ক্ষুধার তাড়নায় যা খাচ্ছে ইয়াঙ্গুনের মানুষ!

লাখ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দেশছাড়া করা মিয়ানমার প্রাণঘাতী করোনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাস গত মার্চে দেশটিতে প্রথম দফায় শনাক্ত হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে সংক্রমণ কিছুটা কমলেও দ্বিতীয় ঢেউ গত মাসে ছড়িয়ে পড়েছে সুচির দেশে। এতে বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র ইয়াঙ্গুনে স্টে হোম নির্দেশনা জারি করেছে তার সরকার।

এক ধরনের সাপ, ক্ষুধার তাড়নায় যা খাচ্ছে ইয়াঙ্গুনের মানুষ

দীর্ঘ সামরিক শাসন থেকে কয়েক বছর আগে গণতন্ত্রে ফেরা মিয়ানমারের (পূর্ব নাম বার্মা) অর্থনৈতিক অবস্থা এমনিতেই ভঙ্গুর। তার ওপর দুই দফায় করোনার থাবায় কুপোকাত দেশটির বেশিরভাগ মানুষ। সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে ইয়াঙ্গুনসহ বিভিন্ন শহরে অনেকের উপার্জ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, মোটা দাগে বন্ধ রয়েছে খাবার দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

এতে রীতিমতো বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লাখ লাখ মানুষ। তাদের একজন ইয়াঙ্গুনের মা সু (৩৬) বলছিলেন, একটি খাবার দোকানের আয় দিয়ে পরিবার চালাতেন তিনি। সেটি করোনার প্রথম দফার সংক্রমণের সময় অনেকদিন খুলতে না পারায় উপার্জনও বন্ধ হয়ে গেছে। তার নির্মাণশ্রমিক স্বামীও একই কারণে বেকার হয়ে যান। পরিবারের স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি ও বন্ধক রেখে খাবার কিনে খেয়েছেন তারা।

এখন দ্বিতীয় দফার সংক্রমণের কারণে গত সেপ্টেম্বর মাসে সরকার শহরজুড়ে স্টে হোম নির্দেশনা জারি করায় ফের বন্ধ হয় মা সুর দোকানটি। আবারো বেকার হওয়ায় নিজেদের পোশাক, প্লেট ও অন্যান্য আসবাবপাত্র বিক্রি করে পরিবারের সদস্যদের খাবার সংগ্রহ করেছেন তিনি।

বিক্রি করার মতো আর কিছু অবশিষ্ট না থাকায় মা সুর স্বামী শহরের বস্তি এলাকার উন্মুক্ত ড্রেনে বিকল্প খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ান। খাওয়ার মতো যা পান, তাই নিয়ে বাড়ি ফেরেন এবং তা খেয়েই চলছে তাদের জীবন।

এক ধরনের সাপ, ক্ষুধার তাড়নায় যা খাচ্ছে ইয়াঙ্গুনের মানুষ

নিদারুণ কষ্টের এমন বর্ণার দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলা মা সু জানান, খাবারের অভাবে ক্ষুধা নিবারণ করতে মানুষজন ইঁদুর ও সাপ শিকার করে খাচ্ছে। উপার্জন বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়েই সন্তানদের মুখে এমন খাবার তুলে দিতে হচ্ছে তাদের।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইয়াঙ্গুনের দারিদ্র্যপূর্ণ এলাকা হ্লেইং থার ইয়ারের লোকজন খাবারের জন্য রাতের বেলায় প্রাণীর সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। গ্রামীণ মানুষেরা ইঁদুর, সরীসৃপ ও পোকামাকড় ধরে খাচ্ছেন। শহরাঞ্চলেও একই অবস্থা দেখা দিয়েছে।

বলা হচ্ছে, করোনায় বিপর্যস্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মিয়ানমারে এখন পর্যন্ত ৪০ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে এক হাজারের বেশি মারা গেছেন। লকডাউনের কারণে দেশটির ইয়াঙ্গুনের লাখ লাখ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন।