বিজেপির বিরুদ্ধে হুঙ্কার ছাড়লেন আসাদউদ্দিন ওয়াইসি

আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ (মিম)-এর সুপ্রিমো তিনি। অভিযোগের অন্ত নেই তার বিরুদ্ধে। বলা হয়, তার দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) ‘বি’ টিম। রাজ্যে রাজ্যে গিয়ে বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দেন তিনি। তাতে তার ভ্রূক্ষেপ নেই। তার দাবি, বিজেপির হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে লড়াইটা তিনিই করছেন।

অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (মিম)-এর সুপ্রিমো আসাদউদ্দিন ওয়াইসি

একটা সময় হায়দরাবাদের ছোট দল হিসেবে পরিচিত ছিল ‘মিম’। ধীরে ধীরে সেই দল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রভাব বিস্তার করা শুরু করেছে। মহারাষ্ট্র ও বিহারের মতো রাজ্যে জনপ্রতিনিধি আছে মিমের। পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে তৈরি হয়েছে সংগঠন। এবার ওয়াইসি পা বাড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজ্য গুজরাটে। কিছুদিন পরই সেখানে স্থানীয় নির্বাচন। তার আগে গুজরাটে জনসভায় গিয়ে মূলত কংগ্রেসকে আক্রমণ করলেন মিম প্রধান। তার অভিযোগ, বিরোধী হিসেবে দুর্বল হয়ে পড়েছে কংগ্রেস। প্রাণভয়ে ভীত তারা।

হায়দরাবাদের লোকসভার এ সদস্য বললেন, ‘লোকে বলে মিম নাকি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রকারী। আমি বলছি, যারা একথা বলছে, তারাই ষড়যন্ত্রকারী। ওরা হিন্দু জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে হিন্দু জাতীয়তাবাদ দিয়েই লড়াই করতে চায়।’ ওয়াইসির দাবি, হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার একমাত্র অস্ত্র হলো সংবিধান। বিজেপির বিরুদ্ধে আমরা লড়ব সংবিধানকে হাতিয়ার করে। তার পরিষ্কার বক্তব্য, কংগ্রেসসহ অন্য বিরোধীরা যদি শক্তিশালী হতো, তাহলে তার দলকে ভোটে লড়তেই হতো না। ওয়াইসির কথায়, ‘ওরা মোদি আর আরএসএসকে ভয় পায়, কারণ ওরা মৃত্যুকে ভয় পায়। মিম কর্মীরা শুধু আল্লাহকে ভয় পায়, কোনো মানুষকে নয়।’

অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (মিম)-এর সুপ্রিমো আসাদউদ্দিন ওয়াইসি

গুজরাটের জনসভায় বিজেপির চেয়ে কংগ্রেসকে বেশি আক্রমণ করতে দেখা গেছে ওয়াইসিকে। এর আগে পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের নির্বাচনের সময়ও একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছিল। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, বিজেপির দাপটে কংগ্রেসসহ অন্য বিরোধীরা দুর্বল হচ্ছে, মিম সেই শূন্যস্থান দখল করার চেষ্টা করছে। আর সে কারণেই ওয়াইসি মূলত কংগ্রেসকে টার্গেট করছেন।

তিন তালাক রদ করার বিরোধিতা থেকে শুরু করে বাবরি মসজিদ ভাঙার ইস্যু বা নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ওয়াইসি যেভাবে সরব, তাতে ভারতীয় মুসলিম সমাজের একটা বড় অংশ তাকে সেদেশে মুসলিমদের ‘নতুন নেতা’র ভূমিকায় দেখতে শুরু করেছেন।

প্রায় ৯৩ বছরের পুরনো রাজনৈতিক দল মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের প্রভাব মাত্র বছরকয়েক আগেও হায়দরাবাদ শহরের গন্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এখন মহারাষ্ট্র থেকেও তাদের নির্বাচিত এমপি ও এমএলএ আছেন, বিহার বিধানসভাতেও তাদের নতুন পাঁচজন বিধায়ক যুক্ত হলেন।

আসাদউদ্দিন ওয়াইসি যেভাবে দেশের নতুন নতুন প্রান্তে কর্মী-সমর্থক বাড়াচ্ছেন, তাতে তাকে ভারতীয় মুসলিম সমাজের উদীয়মান মুখ হিসেবে অনেকে দেখছেন ঠিকই, কিন্তু কংগ্রেস তাকে দিচ্ছে ‘ভোট-কাটুয়া’র তকমা।

হায়দরাবাদের রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক শাহিদ মিও বললেন, ‘এটা ঠিকই যে ওয়াইসি খুব দ্রুত উঠে আসছেন ও মানুষ তাকে নানা জায়গায় গ্রহণও করছে, তবে তাকে নিয়ে নানা বিপরীতমুখী ন্যারেটিভও আছে।’

‘অনেকেই তাকে বিজেপির ‘বি’ টিম হিসেবে দেখেন, কারণ এখনও ভারতীয় মুসলিম সমাজের বেশির ভাগ ভোট কংগ্রেস বা তাদের জোটের দলগুলোই পায়। কিন্তু ওয়াইসি সেই ভোট কেটে বিজেপিরই সুবিধা করে দিচ্ছেন বলে তাদের অভিযোগ।’

‘এখন নতুন নতুন রাজ্যে তার আবেদন কতটা স্থায়ী হয়, সেটা দেখার বিষয়। কিন্তু এখানে অন্তত নানা সেবামূলক কাজকর্ম, ত্রাণ ইত্যাদির সুবাদে বলা যেতে পারে হায়দরাবাদ মানেই ওয়াইসি, ওয়াইসি মানেই হায়দরাবাদ।’

বিহারে যেমন এই প্রথমবারের মতো ভোটে লড়ল ওয়াইসির দল, আর মুসলিম-অধ্যুষিত সীমাঞ্চল ও আশপাশে ২০টি আসনে প্রার্থী দিয়ে পাঁচটিই জয় পেয়েছেন তারা।

সেই সঙ্গে তারা আরজেডি-কংগ্রেসের জোটকে হারিয়ে দিয়েছে আরও বহু আসনে।

বিহারের পূর্ণিয়া-কাটিহার অঞ্চলে মুসলিম তরুণ-তরুণীরাও বলছিলেন, ওয়াইসির মতো বলিষ্ঠ একজন নেতা, যার কোনো অপরাধের ইতিহাস নেই, তাদেরকে আকৃষ্ট করেছেন।

ওয়াইসির পরবর্তী টার্গেট পশ্চিমবঙ্গ। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বাংলাভাষী মুসলিমদের মধ্যে তার আবেদন কতটা হবে, তা নিয়ে সন্দিহান কলকাতার সমাজ বিশ্লেষক শাওনি শবনম।

শবনম বললেন, ‘হায়দরাবাদের রাজনীতিবিদ উনি, দেশের পশ্চিমাঞ্চলেও কিছুটা প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে কতটা সুবিধা করতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কলকাতায় কিছু উর্দুভাষী মুসলিমের মধ্যে হয়তো পারবেন, কিন্তু এ রাজ্যের বেশির ভাগ বাংলাভাষী মুসলিম জনগোষ্ঠী তাকে কতটা গ্রহণ করবেন, তা নিয়ে আমি নিশ্চিত নই।’

তবে পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম ভোটে ভাগ বসিয়ে ওয়াইসি তার ক্ষমতায় ফেরার রাস্তা কঠিন করে তুলবেন কি না, সে বিষয়টা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা ব্যানার্জি নিঃসন্দেহে দুশ্চিন্তায় আছেন।