আপনি পড়ছেন

কাশ্মির, সাইপ্রাস ও নাগরনো-কারাবাখের মতো ইস্যু নিয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে পরস্পরকে সহায়তা করেছে তুরস্ক, পাকিস্তান ও আজারবাইজান।

turkey pakistan azerbaijan

দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সম্প্রতি বৈঠক করেছেন ইসলামাবাদে। সেখানে তারা পরস্পরের সহযোগী হয়ে থাকার অঙ্গীকার করেছেন। ইসলামফোবিয়া ছড়ানোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বিভিন্ন অঞ্চলে নির্যাতিত মুসলিমদের পাশে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তারা।

নাগরনো-কারাবাখ যুদ্ধে আজারবাইজানের পক্ষে সর্বশক্তি দিয়ে নেমেছিল তুরস্ক। আর্মেনিয়াকে পিছু হটতে বাধ্য করেছিল তুরস্কের ড্রোন। আর, আজারবাইজানের অখণ্ডতা রক্ষায় সরাসরি সহায়তা দিয়েছিল পাকিস্তান।

পাকিস্তান ও আজারবাইজনের সম্পর্ক বহুমুখী। সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের সামরিক শিল্পের বিকাশ সাধিত হয়েছে। ইসলামাবাদ বাকুর জন্য অস্ত্র বানাচ্ছে। বিগত দিনে আজারবাইজানের অন্তত ১০০ সামরিক ইউনিটকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে পাকিস্তান। জেএফ-১৭ থান্ডার মাল্টিরোল ফাইটার এয়ারক্রাফট কেনার ব্যাপারে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা চলছে আজারবাইজানের। দুই দেশের সমন্বয়ে জেএফ-সেভেনটিন ব্লক থ্রি ফাইটার উৎপাদন প্রক্রিয়াধীন। ইসলামাবাদ থেকে প্রশিক্ষণ বিমান কিনতেও আগ্রহী বাকু।

আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে তুরস্কের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাকিস্তানের সৈন্যরা স্বশরীরে যুদ্ধ করেছেন বলে সংবাদমাধ্যমে বলা হয়। পাকিস্তান এ বক্তব্য অস্বীকার করলেও বলেছে, ‘আজারবাইজানের নাগরিকদের ওপর আর্মেনীয় বাহিনীর হামলা নিন্দনীয়। ভয়াবহ পরিস্থিতি এড়াতে আর্মেনিয়াকে অবশ্যই সামরিক পদক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।’

ইসলামাবাদে তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের পর দেওয়া যৌথ ঘোষণায় জম্মু ও কাশ্মিরের জনতাত্ত্বিক কাঠামো পরিবর্তনে ভারতীয় তৎপরতায় উদ্বেগ জানানো হয় এবং সাইপ্রাস ইস্যু সমাধানের আহ্বান জানানো হয়।

আজারবাইজানের সঙ্গে পাকিস্তান ও তুরস্কের সম্পর্ক নতুন নয়। সোভিয়েত পতনের পর থেকেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে তাদের। আজারবাইজানকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম দেশ তুরস্ক, দ্বিতীয় দেশ পাকিস্তান। পাকিস্তানই বিশ্বে একমাত্র দেশ, যারা আর্মেনিয়াকে এখনও স্বীকৃতি দেয়নি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশ তিনটিকে একই বন্ধনে আসতে যে বিষয়টি বাধ্য করেছে, সেটি হলো, তিন দেশই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। এটিই তিন পক্ষ যৌথ ঘোষণায় জোর দিয়ে বলেছে।

এরইমধ্যে বাকুকে সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা দিয়েছে আঙ্কারা। ইসলামাবাদও চাচ্ছে, তাদের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক আরও মজবুত হোক। সম্প্রতি আজারবাইজান ও পাকিস্তানের বিমানবাহিনী প্রধানরা বৈঠক করেন। বৈঠকে যৌথ পাইলট প্রশিক্ষণ এবং সামরিক অনুশীলনের সিদ্ধান্ত হয়।

পাকিস্তান ও তুরস্কের মধ্যে তো বড়সড় প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চলছেই। পাকিস্তান নৌবাহিনীর জন্য মিলজেম-শ্রেণির যুদ্ধজাহার তৈরি করছে তুরস্ক। পাকিস্তান থেকে ৫২টি মাশশাক প্রশিক্ষক বিমান কিনেছে আঙ্কারা।

তুরস্কের সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বছর ছিল ২০১৬। একদিকে সন্ত্রাসী হামলা, অন্যদিকে এরদোগানের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থান। এই ক্রান্তিকালে এগিয়ে এসে বন্ধুত্বের পরিচয় দেয় পাকিস্তান। আঙ্কারার সহযোগিতায় সেখানে সেনাপ্রধানকে পাঠায় পাকিস্তান।

দুই বছর আগে তুরস্কের মুদ্রার অধপতন শুরু হলে পাকিস্তান দেশব্যাপী তুর্কি লিরা ক্রয় অভিযান শুরু করে। এতে মানসিক এবং নৈতিক সমর্থন পায় তুরস্ক। এরইমধ্যে পাকিস্তানে তুরস্কের বিনিয়োগ সাত হাজার পাঁচশ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। সাইপ্রাস ইস্যুতেও তুরস্ককে নিরঙ্কুশ মদত দিয়ে আসছে পাকিস্তান।

দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে বড় সামরিক সরঞ্জাম চুক্তি। এই চুক্তির অধীনে তুরস্কের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ৩০টি সামরিক অ্যাটাক হেলিকপ্টার কেনে পাকিস্তান। অন্যদিকে, পাকিস্তান থেকে সুপার মুশশাক বিমান কেনার পাশাপাশি পাকিস্তানের তিনটি সাবমেরিন আপগ্রেড এবং যৌথভাবে একটি ফ্লিট ট্যাংকার নির্মাণের চুক্তি করে তুরস্ক।

সম্প্রতি পাকিস্তানের শক্তি বাড়ায় তুরস্কের প্রতিরক্ষা কোম্পানি এসটিএমের সহযোগিতায় নির্মিত ১৭ হাজার টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এক অত্যাধুনিক জাহাজ। জাহাজটি পাকিস্তানে নির্মিত সর্ববৃহৎ সামরিক জাহাজ। পাকিস্তানকে সরবরাহের জন্য চারটি করভেট নির্মাণের টেন্ডার জিতে নেয় তুরস্কের প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান। এরদোয়ান সরকারকে পাকিস্তানকে আটটি সাবমেরিন দিচ্ছে বলেও খবর বেরিয়েছে।

তুরস্ক, পাকিস্তান, আজারবাইজান- তিন দেশের যুথবদ্ধ সামর্থ্য দেখেছে বিশ্ব। তাদের পরিকল্পনা কী, সামনের যৌথ অভিযান কোথায় গিয়ে থামবে, এখন তা দেখার অপেক্ষা।

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.