তুরস্কের বদান্যতায় ১০১ দিন পর মায়ের কোলে শিশু

তুরস্ক সরকারের বদান্যতায় ১০১ দিন পর সন্তানদের দেখা পেলেন জোড়া লাগানো যমজ সন্তানের মা। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে ওই মাকে আঙ্কারায় নিয়ে আসে তুরস্ক।

তুরস্কের বদান্যতায় ১০১ দিন পর মায়ের কোলে শিশু

যমজের নাম বেসাম ও ইহসান। জন্ম নিয়েছিলেন গত বছরের ২৫ অক্টোবর, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইদলিবে। এ রকম যমজের মৃত্যুর হার কম হলেও সময়ের আগেই জন্ম নিয়েছিল তারা; ফলে অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল।

ডাক্তার নেই, হাসপাতাল নেই, চারদিকে ধ্বংসস্তূপ। এর মধ্যে স্বাভাবিক জন্ম হচ্ছিল না। এ ভয়াবহ অবস্থায় তুরস্কের সহায়তা চেয়েছিলেন বাবা মাহমুদ সালিহ। সাড়া দেয় তুরস্ক। প্রথমে তাকে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ হাতাইয়ে আনা হয়; এরপর ভর্তি করা হয় ‘আঙ্কারা মেডিকেল ফ্যাকাল্টি হসপিটাল’-এ।

ঝক্কি ছিল, এরপরও যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল থেকে বাবাকে আঙ্কারায় এনেছিল তুরস্ক কর্তৃপক্ষ। ইদলিবে থেকে গিয়েছিলেন মা এবং তার অন্য তিন সন্তান।

তুরস্কের বদান্যতায় ১০১ দিন পর মায়ের কোলে শিশু

ইদলিব থেকে আঙ্কারায় আসার মর্মস্পর্শী গল্প আনাদুলু এজেন্সিকে আবেগজড়িত কণ্ঠে বর্ণনা করেন মাহমুদ। তিনি জানান, সন্তানদের ভয়ানক অবস্থা দেখে তিনি চিকিৎসার জন্য তুরস্কের শরণাপন্ন হয়েছিলেন।

‘আল্লাহর শুকরিয়া, আমাদের অনুরোধ রক্ষা করা হয়। আন্তাকিয়া জেলার একটি হাসপাতালে তাদের ভর্তি করাতে পারি’, বলেন মাহমুদ।

‘এরপর প্রয়োজনীয় কাজ সেরে বেসাম ও ইহসানকে আঙ্কারায় ট্রান্সফার করা হয়। সঙ্গে আমরা কেউ ছিলাম না, হাসপাতালের নার্স থেকে চিকিৎসক, সার্জন থেকে চিফ ফিজিশিয়ান- সবাই আমার সন্তানদের ভালোবেসে সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছেন।’

এরপর আলাদা করার অস্ত্রোপচারের দিন পর্যন্ত যমজের সার্বিক দেখভাল করার জন্য মায়ের প্রয়োজন পড়ে।

তুরস্ক সরকার মা ও অন্য তিন সন্তানকে তুরস্কে আনার পেছনে জোর চেষ্টা শুরু করে এবং তাদের একত্রিত করা সম্ভব হয়।

মাহমুদ বললেন, ‘আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল এটি। স্ত্রী ও সন্তানদের রেখে আসতে হয়েছিল। কঠিন সময় ছিল। আলহামদুলিল্লাহ, তারা এখন এখানে, আমরা একত্রিত হতে পেরেছি।’

তুরস্ক সরকার, কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন মাহমুদ। ১০১ দিন পর যমজকে দেখতে পেয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে মা।

যমজের শারীরিক অবস্থা জানিয়ে হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ডা. সাদেত আরসান বলেন, বাচ্চা দুটির বর্তমান অবস্থা চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিরল। তাদের পেট ও বুকের দিকে জোড়া লাগানো। একজনের কিডনি, ডাক্ট সিস্টেম, ব্লাডার ও পেনক্রিয়াস নেই।

সময় নিয়েই ধীরে ধীরে অনেকগুলো অপারেশনের মাধ্যমে দুজনকে আলাদা করতে হবে। আমাদের সর্বশেষ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, দ্রুততার সঙ্গে অপারেশন নয়, সময় নিয়ে করব। অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হতে তাদের আরও বড় হতে হবে।’