আপনি পড়ছেন

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়নে সহযোগিতা না করার জন্য ইরানকে দোষারোপ করেছে। চার দেশের এ বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে ইরান বলেছে, আমেরিকা ও ইউরোপের অসহযোগিতার কারণেই তেহরান পরমাণু সমঝোতার আওতায় যেসব সহযোগিতা করার কথা ছিল, তার অনেকগুলো স্থগিত করেছে।

iran nuclear power plantইরানের একটি পারমাণবিক প্রকল্প পর্যবেক্ষণ করছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট, তেহরানের দাবি- তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ

ইরান এরইমধ্যে ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে পরমাণু সমঝোতার বাড়তি প্রটোকল বাস্তবায়ন স্থগিত করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। ইরানের সঙ্গে চলমান সংকট নিরসনের উপায় নিয়ে আলোচনা করতে শনিবার তেহরান যাচ্ছেন আইএইএ’র মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি। এ ইস্যুতে চীন বলেছে, অচলাবস্থা নিরসনের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে পরমাণু সমঝোতায় আমেরিকার ফিরে আসা।

ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, মার্কিন একাধিপত্যবাদী নীতির মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ইরানের পরমাণু সমঝোতা রক্ষার ক্ষেত্রে জোরদার ভূমিকা পালন করতে হবে।

এদিকে, ইরানের বিরুদ্ধে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে যে সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাতিল করেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এর পাশাপাশি তিনি ইরান এবং পরমাণু সমঝোতার অন্য পক্ষগুলোর সঙ্গে এ ইস্যুতে আলোচনায় অংশ নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। আপাত দৃষ্টিতে ইরানের দেওয়া হুমকি বাস্তবায়নের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে, ওয়াশিংটনের দ্বিমুখী আচরণ ততই বাড়ছে। এ ইস্যুতে ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি আছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

খবরে বলা হয়, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থা সম্পর্কে আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যে যৌথভাবে বিবৃতি দিয়েছে, তার নিন্দা করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ।

বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠকে বসেন এবং ওই বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। যৌথ বিবৃতিতে পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়নে সহযোগিতা না করার জন্য তারা ইরানকে দোষারোপ করেন।

iran nuclear power plant innerইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি

পশ্চিমা পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এ অভিযোগের জবাবে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমেরিকা ও ইউরোপের অসহযোগিতার কারণেই তেহরান পরমাণু সমঝোতার আওতায় যেসব সহযোগিতা করার কথা ছিল, তার অনেকগুলো স্থগিত করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে দেওয়া পোস্টে এ মন্তব্য করেন তিনি।

জারিফ চার দেশের সমালোচনা করে বলেন, এসব দেশ ইরানের ভুল খুঁজে বের করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত, কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের যে প্রচণ্ড রকমের ব্যর্থতা রয়েছে, সেদিকে তারা নজর দিতে ইচ্ছুক নয়। তিনি বলেন, এ চেষ্টা বাদ দিয়ে ইউরোপের তিন দেশ ও আমেরিকাকে অবশ্যই পরমাণু সমঝোতায় দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পথে ফিরে আসতে হবে। পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা আরোপের নামে ইরানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদ চালিয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন জাওয়াদ জারিফ।

এদিকে চীন বলেছে, ইরানের পরমাণু ইস্যুতে যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসনের একমাত্র উপায় হচ্ছে এ সমঝোতায় আমেরিকার ফিরে আসা। পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকার বেরিয়ে যাওয়ায় এ অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছে বেইজিং।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইং সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, চীন মনে করে, বর্তমান সংকট নিরসনে একমাত্র সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে এ সমঝোতায় আমেরিকার ফিরে আসা।

এরই মধ্যে ইরান আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে পরমাণু সমঝোতার বাড়তি প্রটোকল বাস্তবায়ন স্থগিত করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। বাড়তি প্রটোকল বাস্তবায়নে সহযোগিতা বন্ধ করে দিলে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি কমিশনের প্রতিনিধিদল আকস্মিকভাবে ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলো পরিদর্শন করতে পারবে না।

ইরানের সঙ্গে চলমান সংকট নিরসনের উপায় নিয়ে আলোচনা করতে শনিবার তেহরান সফরে যাচ্ছেন আইএইএ’র মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি। তার এ সফর সংকট নিরসনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে চীনা মুখপাত্র হুয়া চুনইং আশা প্রকাশ করেন।

এদিকে, গত ২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা নেওয়ার পর ইরান ইস্যুতে এই প্রথম জো বাইডেন ট্রাম্প প্রশাসনের কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলেন। বাইডেনের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে দেওয়া এক চিঠিতে মার্কিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত রিচার্ড মিলস বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে দেওয়া তিনটি চিঠি প্রত্যাহার করছে ওয়াশিংটন। তিনটি চিঠির মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন জাতিসংঘকে জানিয়েছিল যে, ইরানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের আগের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করল আমেরিকা।

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দেওয়া চিঠি বার্তা সংস্থা এপির হাতে পড়েছে। তাতে মিলস বলেছেন, ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতার সিদ্ধান্ত বাদ দিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা হয়েছিল, কিন্তু তা আর পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে না।

সিএনএন ও ডয়চে ভেলের খবরে বলা হয়, পরমাণু চুক্তি নিয়ে ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি আছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ইরানের পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনার আমন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্র গ্রহণ করবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের যেকোনো আমন্ত্রণে ওয়াশিংটন ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাবে। ওই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এই জাতীয় বৈঠক হলে আমরা সেখানে উপস্থিত থাকব।’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এ জাতীয় বৈঠক আয়োজনের জন্য প্রস্তুত আছেন এমন ইঙ্গিত দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ওই মন্তব্য আসে। ইরানের সঙ্গে পুনরায় কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ার বাইডেনের ইচ্ছাকে স্বাগত জানিয়েছে লন্ডন, প্যারিস ও বার্লিন। তবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.