নিম্নমুখী আবর্তের জালে ইইউ-চীন সম্পর্ক
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইউরোপিয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং চীনের মধ্যকার একসময়ের উষ্ণ আন্তরিক সম্পর্ক এখন ভঙ্গুরপ্রায়। বেইজিং ও ইইউর মধ্যে একাধিকবার পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞামূলক কার্যক্রমে দুপক্ষের সম্পর্কে তিক্ততা ক্রমে আরো বাড়ছে।
সম্প্রতি চীনের কর্মকর্তার ওপর ইইউর নিষেধাজ্ঞামূলক কর্মসূচি এবং জবাবে চীনের পাল্টা নিষেধাজ্ঞায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এখন টানটান উত্তেজনা চলছে। চীনে উত্তর-পশ্চিমের শিনজিয়াং অঞ্চলে উইঘুর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনমূলক কর্মকান্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত সপ্তাহে দেশটির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয় ২৭ দেশের জোট ইইউ। অথচ এরমাত্র তিনমাস আগেই চীন ও ইইউর মধ্যে একটি যুগান্তকারী অর্থনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা আসার কয়েকঘন্টার মধ্যেই পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে চীন। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের পাঁচজন সদস্যসহ ইইউর মোট ১০ জন ব্যাক্তি এবং চারটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে চীন। এ ঘটনায় ইইউর পক্ষ থেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা হয়।
বিগত কয়েকবছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সম্পর্কের অবনতিতে ইউরোপের দেশগুলো বেশ সুবিধে উপভোগ করছিলো। বেশ কয়েকবছর আলোচনার পর অবশেষে গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আরো উদার করার লক্ষ্য নিয়ে চুক্তিবদ্ধ হয় বেইজিং ও ব্রাসেলস। চুক্তিটিতে নিশ্চিত করা হয়, ইউরোপের বিনিয়োগকারীরা দ্রুত বর্ধনশীল চীনের বাজারে আরো সহজ প্রবেশাধিকার এবং দেশটিতে প্রতিযোগিতার একটি সমক্ষেত্র পাবে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে অনুমোতি পাওয়ার পর চুক্তিটি কার্যকর হবে।
অবশ্য এরইমধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য অব্যাহতভাবে প্রসারিত হওয়ার লক্ষণ দেখা গিয়েছে। গত ১৮ মার্চ প্রকাশিত ইইউর পরিসংখ্যার দপ্তর ইউরোস্ট্যাটের তথ্যানুযায়ী জানুয়ারিতে চীনে মোট ১৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে ইইউর দেশগুলো; যা আগের বছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।
কিন্তু পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞা ও বেইজিংয়ে ইউরোপীয় ব্রান্ডের পণ্য বয়কটের আহ্বানের বাণিজ্য সম্প্রসারণের এই ধারা এখন উল্টো দিকে বইছে।
ইইউর যে চারটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে তারমধ্যে জার্মানির মারকেটর ইনস্টিটিউট ফর চায়না স্টাডিজ অন্যতম। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত বিশেষজ্ঞ জেগরজ স্টেক বলেন, ‘তিয়ানানমেন স্কয়ার ঘটনার পর চীনের বিরুদ্ধে এটিই ইইউর আরোপিত প্রথম নিষেধাজ্ঞা।’
তিনি আরো বলেন, ইইউর পক্ষ থেকে পরিষ্কারভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে মানবাধিকার ইস্যুর দিক থেকেই এ পদক্ষেপ। চীন একে নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মনে করে এবং চীনের পাল্টা পদক্ষেপ পুরোপুরি অনপ্রিভেত।
এমপিদের ক্ষোভ
চীনের নিষেধাজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত পাঁচজন পার্লামেন্ট সদস্যের মধ্যে রাফায়েল গ্লাকসম্যান রয়েছেন। ফ্রান্সের গ্লাকসম্যান দীর্ঘদিন মানবাধিকার ইস্যু নিয়েও কাজ করেছেন। তার বিরুদ্ধে চীনের নিষেধাজ্ঞাকে তিনি উইঘুর মুসলিমদের অধিকার নিয়ে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে দেখছেন। ভয়েস অব আমেরিকাকে তিনি বলেন, ‘এই ইস্যুটি সবার সামনে নিয়ে আসতে আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি। আর এ কারণেই তারা (চীন) আমার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছে।’
নিষেধাজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত বুলগেরিয়ার পার্লামেন্ট সদস্য ইলহান কিউছিয়ুক জানান, চীনের ওপর ইইউর নিষেধাজ্ঞা আইন মেনেই আরোপিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বৈশ্বিক পরিমন্ডলে উভয়েই গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণে এটি একটি কৌশলগত সম্পর্ক। তবে উইঘুরসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর যা ঘটছে সে বিষয়ে আমরা নীরব থাকতে পারি না।’
আরেক পার্লামেন্ট সদস্য বুলগেরিয়ার মিরিয়াম লেক্সম্যান জানিয়েছেন, বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদনগুলো থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গিয়েছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ১৯৪৯ জেনোসাইড কনভেনশন অনুযায়ী গণহত্যা পরিচালনার সবগুলো মানদন্ডই স্পর্শ করেছে। তিনি আরো বলেন, চীন যদি এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখে তাহলে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে রাখা ভালো যে আমরা আর সহযোগী হিসেবে থাকবো না বরং কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিণত হবো।
চুক্তি ভন্ডুল হবে?
সাত বছর ধরে ৩৫ দফা আলোচনার পর ইইউ-চায়না কম্প্রিহেনসিভ এগ্রিমেন্ট সম্পন্ন হয়। অথচ চুক্তিটি স্বাক্ষরের কয়েকমাসের মধ্যেই তা পার্লামেন্টের অনুমোদন পাবে কি না তা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ বছরই চুক্তিটি পর্যালোচনা ও কার্যকর হওয়ার কথা। তবে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের তিনটি প্রধান রাজনৈতিক পক্ষই জানিয়েছে নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকলে চুক্তিটির অনুমোদন নাও মিলতে পারে।
পার্লামেন্ট সদস্য ক্যাথলিন ভ্যান ব্রেম্পট বলেন, ‘বিনিয়োগ চুক্তি নিয়ে চীন সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার পূর্ব শর্ত হচ্ছে পার্লামেন্ট সদস্যদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার।’
এ প্রসঙ্গে উইঘুর ইস্যুতে ইইউর সবচেয়ে সক্রিয় মানবাধিকার কর্মী গ্লাকসম্যান বলেন, চীনকে এখন মূল্য চুকাতে হবে। আমরা পরিষ্কারভাবে জানাচ্ছি , নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকলে চীন-ইউরোপ বিনিয়োগ চুক্তি কার্যকরের পক্ষে ভোট দেবো না।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির চীন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ইয়েক ফ্রেইম্যান সম্প্রতি জানিয়েছেন, অর্থনীতির চেয়ে এটি অনেক বেশি রাজনৈতিক বিষয়। চীন ও ইউরোপ এখনো বাণিজ্য নিয়ে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। আর এই সম্পর্ক রাতারাতি পাল্টে যাবে না।
‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড: চায়নিজ পাওয়ার মিটস দ্য ওয়ার্ল্ড’ বইটির লেখক ফ্রেইম্যান আরো বলেন, ইউরোপে এখনো কিছু শক্তিশালী দল রয়েছে যারা চীনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। তবে মানবাধিকার ইস্যু উভয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারিত হতে দিবে না।
সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.