ভারতের জন্য তিন তিনটি যুদ্ধ লড়েও তিনি “সন্ত্রাসী”

“সেনাবাহিনীতে সবাই আমাকে খুব পছন্দ করতো। আমি রেসলিংয়ে ভালো ছিলাম, আমি আমাদের দলের সেরা কাবাডি খেলোয়াড় ছিলাম, বক্সিংয়েও আমার নাম ছিলো। আমি ২২ বছর ভারতের সেনাবাহিনীতে কাজ করেছি। দেশের হয়ে তিনটি যুদ্ধ করেছি, আর এখন ভারতের পুলিশ আমাকে বলছে সন্ত্রাসী,” আক্ষেপ করে সংবাদ মাধ্যমকে বলছিলেন গুরুমুখ সিং।

পাঞ্জাবের এই ৮০ বছর বয়সী ব্যক্তি ভারতে চলমান কৃষক আন্দোলনে যোগ দিতে গিয়ে সীমাহীন অপমানের শিকার হয়েছেন। এই বয়সে তাকে ১৫ দিন জেলবন্দি থাকতে হয়েছে। জেলে তাকে নোংরা-ময়লা স্থানে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে।

সম্প্রতি ভারত সরকার একটি কৃষি আইন পাশ করে। সেই আইনকে কৃষকদের জন্য ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করে ভারতের কৃষকরা আন্দোলন করছেন। নভেম্বরে আন্দোলনে যোগ দেন গুরমুখ। দিল্লির অভিমুখে অন্য কৃষকদের সাথে খোলা মাঠে তাবু টানিয়ে সরকারকে নিজেদের দাবির কথা বলতে শুরু করেন কৃষকরা।

এর মধ্যে ২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লিতে ট্রাক্টর মিছিলের আয়োজন করেন কৃষকরা। সেই মিছিলের এক পর্যায়ে পুলিশের সাথে কৃষকদের সংঘাত লেগে যায়। শত শত কৃষক দখল করে নেন দিল্লির লাল দুর্গ।

কিন্তু ৮০ বছর বয়সী গুরমুখের মুখে তরুণদের মতো এতো কিছু করার শক্তি ছিলো না। সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেন, “গ্রাম থেকে দিল্লি পর্যন্ত আসতেই আমি দুর্বল হয়ে পড়ি। ফলে ট্রাক্টর মিছিলে যোগ দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। আমি লাল দুর্গের দিকেও যেতে পারিনি। কিন্তু আমাকে লাল দুর্গে যাওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।”

তিন আরো বলেন, “দিল্লিতে আমরা যেখানে ছিলাম, সেখানে ২৮ জানুয়ারি রাতে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। এ সময় আমি তাবু থেকে বাইরে এলে পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করে। তারা আমাকে পুলিশের বাসে নিয়ে তুলে। আমার বয়স হয়ে গেলেও, শরীরের শক্তি এখনো আছে। এক পুলিশ আমার বাহু জোর করে ধরে বাসে তোলার চেষ্টা করলে তাকে ধাক্কা দিয়ে ছুটে আসি। এ সময় তার পোশাকে আমার হাত লেগে যায়। সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে অন্য পুলিশদের ডাকে এবং তার নিজের পোশাক টেনে ছিঁড়ে ফেলে।”

এই ঘটনার পরই গুরমুখকে গ্রেপ্তার করে তিহার জেলে পাঠানো হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, লাল দুর্গে বিক্ষোভ করতে যাওয়ার মুখে বাধা পাওয়ায় তিনি পুলিশের পোশাক ছিঁড়ে ফেলেন। এই অপরাধে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

“আমি ভারতের সেনাবাহিনীতে ২২ বছর কাজ করেছি। আর এখন মৃত্যুর আগে আমাকে শুনতে হচ্ছে যে আমি একজন সন্ত্রাসী। আমাকে টেনে-হিচড়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো এবং নোংরা জায়গায় থাকতে দেওয়া হয়েছিলো। আমি এই বয়সে এই অপমান কিছুতেই হজম করতে পারছি না,” দুঃখ করে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন গুরমুখ। তিনি ১৩ ফেব্রুয়ারি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।