আরবে হু হু করে বাড়ছে এরদোয়ানের জনপ্রিয়তা
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
উপসাগরীয় অধিকাংশ আরব দেশ মিশরকে সঙ্গে নিয়ে তুরস্ককে কোণঠাসা করার জন্য সম্ভাব্য সকল উপায় নিয়ে তৎপর। কিন্তু দেশগুলোর শাসকরা সেটা করলেও বেশির ভাগ আরব জনগণের মাঝে তুরস্ক তথা দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ানের জনপ্রিয়তা বাড়ছে হু হু করে। তারা মনে করছেন যে, এরদোয়ানই তাদের সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্ক্ষী।
রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ান
আরব বিশ্বের ১৩টি দেশে সম্প্রতি পরিচালিত এক জনমত জরিপে তুরস্ক ও দেশটির প্রেসিডেন্টের ব্যাপারে আরব বিশ্বের সরকার ও জনগণের এই বৈপরীত্য উন্মোচিত হয়েছে।
বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে সাধারণ আরব জনগণের মনোভাব জানতে এশিয়া ও আফ্রিকায় আরব বিশ্বের ১৩টি রাষ্ট্রে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।
জরিপটি পরিচালনা করেছে কাতারের দোহা এবং লেবাননের বৈরুত-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা আরব সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি স্টাডিজ।
এরদোয়ানের পুনঃনির্বাচনে গাজায় খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে ফিলিস্তিনিদের উল্লাস, পুরনো ছবি
বিবিসি বাংলা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জরিপে যেসব আরব অংশ নিয়েছেন তাদের ৫৮ শতাংশই মনে করেন, তুরস্কের মধ্যপ্রাচ্য নীতিই আরব স্বার্থের পক্ষে। যা অন্য কোনো দেশের নীতিতে নেই। ফিলিস্তিন ইস্যু তো বটেই, তুরস্ক তথা এরদোয়ান সরকার সিরিয়া ও লিবিয়ায় যে ‘সামরিক হস্তক্ষেপ’ বা পদক্ষেপ নিয়েছে তাকেও সমর্থন করছে সিংহভাগ আরব জনগণ।
জরিপে দেখা গেছে, তুরস্কের পর আরবদের মনোভাব সবচেয়ে ইতিবাচক চীন ও জার্মানির মধ্যপ্রাচ্য নীতির প্রতি। চীনের নীতির প্রতি ৫৫ শতাংশ এবং জার্মানির নীতিকে ৫২ শতাংশ আরব জনগণ সমর্থন করেন।
মিশরের প্রথম গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদ মুরসির মৃতুতে গায়েবানা জানাজায় এরদোয়ান
অন্যদিকে, আমেরিকার যে মধ্যপ্রাচ্য নীতি, তার ব্যাপারে সবচেয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়েছেন জরিপে অংশ নেওয়া আরবরা।
এদিকে, লন্ডনে রাজনৈতিক ঝুঁকি সম্পর্কিত গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারেস্টের প্রধান সামি হামদি মনে করেন, সাধারণ আরব জনগণের বিরাট একটি অংশের কাছে তুরস্ক রাষ্ট্রের চেয়ে ব্যক্তি এরদোয়ান যে বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছেন, তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতির এই বিশ্লেষক বলছেন, আরবরা এটা বুঝতে পারছে যে, এরদোয়ানের আগের তুরস্ক এবং এরদোয়ান পরবর্তী তুরস্ক এক নয়। তারা এটাও জানে যে, বর্তমান তুরস্কের যে পররাষ্ট্র নীতি, তার মূলে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।
সামি হামদি বলছেন, আরবরা এরদোয়ানের আগের তুরস্ককে একটি নিপীড়নকারী রাষ্ট্র হিসেবে দেখতো। কারণ সে সময়ের তুরস্ক আরব ও মুসলমানদের স্পর্শকাতরতাকে উপেক্ষা করতো। এর ঐতিহাসিক সত্যও রয়েছে। যেমন- স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবিতে এক সময় আরবরা যখন এককাট্টা ছিল, তখন তুরস্ক ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তুরস্ককে সেই অবস্থান থেকে যে বের করে এনেছেন, আরবরা সেটা বুঝতে পারছে। মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তিউনিসিয়া- এমনকি সৌদি শাসকরাও যখন আরব বিশ্বের মুসলিম পরিচিতি তথা ঐতিহ্যকে ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছেন, তখন মুসলিম পরিচিতি তথা ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষায় বা প্রচারে সোচ্চার এরদোয়ান, বলেন হামদি।
আর এরদোয়ানের এই গুণই আরব বিশ্বের বহু মানুষকে আকৃষ্ট করছে উল্লেখ করে এই মধ্যপ্রাচ্য গবেষক বলছেন, এরদোয়ান বা তুরস্কের প্রতি আরবদের এই মুগ্ধতার সঙ্গে আরব বসন্ত পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতির যোগসূত্র রয়েছে।
কারণ আরব বসন্তের পর মিশর ও অন্য যেসব দেশে নির্বাচন হয়, সেগুলোতে প্রধানত ইসলামপন্থীরা বিজয়ী হয়। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই তাদের আবার ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।
হামদি বলছেন, এক্ষেত্রে মিশরের কথাই ধরা যাক- নির্বাচিত মুসলিম ব্রাদারহুড সরকারকে যেভাবে টেনে-হিঁচড়ে নামানো হয়, তাতে পৃথিবীর ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো যেভাবে চুপ করে ছিল, সেটা অনেক মানুষকে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ করেছে। তারা মনে করছেন, মুসলিম পুনঃজাগরণ ঠেকাতেই এই চক্রান্ত হয়েছে।
সুতরাং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান যখন জোর গলায় ইসলামী সত্ত্বার কথা বলছেন, তখন আরব বিশ্বের বহু মানুষ মনে করছেন যে, তিনি আসলে তাদের মনের কথাই বলছেন, মনে করেন সামি হামদি।
মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক এই গবেষক আরো বলছেন, আরব বিশ্ব দেখছে, একজন ইসলামপন্থী হলেও এরদোয়ান গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে তুরস্কে একচ্ছত্র প্রাধান্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছেন। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম করেছেন, সামরিক শক্তি বাড়িয়েছেন। আমেরিকা, রাশিয়া কিংবা ইউরোপের মতো বড় বড় রাষ্ট্রের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে কথা বলছেন এরদোয়ান। আর তুর্কি প্রেসিডেন্টের প্রতি আরবদের মুগ্ধতার কারণ এখানেই।
কারণ আরবরাও চান, তাদের দেশ, সরকার ও নেতারা এ রকম হবে। সে কারণে এরদোয়ানের সঙ্গে তাদের চাওয়ার বিষয়টি মিলে যাচ্ছে এবং এরদোয়ানের মধ্যেই তারা বাস্তবে একজন আদর্শ মুসলিম নেতা খুঁজে পাচ্ছেন।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.