‘মৃত্যুভয়ে’ সৌদি যুবরাজ?

ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে নিজ দেশের লোকের হাতে প্রাণনাশের ঝুঁকিতে রয়েছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান। সম্প্রতি ইসরায়েলি বংশোদ্ভূত মার্কিন বিলিয়নিয়ার হাইম সাবানের সঙ্গে আলাপকালে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন তিনি।

সৌদি আরবের যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান

ইসরায়েলি গণমাধ্যম হারেৎজের খবরে বলা হয়, সম্প্রতি সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন চুক্তি করে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দেয়। এ ক্ষেত্রে সৌদি আরবও একই পথে হাঁটলে ‘ইরান, কাতার বা নিজেদের লোকের হাতে’ মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কার কথা জানান এমবিএস খ্যাত মুহাম্মদ বিন সালমান।

আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রাট প্রার্থী জো বাইডেনের পক্ষে গত বুধবার অনলাইনে প্রচারণা চালান বিনোদন জগতের মোগল হাইম সাবান। এ সময় ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও উন্নতির স্বার্থে বাইডেনের পক্ষে ভোট চাইতে গিয়ে সৌদি যুবরাজের মৃত্যুভয়ের বিষয়টি সামনে আনেন তিনি।

এ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইহুদিদের ভোট টানতে ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাতের চুক্তির কথা ঘোষণা করেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত ১৩ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দেয় দেশ দুটি। পরে ১১ সেপ্টেম্বর একই ধরনের ঘোষণা দেয় বাহরাইন। এর পেছনে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপস্থিতিতে ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের চুক্তি

এমন প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল সম্প্রতি জানায়, ইসরায়েলের সঙ্গে আমিরাত ও বাহরাইনের চুক্তির বিষয়ে সৌদি বাদশাহ সালমানকে আগে থেকে কিছুই জানাননি যুবরাজ মুহাম্মদ। কেননা ইসলায়েলঘেঁষা এই প্রিন্স একই পথে হাঁটতে চাইলেও তার বাবা এর ঘোর বিরোধী। এ নিয়ে বাপ-বেটার মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে।

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক স্থাপন করতে চান না সৌদি বাদশাহ। অন্যদিকে তার ছেলে যুবরাজ মোহাম্মদ ইরানের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান গড়তে ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী।

খবরে আরো বলা হয়, আমিরাত-ইসরায়েল চুক্তির ঘোষণা আসার পর পরই বাদশাহ দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহানকে দিয়ে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় পাশে থাকার ঘোষণা দেয়ান। ফিলিস্তিন ইস্যুতে সৌদি আরবের অবস্থান স্পষ্ট করে সরকারি পত্রিকায় একটি নিবন্ধ লেখেন রাজপরিবারের প্রভাবশালী একজন সদস্য। তাতে ফিলিস্তিনকে আরো ছাড় দিতে ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে আমিরাতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ এবং যুবরাজ বিন সালমান (পেছনে)

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বরাত দিয়ে তুর্কি গণমাধ্যম আনাদলু এজেন্সি জানায়, ট্রাম্পের উপদেষ্টা ও তার ইহুদি জামাতা জারেড কুশনারের সঙ্গে এক বৈঠকে সৌদি যুবরাজ বলেছেন, বাদশাহ সালমান কখনোই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে সম্মতি দিবেন না। তবে ইসরায়েলের সঙ্গে বাহরাইনের সম্পর্ক স্বাভাবিক করে দিতে পারবেন যুবরাজ।

সর্বশেষ গত শুক্রবার ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনের ঘোষণা দেয় সুদান। এ খবরের সঙ্গে ট্রাম্পের মন্তব্য প্রচারিত হয়, যেখানে তিনি সৌদি আরবসহ অন্যান্য আরব দেশও ইসরায়েলের সঙ্গে একই সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন।