আপনি পড়ছেন

তাদের বসবাস দরিদ্র সীমার নিচে। তাদের বসবাস ক্ষমতাবলয়ের বাইরে। তাদের বসবাস কুঁড়েঘর ও পতিত জমিতে। এই সব কিছু মিলে দলিত নারীদের জীবনে যেনো অলঙ্ঘনীয় এক দুর্ভাগ্যের দুষ্ট চক্র তৈরি হয়েছে। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষার ফলাফলে জানা যাচ্ছে, পৃথিবীতে যারা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হোন, দলিত নারীরা তাদের মধ্যে অন্যতম।

dalit women are raising their voice

জয়শ্রী মঙ্গুভাই নামের একজন গবেষককে এক দলিত নারী বলেন, “আমরা দরিদ্র এবং নিম্ন বর্ণের বলে আমাদের সাথে বেশি সহিংসতা ঘটে। এর মধ্যে আবার এসেছে লকডাউনের মতো বিপদ। আমাদের পক্ষে কথা বলার মতো কেউ নেই। আমরা প্রায় যৌন সহিংসতার শিকার হই কারণ আমাদের কোনোই ক্ষমতা নেই।”

গত সপ্তাহে ভারতের উত্তর প্রদেশে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের দ্বারা ১৯ বছর বয়সী একজন দলিত নারী যৌন সহিংসতার শিকার হন এবং বেশ কয়েক হাসপাতালে থাকার পর তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনা আরো একবার ভারতের ৮০ মিলিয়ন দলিত নারীর দুঃসহ জীবনের সত্য সামনে নিয়ে এসেছে। দলিতরা ভারতের হিন্দুদের বর্ণপ্রথার সবচেয়ে দুর্ভাগা শিকার।

দলিত নারীরা ভারতের মোট নারীদের ১৬ শতাংশ। তারা তাদের জীবনে অন্তত তিন ধরনের সমস্যার মুখে পড়েন— লিঙ্গ বৈষম্য, বর্ণবৈষম্য এবং অর্থনৈতিক বঞ্চনা। কাস্ট ম্যাটার্স নামক একটি বইয়ের লেখক ডক্টর সুরাজ ইয়েংড়ে বলেন, “দলিত নারীরা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার মানুষগুলোর অন্যতম। তারা পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে সাংস্কৃতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক নির্যাতনের শিকার হন।”

সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় দেখা গেছে, বিশেষ করে উত্তর প্রদেশের হাথরাসের ঘটনার পর, যেখানে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের দ্বারা দলিত এক নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন এবং শেষ পর্যন্ত মারা গেছেন; অথচ পুলিশ মামলা গ্রহণে গাফেলতি করেছে, তদন্ত ধীরগতিতে হয়েছে, কর্মকর্তারা ধর্ষণ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, এবং এমন কি, সংবাদ মাধ্যমে উচ্চবর্ণের হিন্দু সাংবাদিকরা পর্যন্ত ঘটনার ভয়াবহতা আড়াল করার চেষ্টা করেছেন এই বলে যে, বর্ণবৈষম্যের ঘটনার সাথে যৌন সহিংসতার কী সম্পর্ক।

dalit women are raising their voice 1

অন্যভাবে বলতে গেলে, ভারতীয় সমাজের একটি অংশ দলিত নারীদের নির্যাতিত হওয়ার বাস্তবতাকে এই বলে অস্বীকার করতে চায় যে বর্ণপ্রথার সাথে যৌন সহিংসতার কোনো সম্পর্ক নেই।

গত সপ্তাহে হাথরাসের ঘটনাটির ভয়াবহতা এতোটাই ব্যাপক ছিলো যে, নির্যাতিতের মৃতদেহ অনেকটা জোর করে দাহ করে ফেলা হয়। এবং এই ভয়াবহতা ঘটানোর জন্য ব্যবহার করা হয় পুলিশকে। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম ও পরিবারকেও দাহকার্যে থাকতে দেওয়া হয়নি। পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, তাদের অনুমতি ছাড়াই মৃতদেহের শেষকৃত্য করা হয়েছে।

আর এই সবই হয়েছে উত্তর প্রদেশের একজন রাজনৈতিক নেতার অধীনে যিনি ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্য। ঘটনা এটুকুই নয়, একটি বেসরকারি গণযোগাযোগ সংস্থাকে নিয়োগ দিয়ে এই রকম তথ্য ছড়ানো হয়েছে যে, ওই নারীকে ধর্ষণ করা হয়নি।

ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দলিত নারীরা ঠিক কতো বছর ধরে যৌন সহিংসতার শিকার হয়ে আসছে তার কোনো সঠিক হিসেব নেই। ভারতের প্রায় সব অঞ্চলে রাজনৈতিক ক্ষমতা, সামাজিক ক্ষমতা সবই উচ্চ বা মধ্য বর্ণের হিন্দুদের দখলে। ১৯৮৯ সালে কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণির উপর নির্যাতন বন্ধ করার জন্য একটি আইন হয়। কিন্তু তারপরও দলিত নারীরা নিরাপদ নন। তারা এখনো আগের মতোই কিছু না করেই অপরাধী হোন, বাজে আচরণ ও শ্লীলতাহানীর শিকার হোন, ধর্ষিত হোন এবং খুন হোন।

সরকারি হিসেব মতে, ভারতে গত বছর প্রতিদিন ১০ জন করে দলিত নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ উত্তর প্রদেশে নারীর প্রতি যৌন সহিংসতার হার সবচেয়ে বেশি। উত্তর প্রদেশ, বিহার এবং রাজস্থান— ভারতে সহিংসতার শিকার হওয়া দলিত নারীদের অর্ধেকেই এই তিন রাজ্যে।

২০০৬ সালে ৫০০ দলিত নারীকে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, তাদের ৫৪ শতাংশ শারীরিক নির্যাতনের, ৪৬ শতাংশ যৌন সহিংসতার, ৪৩ শতাংশ গৃহনির্যাতনের, ২৩ শতাংশ ধর্ষণের এবং ৬২ শতাংশ মৌখিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

দলিত নারীরা অন্য সব বর্ণের হিন্দুদের দ্বারাই নির্যাতনের শিকার হোন, এমন কি দলিত পুরুষরাও তাদের উপর নির্যাতন চালায়। ২০০৪ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দলিতদের অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠান অন্তত ১০০টি যৌন সহিংসতার ঘটনা পর্যালোচনা করে জানিয়েছে, ৪৬ শতাংশ নির্যাতিতের বয়স ১৮ বছরের নিচে এবং ৮৫ শতাংশের বয়স ৩০-এর কম। আর নির্যাতনকারিরা ভিন্ন ভিন্ন ৩৬ বর্ণের হিন্দু এবং এর মধ্যে দলিতরাও আছে।

দলিত নারীরা কেনো নির্যাতিত হোন— এর কারণ খুঁজতে গিয়ে এমন উত্তর পাওয়া গেছে যে, তারা এখন আগের তুলনায় বেশি অধিকার সচেতন এবং তারা কথা বলতে শুরু করেছেন।

দলিতদের ইতিহাস একটি নতুন মোড় নেয় ২০০৬ সালে। যখন একটি দলিত পরিবারের চার জন— মা, এক মেয়ে ও দুই ছেলকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। জমি নিয়ে বিরোধের পর এই ঘটনাটি ঘটানো হয়।

ভারতজুড়ে দলিত নারীরা এখন পড়াশোনা করার চেষ্টা করছেন এবং নিজেদের কথা সমাজের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। নির্যাতনের হারে খুব বেশি পরিবর্তন না হলেও দলিতরা তাদের জীবন নিয়ে আরো বেশি সচেতন ও সাহসী হয়ে উঠতে শুরু করেছেন।

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.