতুন ও দেড় বছরের কন্যা রেশমা খাতুনকে হত্যা করে পালিয়ে গেছেন।

পরে থানায় এসে আত্মসমর্পণ করেন জাহিদ। ২০০০ সালের ২৫ জুন এক রায়ে আসামি শেখ জাহিদকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন বাগেরহাটের আদালত। সেই রায় অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হলে ২০০৪ সালের ৩১ জুলাই মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আদেশ দেন বিচারপতি বদরুল হক ও বিচারপতি মিজানুর রহমান ভুইয়ার হাইকোর্ট বেঞ্চ।

এরপর ২০০৭ সালে এই রায়ের বিরুদ্ধে কারাগার থেকে আপিল করেন জাহিদ। সেটি গত সপ্তাহে এসে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চের নজরে পড়ে। তখনই মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত নেন আদালত। সরকারি খরচে সারওয়ার আহমেদকে আসামি পক্ষের আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। শুনানি করতে গিয়ে মামলাটির নানা অসঙ্গতি ধরা পড়ে।

মঙ্গলবার আদালতের দেয়া রায়ে বলা হয়েছে, মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা মোট ৮ বার পরিবর্তন হয়। এমনকি হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টিও প্রমাণ করতে পারেননি তারা। তাই এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীও।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম আমিন উদ্দিন বলেন, জীবন থেকে ২০ বছর কনডেম সেলে কাটিয়ে দেয়া বেদনাদায়ক। তার ওপর বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টের রায়ে আপিল বিভাগের রায় ভুল বলে প্রমাণ হয়েছে। নির্দোষ জাহিদের জীবনে তো আর এই ২০ বছর ফিরিয়ে দেয়া যাবে না। তাই এ ঘটনার পেছনে জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা উচিত। পাশাপাশি জাহিদের জন্য ক্ষতিপূরণ রাখা উচিত।