সব প্রস্তুতি শেষ, টিকার অপেক্ষায় বাংলাদেশ
- Details
- by নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রাণঘাতী করোনার টিকা প্রয়োগের বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ হয়েছে বাংলাদেশের, এখন কেবল টিকা পাওয়ার অপেক্ষা। এমনটাই দাবি করেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও এ সংক্রান্ত কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা।
টিকা প্রয়োগের ফাইল ছবি
তারা জানান, টিকা পরিবহন ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে টিকা প্রয়োগের অগ্রাধিকার তালিকাও। জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে টিকার প্রথম চালান হাতে পেলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
চুক্তি অনুযায়ী, অক্সফোর্ডের টিকার ৩ কোটি ডোজ আগামী বছরের প্রথম ছয় মাসে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে আসবে বাংলাদেশে। যা দুই ডোজ করে দেড় কোটি মানুষকে দেয়া হবে। এর প্রথম চালানে ৫ লাখ ডোজ আসছে জানুয়ারির শেষ দিকে বা ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে। পরবর্তী প্রতি মাসে একই পরিমাণে আসবে টিকা।
এ ছাড়া গ্যাভি-কোভ্যাক্স থেকে আগামী বছর ধাপে ধাপে ৬ কোটি ৮০ লাখ (৬৮ মিলিয়ন) ডোজ টিকা পাচ্ছে বাংলাদেশ। যাতে প্রায় ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষ টিকার আওতায় আসবে।
করোনার টিকা ও বাংলাদেশ সরকার
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান ডয়চে ভেলেকে জানান, ফেব্রুয়ারির শুরুতে অক্সফোর্ডের টিকা আসার কথা, সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এর আগে এলেও কোনো সমস্যা হবে না। কারণ, আমাদের যাবতীয় প্রস্তুতি চূড়ান্ত।
জানা গেছে, এ টিকা সংরক্ষণ করতে হবে মাইনাস ২-৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায়। এ জন্য আগে থেকেই পর্যাপ্ত ফ্রিজ রয়েছে প্রত্যেক জেলায়। নতুন করে আরো কিছু ফ্রিজ কেনার টেন্ডারও দেয়া হয়েছে।
অন্যান্য সংরক্ষণ সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে- কোল্ড চেইন ইকুইপমেন্ট, এডি সিরিঞ্জ, সেফটি বক্স, এইএফআই কিট বক্স, এইএফআই ফরমস, সার্জিক্যাল মাক্স, পয়েন্টিং ম্যাটেরিয়ালস, আইস প্যাক, ভ্যাকসিন ক্যারিয়ার, আইস লাইনার রেফ্রিজারেটর, পুশিং ফ্রিজ ইনডিকেটর, ফ্রিজ ট্যাগ, সেফটি বক্স ইত্যাদি।
অক্সফোর্ডের করোনা টিকা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাসার মো. খুরশীদ আলম জানান, টিকা বহনের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রয়েছে। সংরক্ষণের সবকিছুর ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু আছে, বাকিগুলো কিনতে চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে।
ডিসেম্বরেই শুরু হচ্ছে টিকা প্রয়োগকারী স্বাস্থ্যকর্মী ও কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কল্যাণে অন্য টিকা আগে পেলেও তা প্রয়োগের জরুরি ব্যবস্থার কথাও ভেবে রেখে সরকার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বছরে সাড়ে ৩ কোটি ডোজ অন্যান্য টিকা দেয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে বাংলাদেশের। এর ফলে প্রতি মাসে আসা ৫০ লাখ ডোজ টিকার ব্যবস্থাপনা করতে খুব বেশি বেগ পেতে হচ্ছে না। এর বেশি এলেও কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না।
হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা
চুক্তি অনুযায়ী, টিকা দেশে আসার পর তা নিজ তত্ত্বাবধানে প্রত্যেক জেলায় পৌঁছে দেবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো। এরপর সেই টিকা উপজেলায় নিয়ে যাবে সরকারি প্রতিষ্ঠান।
টিকা প্রয়োগে অগ্রাধিকার তালিকা প্রস্তুত করতে উপজেলাভিত্তিক কমিটি গঠন করে দিয়েছে সরকার। উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তার নেতৃত্বে করা এ কমিটি টিকা প্রয়োগের সার্বিক কার্যক্রম সম্পাদন করবে।
১০ ধরনের অগ্রাধিকার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে জানিয়ে বলা হয়, করোনা মোকাবেলায় যুক্ত স্বাস্থ্যকর্মী, সম্মুখ কর্মী, রোগ প্রতিরোধে অক্ষম, বয়োজ্যেষ্ঠ, দীর্ঘমেয়াদী রোগে ভোগা প্রাপ্তবয়স্করা স্থান পাবেন।
করোনার প্রতিকী ছবি
অগ্রাধিকার তালিকায় দেশে মুক্তিযোদ্ধা দুই লাখ ১০ হাজার, সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী ৩ লাখ, বেসরকারি কর্মী ৭ লাখ, স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা এনজিও কর্মী এক লাখ ৫০ হাজার এবং গণমাধ্যম কর্মী ৫০ হাজার রয়েছেন।
এ ছাড়া জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ৫ হাজার, দুই লাখের বেশি পুলিশ সদস্য রয়েছেন। আর ক্যান্সার, যক্ষ্মা ও ডায়াবেটিস রোগী এক লাখ দুই হাজার, সেনাবাহিনীর জন্য ৩ লাখ, সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধি ৭০ হাজার ধরা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মা, শিশু ও কিশোর স্বাস্থ্য কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত হবে করোনার টিকাদান কর্মসূচি। এ কর্মসূচির পরিচালক ডা. শামসুল হক জানান, টিকা দিতে ১০ হাজার ৪০০টি টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতি টিমে থাকা ৬ জনের মধ্যে দুই জন স্বাস্থ্য সহকারী ও বাকি ৪ জন স্বেচ্ছাসেবক।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
প্রত্যের টিম মাসে ১২ দিন করে একটানা ৬ মাস টিকাদান কর্মসূচিতে দায়িত্ব পালন করবে। তাদের প্রশিক্ষণের গাইডলাইন চূড়ান্ত করা হয়েছে, যেকোনো সময় শুরু হবে প্রশিক্ষণ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (আইএমএস) ডা. মো. হাবিবুর রহমান জানান, ধাপে ধাপে দেশের ৮০ ভাগ মানুষকে করোনা টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। বাকি ২০ ভাগের ‘হার্ড ইমিউনিটি’ বা গোষ্ঠীর মধ্যে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা হবে। এর ফলে পর্যায়ক্রমে দেশের সব মানুষ টিকার আওতায় আসবে।
টিকার খরচের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, মোট খরচের একটা হিসাব আছে, তা এখনই বলা যাবে না। তবে সেরামের প্রতি ডোজ টিকা সব মিলিয়ে ৫ ডলার পড়বে। আর কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া টিকা স্বল্পমূল্যে তথা প্রতি ডোজ ১.৬০ থেকে ২ ডলার দাম পড়বে, কিছু পাওয়া যাবে বিনামূল্যে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.