গাজায় ৪৪ হাজার শিশুর জন্য জাতিসংঘ ও ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মসূচি

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় গাজায় ৪৪ হাজার শিশুর জন্য একটি সমন্বিত স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছে জাতিসংঘ। দুই বছরের সংঘাতে জীবনরক্ষাকারী জরুরি পরিষেবা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া শিশুদের টিকাদান, পুষ্টি সরবরাহ এবং তাদের শারীরিক বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে এ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বুধবার প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফ, ইউএনআরডব্লিউএ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং তাদের অংশীদারদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তিন ধাপে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। এর আওতায় শিশুদের পেন্টাভ্যালেন্ট, পোলিও, রোটাভাইরাস, নিউমোকোকাল কনজুগেট টিকার তিনটি ডোজ এবং হাম, মাম্পস ও রুবেলার দুটি ডোজ দেওয়া হবে। কর্মসূচির প্রথম ধাপ ৯ নভেম্বর থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, সংঘাতের কারণে তিন বছরের কম বয়সী ‘প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন’ হয় কোনো টিকাই পায়নি অথবা তাদের নিয়মিত টিকাদান ব্যাহত হয়েছে, যা বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়িয়েছে। এই কর্মসূচির লক্ষ্য হলো শিশুদের হাম, মাম্পস, রুবেলা, ডিপথেরিয়া, টিটেনাস, হুপিং কাশি, হেপাটাইটিস বি, যক্ষ্মা, পোলিও, রোটাভাইরাস ও নিউমোনিয়া থেকে রক্ষাকারী টিকা দেওয়া।

সংস্থাগুলো জানায়, সংঘাতের কারণে শিশুদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির ওপর যে ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে, তা মোকাবিলায় ইউনিসেফ এবং তার অংশীদাররা শিশুদের অপুষ্টি পরীক্ষা করবে। অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের চিকিৎসা ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। মাঝারি ও তীব্র অপুষ্টিজনিত জটিলতায় আক্রান্ত শিশুদের ডব্লিউএইচও-সমর্থিত স্থিতিশীলকরণ কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা দেওয়া হবে।

ফিলিস্তিনে ইউনিসেফের বিশেষ প্রতিনিধি জনাথন ভিচ বলেন, ‘গাজা উপত্যকায় দুই বছরের নিরলস সহিংসতায় ২০ হাজারেরও বেশি শিশুর জীবনহানির পর, আমরা অবশেষে বেঁচে যাওয়া শিশুদের রক্ষা করার একটি সুযোগ পেয়েছি। প্রতিটি শিশুকে টিকা দেওয়া এবং তাদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির জোগান দেওয়া শুধু একটি মানবিক উদ্যোগ নয়; এটি একটি নৈতিক দায়িত্ব।’

বিবৃতি অনুসারে, ইউনিসেফ ইতোমধ্যে গাজায় প্রয়োজনীয় সব টিকা, সিরিঞ্জ, শীতলীকরণ সরঞ্জাম এবং পুষ্টিসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে। ১৪৯টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ১০টি ভ্রাম্যমাণ গাড়ির মাধ্যমে টিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এর জন্য ৪৫০ জনেরও বেশি স্বাস্থ্যকর্মী ও সহায়ক কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ডব্লিউএইচওর প্রতিনিধি রিচার্ড পিপারকর্ন বলেন, ‘এই টিকাদান কর্মসূচি একটি জীবনরেখা, যা শিশুদের স্বাস্থ্য রক্ষা করবে এবং ভবিষ্যতের জন্য আশা জাগিয়ে তুলবে।’

সংস্থাগুলো জোর দিয়ে বলেছে, এই কর্মসূচির সাফল্য নির্ভর করছে যুদ্ধবিরতির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের ওপর, যা টিকাদান ও পুষ্টি পরিষেবা দেওয়ার জন্য নিরাপদ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করবে। তারা সতর্ক করে জানায়, আসন্ন তীব্র শীত এই কর্মসূচিকে আরও জরুরি করে তুলেছে, কারণ গাজা উপত্যকায় শিশুদের মধ্যে প্রাণঘাতী কিন্তু প্রতিরোধযোগ্য রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।

কর্মসূচির দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপ যথাক্রমে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর এবং ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। এই ধাপগুলোতে শিশুদের টিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজ দেওয়া হবে।

সংঘাতের আগে গাজায় ৫৪টি টিকাদান কেন্দ্র ছিল এবং শিশুদের ৯৮ শতাংশ টিকাদানের হার নিয়ে এটি বিশ্বব্যাপী শীর্ষস্থানীয় অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল। কিন্তু বর্তমানে নির্বিচার হামলায় ৩১টি কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় সেগুলো অকার্যকর হয়ে পড়েছে এবং নিয়মিত টিকাদানের হার ৭০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।