আপনি পড়ছেন

ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে মেকং নদীতে চীনের নির্মিত জলবিদ্যুৎ বাঁধ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার লাখো মানুষের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে ফেলেছে। ব্যাপকহারে বাঁধ নির্মাণের কারণে নদীতে নাব্য সংকট তৈরি করছে। এর ফলে যেমন পানিপ্রবাহ কমে যাচ্ছে, তেমনি উর্বরতা হারাচ্ছে চাষাবাদের জমি। সেইসঙ্গে কমে যাচ্ছে মৎস্যসম্পদ। বার্লিন-ভিত্তিক ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

mekong river chinese dams threating lifeমেকংয়ে চীনা বাঁধ, হুমকিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার লাখো মানুষ

মেকং নদী হিমালয় থেকে চীনের ইউনান প্রদেশ, তারপর মিয়ানমার, লাওস, থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ায় ৫ হাজার কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে ভিয়েতনামের মেকং ডেল্টা দিয়ে সমুদ্রে গিয়ে মিলেছে। গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মেকং নদীর চারপাশে চীনের জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণ করায় তা মৎস্যভান্ডার এবং কৃষিকাজের ব্যাপক ক্ষতি করছে।

ডয়চে ভেলের সাংবাদিকরা মেকং নদীর পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মৎস্যজীবী ও কৃষকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ‘দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে চীনের তৈরি জলবিদ্যুৎ বাঁধগুলোর কারণে মাছের মজুদ কমে যাচ্ছে এবং জমি উর্বরতা হারাচ্ছে। এর ফলে মেকং নদীর ওপর নির্ভরশীলদের জীবন এখন মারাত্মক হুমকির মুখে। আরো অনেক বাঁধ নির্মাণাধীন রয়েছে, ফলে এ অঞ্চলের ভবিষ্যত এখন ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে।’

২০১৯ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে কম্বোডিয়ার টিভি স্টেশন নমপেন পোস্টেরও একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে মেকং নদীর নিন্মভূমিতে খরা জেঁকে বসেছে। এটি ছিল ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরা। আর প্রথমবারের মতো মেকং নদীর কম্বোডিয়া অংশের তলদেশ পুরোপুরি শুকিয়ে গেছে। অথচ এ সময়টা ভরা বর্ষার মৌসুম এবং মেকং নদী কানায় কানায় পূর্ণ ও মাছে ভরপুর থাকার কথা। ফলে এখানে মাছ ধরা ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কমে গেছে।

mekong river chinese dams threating life innerমেকংয়ে চীনা বাঁধ, হুমকিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার লাখো মানুষ

কম্বোডিয়ার একজন জেলে বলেন, পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকা এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি ৩০-৪০ কেজি করে মাছ ধরতাম, কিন্তু এখন আর তা হচ্ছে না। এমনকি যা পাচ্ছি তা দিয়ে নিজের পরিবারেরই খাওয়া হয় না।’

চীনের তৈরি এসব বাঁধের কারণে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড এবং লাওসের হাজার হাজার কোটি ডলার ক্ষতি হচ্ছে বলে ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

মেকং নদী সাধারণত বর্ষার মৌসুমে ফুলে-ফেঁপে উঠে এবং টোনেল স্যাপ রিভারের সঙ্গে মিলিত হয়। এর ফলে টোনেল স্যাপ হ্রদে ব্যাপক জলপ্রবাহ সৃষ্টি হয় এবং প্রচুর মাছ এসে জমা হয় এখানে। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই বৃহত্তম হ্রদটিতে পানি প্রবাহ আসতে দেরি হয়, মূলত খরা ও মেকংয়ে তৈরি বাঁধের কারণেই এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

চীনের তৈরি ১১টি বাঁধ নিন্মভূমির দেশগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে কিনা তা রীতিমতো একটি ভূ-রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইজ অন আর্থের প্রেসিডেন্ট ও আবহাওয়াবিদ অ্যালান বাসিস্ট এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘চীন যদি দাবি করে তারা এই খরার জন্য দায়ী নয়, তাহলে কিন্তু তথ্য-উপাত্তগুলো তাদের পক্ষে কথা বলবে না।’

তিনি আরো জানান, চীনের মেকং নদীর অববাহিকার উপরের অংশ কিন্তু ২০১৯ সালের খরায় পরেনি। বরং এখানে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও পানি ছিল। বিশাল বিশাল বাঁধের সাহায্যে চীন এই পানির একটি বড় অংশ ধরে রেখেছিল। চীন যদি মেকংয়ের পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ না করতো, তাহলে ২০১৯ সালে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ায় পানির স্তর ৪ মিটার উঁচুতে থাকতো। আর সেটা হলে নিম্নভূমির মানুষরা খরায় ভুগতো না। সূত্র: এএনআই

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.