আপনি পড়ছেন

দীর্ঘ ৩২ বছর পর চীনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইইউ। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে দেশটির বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপের ২৭ দেশের এ জোট। শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মধ্যে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও সম্পদ জব্দের মতো বিষয় রয়েছে। সর্বশেষ ১৯৮৯ সালে চীনের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে ছাত্রবিক্ষোভ ও তাদের ওপর সরকারের দমন, হত্যাযজ্ঞের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির বিরুদ্ধে অস্ত্র ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো ইইউ।

european union 1

মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আইনটি চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে গত বৃহস্পতিবার ঐক্যমতে পৌঁছান ইইউর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বিষয়টি বেইজিংয়ের কাছে কিভাবে উপস্থাপন করা যায় তা নিয়ে তারা প্রায় সপ্তাহ ধরে আলোচনা করেন।

চীনের উত্তরপশ্চিমে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল শিনজিয়াংয়ে বসবাসকারী সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় উইঘুরদের প্রতি চীনের দমন-নিপীড়নকে গণহত্যার সঙ্গে তুলনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বেশ কিছু দেশ। এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কর্মকান্ডের জন্যই চীনের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও সম্পদ জব্দের মতো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইইউ।

অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষর গ্রহণের পরই ইইউর এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি কার্যকর হবে। চলতি মাসের শেষের দিকে ইইউর দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে সিদ্ধান্তটি আনুষ্ঠানিক রূপ পেতে পারে।

জানা যায়, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী হিসেবে বিভিন্ন দেশের কর্মকর্তাদের একটি তালিকা তৈরি করেছে ইইউ। এ তালিকায় রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া এবং আফ্রিকার পাশাপাশি চীনের অনেক কর্মকর্তার নামও রয়েছে।

ইইউর এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, একদিকে তারা বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং আরো গভীর অর্থনৈতিক যোগসূত্র স্থাপনে গুরুত্ব দিচ্ছে, অন্যদিকে মানবাধিকার ও অন্যান্য ইস্যুতে দেশটির মুখোমুখি হতে তারা পিছপা হচ্ছে না।

ইইউ জোট ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি চীনকে প্রতিযোগী, সহযোগী এবং পদ্ধতিগত প্রতিদ্বন্ধী হিসেবেও দেখছে।

গত বছর সাইবার হামলার অভিযোগে চীনের দুজন ব্যক্তি এবং একটি কোম্পানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় ইইউ। এছাড়া শিনজিয়াংয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন, মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে দেশটির অন্যায় আচরণ এবং হংকংয়ের ওপর বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রণ আরোপের কারণে গত বছর প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংসহ অনেক চীনা কর্মকর্তার ওপর চাপ প্রয়োগ করে ইইউ।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ইইউর মানবাধিকার সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে তাদের নেতাদের আক্রমণ করেন প্রেসিডেন্ট শি। এছাড়া চীনের অন্যান্য কর্মকর্তারাও ইউরোপকে তাদের নিজস্ব ব্যাপারে নাক না গলানোর অনুরোধ করা হয়।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এমন টানাপোড়েন সত্ত্বেও অর্থনৈতিক যোগসূত্র বৃদ্ধি করতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপও গ্রহণ করেছে ইইউ এবং চীন। গত ডিসেম্বরেই বিনিয়োগ চুক্তি নিয়ে সাত বছরের আলোচনার সমাপ্তি টানে উভয়পক্ষ। যে চুক্তিটি নিয়ে সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব পেতে যাওয়া বাইডেন প্রশাসন ও ব্রাসেলসের কিছু আইনজীবি উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।

চীনের সঙ্গে বিনিয়োগ চুক্তির দ্বারপ্রান্তে থাকলেও মানবাধিকার, হংকং এবং নতুন নিষেধাজ্ঞার মতো বিষয়গুলোতে দেশটিকে চাপে রাখা হবে বলেও ইইউর কর্মকর্তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।

চলতি মাসের শুরুতে প্রথমবারের মতো এই মানবাধিকার নিষেধাজ্ঞাটি ব্যবহার করে ইইউ। রাশিয়ার বিরোধিদলীয় নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনিকে কারাদন্ড দেয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

১৯৮৯ সালে বেইজিংয়ের তিয়েনমান স্কয়ারে বিক্ষোভকারী ছাত্রদের ওপর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করতে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চীনের ওপর অর্থনৈতিক ও অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলো ইইউ। নব্বই এবং বিংশ শতাব্দীতে এসে দুপক্ষের সম্পর্ক আবার প্রাণ ফিরে পায়। যদিও চীনের ওপর এখনো একটি অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা বজায় রেখেছে ইইউ।

চীনের কারণে সৃষ্ট সমস্যাগুলো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করেছে ইইউ। পাশাপাশি বেইজিংয়ের সঙ্গে তারা একটি স্বতন্ত্র সম্পর্কও বজায় রেখেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইইউর একজন কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘একটি বাস্তব গতিশীলতা চলছে। আমাদের চীনা বন্ধুরা যে ফসল বপন করেছিল তা এখন ঘরে তুলছে।’

হংকংয়ে চীনের আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে গত জুলাইয়ে দেশটির বিরুদ্ধে কিছু লঘু কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেয় ইইউ।

এদিকে চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল ইইউকে বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করছেন। এর পেছনে দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত চীনে দেশটির রপ্তানি কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দ্বিতীয়ত মার্কেলের উৎসাহেই দ্রুত বিনিয়োগ চুক্তিটি সম্পন্ন হয়েছে।

সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা নিয়ে চীনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোন মন্তব্য করা হয়নি। বরাবরই উইঘুর সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের নিন্দার সম্মুখীন হয়েছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রও এ কারণে চীনের অনেক কর্মকর্তা ও কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যদিও চীন এসব অভিযোগ দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখান করেছে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.