মিয়ানমার: মৃত্যু বাড়ছে, প্রতিরোধও বাড়ছে

সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ক্রমেই ফেটে পড়ছে মিয়ানমার। ফেব্রুয়ারির এক তারিখে দেশটিতে গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এরপর থেকে দেশটিতে টানা বিক্ষোভ চলছে।

এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা বিক্ষোভে প্রাণ গেছে অন্তত ৫৫ জনের। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন তরুণ বিক্ষোভকারি। গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে দেওয়া এবং রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তিদানই ছিলো তাদের একমাত্র দাবি।

কিন্তু বিক্ষোভকারিদের কোনো কথাই কানে তুলছে না দেশটির সেনা শাসক। উল্টো বিক্ষোভকারিদের উপর চলছে অবর্ণনীয় নির্যাতন। তাজা গুলি, রাবার বুলেট, স্টান গ্রেনেড, জলকামান থেকে শুরু করে টিয়ার গ্যাস, স্মোক বোমসহ নানা ধরনের আধুনিক গোলাবারুদ ব্যবহার করা হচ্ছে এই বিক্ষোভ ঠেকানোর জন্য।

কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। একের পর এক বিক্ষোভকারির মৃত্যুর পরও প্রতিরোধ বাড়িয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের তরুণরা। সাধারণ জনগণ, ছাত্র-শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন।

অনেক সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা সামরিক শাসকের জন্য কাজ করবেন না, তারা বরং কাজ করবেন জনগণের জন্য। তাদের এই ঘোষণা বহু সাধারণ মানুষকে বিক্ষোভে যোগ দিতে অনুপ্রেরণা দিয়েছে।

ইয়াঙ্গনের আশপাশের এলাকা এক মাস ধরে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়ে আছে। সেখানকার ঘরে ঘরে এখন বারুদের গন্ধ। ছোট শিশুরা পর্যন্ত টিয়ার গ্যাস ও বারুদের গন্ধে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কিন্তু তাদের মায়েদের কিছু করার থাকছে না।

বিবিসি এক খবরে জানিয়েছে, চলমান বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন বেশ কিছু পুলিশ অফিসারও। দেশটির ইতিহাসে অন্যতম বড় নাগরিক বিক্ষোভে যোগ দেওয়া পুলিশরা জানিয়েছেন, তারা জনগণের নিরাপত্তার জন্য কাজ করবেন।

বিক্ষোভে নানা রকম সৃষ্টিশীল উপায় বের করছেন বিক্ষোভকারিরা। রাস্তায় দাঁড়িয়ে অনবরত হাততালি ও গান গেয়ে যাওয়া, ছোট ছোট স্লোগানে দীর্ঘ পথে মিছিল করার পাশাপাশি এবার অনেক বিক্ষোভকারি মিয়ানমারের ঐতিহ্যবাহী পোশাক সারঙ পরে এসেছেন।

সারঙের প্রতি মিয়ানমারের সেনাদের এক ধরনের কুসংস্কার আছে, সারঙ পরিধান করা ব্যক্তিকে তাই তারা মারতে উদ্যত হতে পারে না। বিক্ষোভকারিরা বলছেন, সারঙ পরার উদ্দেশ্য হলো সেনাদের মনোবল ভেঙে দেওয়া।

রাস্তায় মিছিলে নামলে বা বিক্ষোভ করলে পুলিশ সহজেই তা ভেঙে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে বিক্ষোভকারিরা নিজেদের মতো দূর্গ করে নিচ্ছে। বালির খালি ব্যাগ, ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র দিয়ে ব্যারিকেডও তৈরি করছে বিক্ষোভকারিরা।

বিক্ষোভকারিরা যেখানেই যাচ্ছেন, সেখানেই পাচ্ছেন স্থানীয়দের নানা সহায়তা। কোথাও স্থানীয়রা খাবার বিতরণ করছে, কোথাও নিরাপত্তা সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে। ভবিষ্যত প্রজন্ম যাতে সেনাবাহিনীর কড়া শাসনের মধ্যে না থাকে, তা নিশ্চিত করতে সেনা শাসকদের উৎখাত করতে পুরো মিয়ানমার নেমে এসেছে এক কাতারে।

রাত নেমে এলেই বিক্ষোভকারিরা রাস্তায় রাস্তায় থালা-বাটি বাজিয়ে গণতন্ত্রের পক্ষে স্লোগান দিচ্ছেন। অনেকে বাসা-বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করছেন। বিক্ষোভের মাত্রা যাতে না কমে যায়, তা নিশ্চিত করতে বাড়ির বাইরে বের হতে না পারা নাগরিকরা তাদের বাড়ি থেকেই বিক্ষোভ করছেন। বারান্দায় দাঁড়িয়ে থালা-বাটি বাজিয়ে বিক্ষোভকারিদের পক্ষ নিচ্ছেন তারা।