‘লাগামহীনভাবে’ বাড়ছে চাল ও তেলের দাম

এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে ফের বেড়েছে চাল ও ভোজ্য তেলের দাম। নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্য দুটির দামের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির কারণে বিপাকে পড়ছেন সাধারণ ক্রেতারা। তারা বলেছেন, সরকারের নজরদারির অভাবেই প্রতিনিয়ত বাড়ছে এসব পণ্যের দাম। অপরদিকে, বিক্রেতারা বলছেন, মিলার ও ডিলাররা দাম বাড়ানোয় বাজারে চাল ও তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

হু-হু করে বাড়ছে চাল ও তেলের দাম- ফাইল ছবি

আজ শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালে ৪-৫ টাকা টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে লিটার প্রতি ৪-৫ টাকা। অথচ মাত্র এক সপ্তাহ আগেই এই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দুটির দাম এক দফা বেড়েছিল।

ব্যবসায়ীরা জানান, খুচরা বাজারে এখন প্রতি কেজি মোটা স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। লতা বা পাইজাম চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৫ টাকা। নাজিরশাইল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৬-৬০ টাকা। মানভেদে প্রতি কেজি চিকন সরু মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা।

রামপুরা বাজারের এক চাল ব্যবসায়ী জানান, সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম ৪-৫ টাকা বেড়েছে। বিশেষ করে, মোটা চালের দাম অনেকখানি বেড়েছে। তিনি ৫০ কেজির মিনিকেট চালের বস্তা মানভেদে ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। আর মোটা চালের বস্তা বিক্রি করছেন আড়াই হাজার টাকা থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়।

হু-হু করে বাড়ছে চাল ও তেলের দাম- ফাইল ছবি

দাম বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, কৃষকের গোলা যা ময়াল নামে বেশি পরিচিত, সেখান থেকেই বেশি দামে ধান বিক্রি করা হচ্ছে। যে কারণে মিলাররাও বাড়িয়েছেন চালের দাম। তবে দাম বাড়ার প্রকৃত কারণ কী, তা তিনি জানেন না।

মিরপুরের এক আড়তদার জানান, মিলাররা কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে সেগুলো মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। তাদের কারসাজির কারণেই বাজারে চালের দাম বেড়েছে।

তবে গতকাল বৃহস্পতিবার এসব মিলারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। যার কারণে আজ প্রতি মন ধানের দাম ৫০ টাকা কমেছে। সরকার নিয়মিত তাদের তদারকি অব্যাহত রাখলে কয়েকদিনের মধ্যেই চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করেন তিনি।

এদিকে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে ফের প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৪-৫ টাকা। এতে বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১১৪-১১৫ টাকা। দুই লিটারের তেলের বোতল বিক্রি করা হচ্ছে ২২৬ টাকা এবং পাঁচ লিটারের তেলের বোতল বিক্রি করা হচ্ছে ৫৫০-৫৫৫ টাকা।

ক্রেতারা জানান, এক মাসের মধ্যে সয়াবিন তেলের দাম দ্বিতীয়বারের মতো বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের নজরদারির অভাবেই তেলসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা কঠোর হলে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকতো।

বিক্রেতারা বলছেন, প্রায় সব ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৪-৫ টাকা বেড়েছে। এক মাস আগেও রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের ৫ লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের মূল্য ছিল ৫২৫ টাকা, যা এখন দুই দফায় বেড়ে ৫৫০ টাকা হয়েছে। দুই লিটারের বোতলের দাম ছিল ২১৬ টাকা, যা এখন ২২৬ টাকা হয়েছে। আর এক লিটারের বোতলের দাম ছিল ১১০ টাকা, এটি এখন হয়েছে ১১৫ টাকা।

দেশের অন্যতম বড় সয়াবিন তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপ। তাদের সয়াবিন তেলের ব্র্যান্ডের নাম তীর। এই প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) বিশ্বজিৎ সাহা গণমাধ্যমকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারেই ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই তাদেরও নিরূপায় হয়ে দাম বাড়াতে হয়েছে। তবে দাম বাড়ানোর জন্য প্রতিটি কোম্পানিই সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছে।