স্বৈরশাসক সিসির সাথে কেন হাত মেলাচ্ছেন এরদোয়ান

প্রায় ৮ বছর পরে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইঙ্গিত দিয়েছে মিসর ও তুরস্ক। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের ক্ষমতাসীন দল একে পার্টি মিসরের সাথে বন্ধুত্বের জন্য সংসদীয় দল ও শান্তির দূতাবাস গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে।

স্বৈরশাসক সিসির সাথে কেন হাত মেলাচ্ছেন এরদোয়ান

বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, ২০১৩ সালে মিসরের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই দেশটির সঙ্গে তুরস্ক সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। সে সময় মুরসিকে ক্ষমতায় পুনর্বহালের দাবিতে অবস্থান নিয়ে টানা বিক্ষোভরত ব্রাদারহুডের নেতা-কর্মীদের উচ্ছেদে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল।

এ ঘটনায় দুই দেশের সম্পর্ক এমন তিক্ত পর্যায়ে পৌঁছে যে, কায়রো ও আঙ্কারা উভয়ই তাদের রাষ্ট্রদূতদের নিজ দেশে ফিরিয়ে আনে। এরপর দীর্ঘদিনেও সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়নি বরং লিবীয় যুদ্ধ, পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয়সহ আঞ্চলিক বিরোধ-সংঘাতে মিসর ও তুরস্ক পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়ে আসছে।

তবে গত মাসে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ে কর্মকর্তারা সম্পর্ক স্বাভাকি করতে বৈঠক করেন। এরপর থেকে প্রশ্ন উঠেছে, মিসর হঠাৎ কেন তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাচ্ছে? তুরস্কই বা কেন সামরিক স্বৈরশাসক আল-সিসির সঙ্গে হাত মেলাতে চাচ্ছে?

বিশ্লেষকরা বলছেন, কায়রো মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক রাজনীতির ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত মিসরকে তাদের প্রয়োজনে কাজে লাগালেও কায়রোর দরকারি মুহূর্তে পাশে থাকে না। কাতার অবরোধ ইস্যুতে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার পরই মিসর ইউটার্ন নেয়। এরই মধ্যে ভূমধ্যসাগরের বিরোধ নিয়ে তুরস্ক গোপন যোগাযোগে মিসরের স্বার্থকে বোঝাতে সক্ষম হয়। এরই ফলে দীর্ঘদিন পর দুই দেশের সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে। মধ্যপ্রাচ্যের দুই মুসলিম দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক এ অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থায়ী শান্তির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাস্তববাদী এরদোয়ানের চেয়ে এটি আর কে ভালো বুঝবে? এজন্যই হয়তো তিনি স্বৈরশাসক সিসির সাথে হাত মেলাতেও দ্বিধা করছেন না। সত্যিই এ সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত হলে আঞ্চলিক রাজনীতির প্রেক্ষাপট বদলে যাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

স্বৈরশাসক সিসির সাথে কেন হাত মেলাচ্ছেন এরদোয়ান

একে পার্টির সংসদীয় নেতা বুলেন্ট তুরান রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আলাদুলু এজেন্সিকে বলেন, ‘গণপ্রজাতন্ত্র তুরস্ক ও মিসরের এমপিদের মধ্যে যোগাযোগে একটি বন্ধুত্বমূলক দল গঠনে স্পিকারের কাছে প্রস্তাব করেছি। আশা করছি, উভয় দেশের জনগণ আগের মতো পরস্পরের সুখ-দুঃখের অংশীদার হতে পারবে।’

গত সপ্তাহে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভাসোগলু আঙ্কারা ও কায়রোর সম্পর্ককে ‘নতুন যুগ’ আখ্যায়িত করে জানান, তাদের একটি কূটনৈতিক প্রতিনিধিদল আগামী মাসে মিসর সফর করবে।

ইতিমধ্যে তুরস্কের গণমাধ্যমগুলো মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সমালোচনা বন্ধ করে দিয়েছে, আগে হরহামেশায় যেটি করা হতো। প্রয়াত প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসির অন্যতম সমালোচক ইস্তাম্বুলভিত্তিক গণমাধ্যমকর্মী মোতাজ মাতার বলেছেন, চলতি মাস থেকে তিনি ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি’ নিলেন।