টিকা নিয়ে আসার ‘পেছনের গল্প’

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ চলছে। বহু উন্নত দেশ এখনো টিকার দেখা পায়নি। এমন একটি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে চলছে টিকা প্রদানের উৎসব! কীভাবে এমন অর্জন সম্ভব হলো? এই প্রশ্নের উত্তরের মধ্যে আছে একটি চমকপ্রদ গল্প। আছে ব্যক্তিগত বন্ধুত্বের অসাধারণ নিদর্শন।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড টিকা বাজারে আসার আগেই উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটি উৎপাদনের দায়িত্ব পায় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। তখনই দেশের খ্যাতিমান ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি বেক্সিমকো বাংলাদেশে টিকা নিয়ে আসার লক্ষ্য স্থির করে। শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ। একটি ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে সেটি সম্ভবও হয়, যেখানে অন্য দেশগুলো এখনো টিকার জন্য হাহাকার করছে।

জানা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী আদর পুনাওয়ালার সঙ্গে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের একমাত্র পুত্র সায়ান এফ রহমানের। এই সম্পর্ককেই কাজে লাগানো হয়েছে টিকা নিয়ে আসার ক্ষেত্রে।

সায়ান এফ রহমান ও আদর পুনাওয়ালা

সায়ান এফ রহমান ও আদর পুনাওয়ালার বন্ধুত্বের সূত্র প্রিন্স অব ওয়েলস প্রতিষ্ঠিত বৃটিশ এশিয়ান ট্রাস্ট। দুজনেই এর সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। সায়ান এই ট্রাস্টের বাংলাদেশ অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের চেয়ারপারসন। আদর পুনাওয়ালা হলেন ফাউন্ডার্স সার্কেলের সদস্য।

বাবার পরামর্শে টিকার ব্যাপারে বন্ধু আদর পুনাওয়ালার সঙ্গে কথা বললেন সায়ান। পুনাওয়ালা শুনিয়ে দিলেন বাস্তবতার কথা। কিন্তু হাল ছাড়তে রাজি নন সায়ান। বন্ধুকে জানালেন, টিকা তার লাগবেই। বন্ধুর অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারলেন না আদর পুনাওয়ালাও। তবে শর্ত দিলেন, আগাম বিনিয়োগ করতে হবে।

টিকার দেখা নেই, অথচ ঝুঁকি নিয়ে অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মতো ৭০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বসলো বেক্সিমকো! এই অর্থ দিয়ে পাওয়া যাবে মাত্র ১০ লাখ ডোজ টিকা।

এসব আলোচনার মধ্যে তখনও সরকার প্রবেশ করেনি। সুযোগ বুঝে এরপর সায়ান এফ রহমান বন্ধুর কাছে বাংলাদেশের জন্য টিকা চাইলেন। আদর পুনাওয়ালা আগাম ১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা জানালেন। সালমান এফ রহমান আলোচনায় বসলেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে ৫০০ কোটি টাকা দিতে রাজি হয়ে গেলেন এবং বললেন, বাকি ৫০০ কোটি দেওয়া হবে অনুমোদনের পর।

সালমান এফ রহমান

প্রধানমন্ত্রীর শর্তে রাজি হলো সেরামও। ১ হাজার কোটি টাকায় পাওয়া যাবে ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন। আরো বিস্তারিত আলোচনার পর সেরাম, বেক্সিমকো ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সম্পন্ন হয়।