ক্রমাগত ‘অপকর্মে’র ঘটনায় বিব্রত সরকার, ক্ষুব্ধ আ. লীগ

সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি দলের নেতাকর্মী ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন ধরনের অপকর্মের ঘটনা আগের তুলনায় বেশি ঘটছে, প্রকাশ পাচ্ছে বেশি। এতে রীতিমতো বিব্রত হচ্ছে সরকার, ক্ষুব্ধ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতারাও। তারা বলছেন, এ দুটি দিকই এখন সরকার ও দলের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আওয়ামী লীগের দলীয় পতাকা

আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারকে বলেন, একটি রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকলে তার নেতাকর্মীদের মাঝে অপরাধ প্রবণতা এবং অপরাধ করে পার পাওয়ার মনোবৃত্তি বাড়তে থাকে। আমাদের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এতদিন নেতাকর্মী বা সরকারি লোকদের নানা অপকর্ম সেভাবে প্রকাশ্যে আসেনি। কিন্তু করোনাকালসহ গত ৬ মাসে এ ধরনের অনেক ঘটনা সামনে এসেছে বেশি।

তারা বলছেন, এসব ঘটনা পত্রিকা বা টেলিভিশনে উঠে আসলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। অনেকে এতে নানা রং মিশিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশেও ব্যবহার করছে। ফলে সর্বসাধারণের কাছে এসব ঘটনা নানাভাবে উপস্থাপিত হওয়ায় সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। আর আওয়ামী লীগকেও নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হচ্ছে।

সরকারি দলের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের নানা ধরনের অপকর্মের ঘটনা সামনে এলেই তাদের গ্রেপ্তার করছে সরকার। আওয়ামী লীগের যাদের নাম বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কাউকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না। কিন্তু তাতেও অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়া সরকার ও দলের জন্য চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগের অনেক কেন্দ্রীয় নেতা ক্ষুব্ধ হলেও তারা প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না। এ ছাড়া করোনার কারণে দীর্ঘ প্রায় ৭ মাস ধরে দলীয় কেন্দ্রীয় সভা না হওয়ায় ঘরোয়া আলোচনায়ও তুলতে পারছেন না বিষয়গুলো। ফলে অপকর্মের জড়ানোর বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণেও গতি পাচ্ছে না।

আওয়ামী লীগের সভা -ফাইল ছবি

এমন প্রেক্ষাপটে আগামীকাল শনিবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে বসতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা। এতে এসব বিষয় উঠে আসতে পারে, বিস্তারিত আলোচনাও হবে পারে বলে জানা গেছে। এমনকি এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণে দলের হাই কমান্ডের পরামর্শও চাওয়া হতে পারে বলে মনে করছেন দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর তিন জন সদস্য।

করোনাকালে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়লেও ইদানিং বিএনপিসহ বিভিন্ন সংগঠন সক্রিয় হচ্ছে। এতে বিভিন্ন ইস্যুকে রাজৈনিতক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের শঙ্কা করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, সামনে আসা অপকর্মগুলো নিয়ে এমনিতেই বেকায়দায় রয়েছে সরকার ও দল। এখন সরকারবিরোধীরা এটিকে রাজৈনিতক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করলে তা অস্বস্তি আরো বাড়িয়ে তুলবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতমণ্ডলীর একজন সদস্য জানান, বিশেষ করে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও হাইব্রিড আওয়ামী লীগারদের কঠোর বার্তা দেয়া প্রয়োজন। তাতে হয়তো অবস্থার কিছুটা হলেও উন্নতি হতে পারে। এ ধরনের ঘটনা একের পর এক ঘটতেই থাকলে পরিস্থতির আরো অবণতি হওয়ার আশঙ্কা আছে। এ বিষয়ে কালকের সভায় আলোচনা উঠতে পারে। সেখানেই দলীয়ভাবে এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণ করা হতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, সম্প্রতি যেসব অপকর্মের ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে, তার অধিকাংশেই আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীরা জড়িত। তাদের মধ্যে অনেকেই গ্রেপ্তার হচ্ছেন, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। তাতেও অপকর্মের ঘটনা বন্ধ না হওয়ায় আরো কী কী পদক্ষেপ নেয়া যায়, তা নিয়ে কালকের সভায় আলোচনা হতে পারে বলেও জানান তিনি।