তুরস্কের অস্ত্র কোন কোন দেশে যায়?
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রতিরক্ষা খাতে তুরস্কের সাম্প্রতিক অগ্রগতি বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে। যে দেশটি কিছুদিন আগেও প্রতিরক্ষা চাহিদা মেটাতে বিদেশিদের ওপর নির্ভরশীল ছিল, সেই দেশটি এখন নিজেদের তৈরি অত্যাধুনিক অস্ত্রে সমৃদ্ধ। কী না বানাচ্ছে তারা- যুদ্ধজাহাজ, ফাইটার জেট, ড্রোন সব। নিজেদের প্রয়োজনই শুধু মেটাচ্ছে না তুরস্ক, অন্য দেশকে অস্ত্র বিক্রিও করছে তারা।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হুলুসি আকর
২০০৩ সালে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ক্ষমতায় আসার পর প্রতিরক্ষা খাতে গভীর মনোযোগ দেয় তুরস্ক। বিভিন্ন অস্ত্র উৎপাদন শুরু করে তুর্কি কোম্পানিগুলো। স্থলযুদ্ধের বিভিন্ন উপকরণ নির্মাণ দিয়ে শুরুর পর যুদ্ধজাহাজ, অ্যাটাক হেলিকপ্টার এমনকি সর্বাধুনিক ফাইটার জেটও নির্মাণ করছে তারা। পাশাপাশি ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ারের বিভিন্ন প্রযুক্তিও উৎপাদন করছে দেশটি। হেলিকপ্টার ড্রোন, মনুষ্যবিহীন নৌযানেরও সফল পরীক্ষা চালিয়েছে তারা। এখন তাদের মনোযোগ মনুষ্যবিহীন সাঁজোয়া যান, আন্ডারগ্রাউন্ড অ্যান্ড টানেল ওয়ারফেয়ার উইপন্স এবং ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী অস্ত্র উৎপাদনে।
বাংলাদেশে তুরস্কের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রির বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। খবরে বলা হয়েছে, সম্প্রতি সফরে এসে অস্ত্র বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসগলু।
প্রতিরক্ষা শিল্পে গত কয়েক বছর ধরে অভূতপূর্ব উন্নতি করা দেশটি ক্রমশই নিজের অস্ত্রের বাজার সম্প্রসারণ করছে। দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব এশিয়া, এমনকি ইউরোপেও আছে তুর্কি অস্ত্রের ক্রেতা।
এরদোয়ান ‘ভিশন ২০২৩’ হাতে নেন দেশকে প্রতিরক্ষা খাতে স্বনির্ভর করতে। শুরুতে সাঁজোয়া যান দিয়ে শুরু করলেও এখন ট্যাঙ্ক, মিসাইল, রকেট লঞ্চার, ড্রোন- সব কিছুই তৈরি হচ্ছে তুরস্কে। এখন তুরস্কের অনেক সমরাস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা বিশ^মানের পণ্য উৎপাদান করে।
বছর চারেক আগে ‘আসেলসান’ ও ‘টার্কিশ অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামের দুটি তুর্কি প্রতিরক্ষা সামগ্রী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিশে^র সেরা ১০০ কোম্পানির তালিকায় স্থান করে নেয়।
কমদামে মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করায় অনেক দেশই আকৃষ্ট হয়েছে তুরস্কের প্রতিরক্ষা সামগ্রী কিনতে। মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব এশিয়া এমনকি ন্যাটো সদস্য দেশের কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে তারা।
তুরস্কের যুদ্ধ সরঞ্জাম
বর্তমানে তুরস্কের সমরাস্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতা মধ্য এশিয়ার দেশ তুর্কমেনিস্তান। বিশে^ অস্ত্র আমদানিকারক দেশগুলোর তালিকায় তুর্কমেনিস্তানের অবস্থান ৪০ নম্বরে। ২০১৭ সালে দেশটি আমদানি করেছে ৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অস্ত্র। আর এর বেশির ভাগই তুর্কি পণ্য।
ওই অঞ্চলে তুরস্কের অস্ত্রের আরেক বড় ক্রেতা আজারবাইজান। এতদিন বিষয়টি প্রকাশ্যে না এলেও ২০২০ সালের নাগরনো-কারাবাখ যুদ্ধের পর সেটি আর গোপন থাকেনি। তুর্কি অস্ত্র দিয়ে ওই যুদ্ধে আর্মেনিয়ার দখল থেকে অনেক এলাকা মুক্ত করেছে আজারবাইজান। তুরস্কের বেরাকতার টিবি টু ড্রোন তার ধ্বংসক্ষমতা দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
এই বেরাকতার টিবি টু ড্রোন সবার আগে পেয়েছে কাতার। কাতার সশস্ত্র বাহিনীর কাছে ছয়টি বেরাকতার ড্রোন আছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে তুর্কি সমরাস্ত্রের বড় ক্রেতা কাতার। দোহার সঙ্গে আঙ্কারার সম্পর্ক অনেক বছর ধরেই বন্ধুত্বপূর্ণ। কাতারের নৌ বাহিনী তুরস্কের তৈরি যুদ্ধ জাহাজও ব্যবহার করছে। এছাড়া ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যানসব স্থলযুদ্ধের বিভিন্ন উপকরণ কাতারের কাছে বিক্রি করেছে তুরস্ক।
তুরস্কের অস্ত্রের ক্রেতা দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে কাজাখস্তান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আবর আমিরাত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন থাকলেও অস্ত্র বাণিজ্যে সেটি খুব একটা প্রভাব ফেলেনি। এই দুটি দেশ প্রধানত স্থলযুদ্ধের উপকরণ ও ছোট সমরাস্ত্র কেনে তুরস্কের কাছ থেকে।
দক্ষিণ এশিয়ায় তুরস্কের সমরাস্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতা পাকিস্তান। এরইমধ্যে পাকিস্তান নৌবাহিনীর জন্য যুদ্ধজাহাজ বানিয়েছে তুরস্ক। খবরে বলা হয়, পাকিস্তানকে দুটি করভেট সরবরাহ করেছে তুর্কি প্রতিষ্ঠান আসফাত। আরেকটি জাহাজের নির্মাণ কাজ চলছে। ২০১৮ সালের এক চুক্তি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি পাকিস্তান নৌবাহিনীর জন্য চারটি করভেট নির্মাণ করার কথা। যার দুটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে তুরস্কে আর তৃতীয়টির নির্মাণ কাজ চলছে করাচিতে। এছাড়া তুরস্কের নিজস্ব উদ্ভাবিত টি-ওয়ান টুয়েন্টি নাইন অ্যাটাক হেলিকপ্টার কেনার চুক্তিও করেছে পাকিস্তান।
এ অঞ্চলে আফগানিস্তানের কাছেও অস্ত্র বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু করেছে তুরস্ক। এরপর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশকেও। ডিসেম্বরের শেষ সময়ে এসে উত্তর আফ্রিকার তিউনিসিয়ার কাছে ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রির চুক্তি চূড়ান্ত করেছে তুরস্ক।
তুর্কি সমরাস্ত্রের আরেক উল্লেখযোগ্য ক্রেতা ইউক্রেন। ছয়টি টিবি টু ড্রোন কিনেছে তারাও। আরও ৫টি সরবরাহ করার কথা রয়েছে এ বছর। এছাড়া সম্প্রতি ইউক্রেনের নৌবাহিনীর জন্য করভেট নির্মাণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে তুরস্ক।
যাদের কপালে অস্ত্র বিক্রেতার তকমা রয়েছে, তারা তুরস্কের এ ব্যবসাকে সহজে মেনে নিতে পারছে না। এ উদ্দেশ্যে এগোতে গিয়ে মাঝেমধ্যে হোঁচট খেতে হলেও পরাশক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার কাজে বিরতিহীনভাবে এগোচ্ছে দেশটি।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.